ছবি: সংগৃহীত
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লাহকে গালি দিয়ে করা পোস্টের ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও একাদশ জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য রুমিন ফারহানা। তার ওই পোস্টের পর দেশব্যাপী সমালোচনার জন্ম দিলে, এক টিভি টকশোতে এই ব্যাখ্যা দেন তিনি।
টকশোতে অংশ নিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, তার ‘ফকিন্নির বাচ্চা’ মন্তব্য সরাসরি কোনো ব্যক্তির আর্থিক অবস্থার প্রতি ইঙ্গিত নয়। বরং এটি একটি মানসিকতা বা চিন্তাভাবনার প্রতিফলন। তার ভাষায়, ফকিন্নির বাচ্চা ব্যাপারটা একটা মাইন্ডসেট। এর মানে এই নয় যে কেউ গরিব। মানে হলো, চিন্তাধারায় একধরনের নীচু মানসিকতা কাজ করে।
তিনি অভিযোগ করেন, এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব হুমায়রা নূর ও হাসনাত আবদুল্লাহর মতো নেতারা যে ভাষায় রাজনীতি করছেন, সেটি খুবই নিম্নমানের। রুমিন বলেন, তাদের কথাবার্তা স্লাম এলাকায় ব্যবহৃত ভাষার মতো। কেউ এদের ফকিন্নি বলে, কেউ বস্তির ভাষা বলে, কেউ কাচড়া বলে—সেটা তাদের আচরণ থেকেই বোঝা যায়।
এ নিয়ে তিনি আরও বলেন, ওরা যে ভাষায় স্লোগান দেয়, প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে বা ফ্রেম করে, সেটা বস্তির ভাষার সঙ্গে মিলে যায়। আমি যখন বলি ‘ফকিন্নির বাচ্চা’, তখন তার নিচে শেয়ার করা ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যাবে, কে কাকে ইঙ্গিত করছে। আমার আওয়ামী লীগের সম্পাদক হওয়া নিয়ে ওরা যে ভাষায় কথা বলেছে, তার প্রেক্ষিতে আমি প্রতিক্রিয়া দিয়েছি।
এর আগে, হাসনাত আবদুল্লাহ এক বক্তব্যে রুমিন ফারহানাকে ‘বিএনপির আওয়ামী লীগবিষয়ক সম্পাদক’ বলে আখ্যায়িত করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় রুমিন ফারহানা নিজের ফেসবুক পোস্টে হাসনাতকে কটাক্ষ করেন এবং অতীতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকার ছবি যুক্ত করে প্রশ্ন তোলেন তার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে।
যদিও খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, রুমিন ফারহানা শেয়ার করা ছাত্রলীগের সেই প্যাডটিই ভুয়া। এর আগে এনসিপি উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমকে নিয়েও এরকম ছাত্রলীগের ভুয়া প্যাড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছিল। শুধু তাই নয়, অনেকেই মজাচ্ছলে ছাত্রলীগের এই একই প্যাডটিতে ফুটবলার লিওনেল মেসির নাম যুক্ত করেও ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, ২০২২ সালে ছাত্রলীগের কমিটিতে হাসনাতের পোস্টের সেই ভুয়া প্যাড এবার শেয়ার করলেন রুমিন ফারহানা।
বিএনপির এই রাজনীতিকের দেওয়া পোস্টটি ঘিরে নেট দুনিয়ায় বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই রুমিন ফারহানার পোস্টকে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত মনে করছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মীর জাহান। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়কার হাসনাত আব্দুল্লাহর একটি ছবি পোস্ট করে তিনি ক্যাপশনে লিখেন, ‘হাসনাতরা ছাত্রলীগ ছিল—এই বুলি এখন ঝাড়া সহজ। কিন্তু জুলাইতে যখন ঠিক সেই হাসনাতরাই হাসিনার সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল, তখন তোমাদের কি মনে ছিল না তারা ছাত্রলীগ? তখন তো লেজ গুটিয়ে তাদের পেছনেই দাঁড়িয়েছিলে! মিছিলের সম্মুখ সারিতে তো হাসনাতরাই ছিল।’
তিনি আরও লিখেন, ‘তখন মুখ খুলে বলতে পারোনি—না, এরা তো ছাত্রলীগ, এদের নেতৃত্বে আমরা আন্দোলন করবো না। কেন বলোনি? কারণ তোমাদের সেই হ্যাডমই ছিল না! নিজেদের ফাঁপা নেতৃত্ব নিয়ে তোমরা তো নড়তেও পারোনি। হাসনাতদের জোরেই তোমাদের ভাঙা রাজনৈতিক দেহে সামান্য প্রাণ এসেছিল।’
পরের অংশে মীর জাহান লিখেন, ‘আজ মুখে ফেনা তুলে অতীতের বুলি আওড়ানো বন্ধ করো। হাসনাতদের ছায়ায় লুকিয়ে যুদ্ধ করেছিলে, আর এখন তাদের অতীত নিয়ে নাটক সাজাও? লজ্জা লাগা উচিত!’
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন অ্যাক্টিভিস্ট রুমিনের বক্তব্য শেয়ার করে নানা মন্তব্য করেছেন। ব্যবহার করেছেন কটূবাক্য। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানার দেওয়া সেই পোস্ট শেয়ার করেছেন আওয়ামী অ্যাক্টিভিস্ট মেহের আফরোজ শাওন। ক্যাপশনে তিনি লিখেন, ‘অনেক কথা যাও যে বলে কোনো কথা না বলি।’ এরপর হ্যাশট্যাগে লিখেন, ‘বান্দির বাচ্চা’।
রুমিন ফারহানার একই পোস্ট শেয়ার করেছেন আরেক আওয়ামী অ্যাক্টিভিস্ট নিঝুম মজুমদার। তিনি শেয়ার করা পোস্টের ক্যাপশনে লিখেন, ‘আমি নাম দিয়েছিলাম টোকাই। কয়েকদিন আগে হাবাদুল্লাহ বলেছিল, তাকে নাকি বান্দির পুত নামে ডাকা হচ্ছে। আজকে রুমিন আপা বললেন ফকিন্নির বাচ্চা। কোন নামটা বেশি মানিয়েছে বন্ধুরা?’
এদিকে সামাজিকমাধ্যমে রুমিন ফারহানার কটাক্ষমূলক বক্তব্য, ছবি রাজনৈতিক পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হয়েছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যমে ৫ আগস্ট পরবর্তী রুমিন ফারহানার এমন আরও অনেক শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাম্প্রতিক এক টকশোতে হাসনাতকে উদ্দেশ্য করে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘ঠিক আওয়ামী লীগ যে ভাষায় কথা বলত, আজকে আমি একটা ডাকাতের মতো চেহারার ছেলেকে দেখলাম একই ভাষায় কথা বলতে।’
যদিও এসব বিষয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে এর আগের এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘নারীর রাজনৈতিক অবস্থান যাই হোক না কেন, সে বিএনপির হোক, এনসিপির হোক, বামপন্থী হোক, ডানপন্থী হোক কিংবা দলবিহীন, তার শরীর, সম্পর্ক, পোশাক বা ব্যক্তিগত জীবন টেনে এনে স্লাটশেমিং করার অধিকার কেউ পায় না।’
তিনি আরও লিখেন, ‘এটা রাজনীতি নয়, এটা পুরুষতান্ত্রিক ঘৃণার সবচেয়ে নোংরা প্রকাশ। ভয়ঙ্কর বিষয় হলো, এই ঘৃণার চর্চা অনেক সময় আসে প্রগতিশীলতার মুখোশ পরা লোকদের হাত থেকেই, যারা একদিকে নারীর অধিকারের কথা বলে, আর অন্যদিকে কোনো নারী তাদের রাজনৈতিক মতের বাইরে গেলেই তার চরিত্রে আঘাত হানে। রুমিন ফারহানা, তাসনিম জারা, সামান্থা, উমামা, তাজনুভা কিংবা মানসুরা-তারা কেউ এই ঘৃণ্য ট্র্যাডিশনের বাইরে নন।’
হাসনাত লিখেন, ‘কোনো দল বা মতের পক্ষে থাকলে স্লাটশেমিংকে হালকা করে দেখা, আর বিপক্ষে থাকলে উৎসাহ দেওয়া—এই দ্বিচারিতা আমাদের রাজনীতিকে শুধু কুরুচিপূর্ণ করে না, নারীবিদ্বেষকে স্বাভাবিক করে তোলে।’
হাসনাত আব্দুল্লাহর মতে, এই ঘৃণার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া কোনো ‘নরমালাইজড রেসপন্স’ নয়, এটা জরুরি রাজনৈতিক লড়াই। দল, মত, পরিচয় যাই থাকুক না কেন, এই লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। আমি নিজে শ্রেণীঘৃণার শিকার হলেও, রুমিন ফারহানাসহ যেকোনো নারীর প্রতি স্লাটশেমিংয়ের বিরুদ্ধে আমার স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করছি।’
উল্লেখ্য, রুমিন ফারহানা সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি ভাষাসৈনিক ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অলি আহাদের মেয়ে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh