ছবি:সংগৃহীত।
জুলাই হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য দিয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। আগামীকাল বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) শুরু হবে তার জেরা।
জবানবন্দিতে সাবেক এই পুলিশপ্রধান বলেন, র্যাব কর্তৃক কাউকে আটক, অপহরণ কিংবা হত্যার নির্দেশ সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে আসত। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকীর মাধ্যমে এসব নির্দেশনা র্যাবের কাছে পৌঁছাত। র্যাব কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন ও মহিউদ্দিন ফারুকি এ ধরনের কাজে বিশেষভাবে পারদর্শী ছিলেন।
তিনি আরও জানান, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের রাতে তৎকালীন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী কর্মকর্তাদের ৫০ শতাংশ ভোট আগেভাগে ব্যালট বাক্সে ভরে রাখার নির্দেশ দেন। যেসব কর্মকর্তা এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তাদের রাষ্ট্রীয় পদক বিপিএম ও পিপিএম দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়।
২০১৪ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে পুলিশের ভেতরে রাজনৈতিক মেরুকরণ চরম আকার ধারণ করে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিশেষ করে গোপালগঞ্জ বেল্টের কর্মকর্তারা শক্তিশালী হয়ে ওঠেন এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে শুরু করেন। এতে সিনিয়র কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি ২০২৩ সালে তার অবসর নির্ধারিত থাকলেও গ্রুপিং এড়াতে সরকার তার মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়।
জবানবন্দিতে সাবেক আইজি বলেন, ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় কোর কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হতো। এসব বৈঠকে স্বরাষ্ট্রসচিব, অতিরিক্ত সচিব, এনটিএমসির মহাপরিচালক, ডিবি ও র্যাবপ্রধান, ডিএমপি কমিশনার, এসবি প্রধান, বিজিবি ও আনসার মহাপরিচালকসহ গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকতেন।
বৈঠকগুলোতে আন্দোলন দমন থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। এক বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটক করার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। আটক ব্যক্তিদের হেফাজতে নিয়ে মানসিক চাপ প্রয়োগ, পরিবারের সদস্যদের হাজির করা এবং অবশেষে টেলিভিশনে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হয়।
সাবেক আইজি দাবি করেন, তিনি আটকের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে তা কার্যকর করা হয়। তিনি আরও জানান, মন্ত্রী ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদকে জ্বিন নামে ডাকতেন এবং সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তাকে অত্যন্ত কার্যকর মনে করতেন।
ছাত্র–জনতার আন্দোলন দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ এবং মৃত্যুর ঘটনায় অনুশোচনা প্রকাশ করে সাবেক আইজি বলেন, আমি লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমা প্রার্থী।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh