ঢাকার ব্যস্ত সড়কগুলোতে ফুটপাত আছে, কিন্তু পথচারীর হাঁটার সুযোগ নেই। দোকানপাট, স্থাপনা আর নানান দখলে নগরের সবচেয়ে জরুরি এই অবকাঠামো পরিণত হয়েছে অচল জায়গায়।
মাঠপর্যায়ে যা দেখা গেল
বায়তুল মোকাররম, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, নিউমার্কেট, মিরপুর কিংবা সায়েন্স ল্যাব সব জায়গাতেই এক চিত্র। পলিথিনের ছাউনি টাঙিয়ে দোকান সাজানো, মাঝের সরু জায়গা দিয়ে কোনোভাবে হেঁটে চলা। অনেক পথচারীকে বাধ্য হয়ে মূল সড়কে নামতে দেখা যায়, যা যানজট ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।
শুধু বায়তুল মোকাররম মসজিদের মূল গেটের সামনেই দেখা গেছে ২০০-এর বেশি অস্থায়ী দোকান। পাঁচ ফুটের ফুটপাতের দুই পাশে দোকান বসিয়ে মাঝখানে রাখা হয়েছে মাত্র দেড় ফুট ফাঁকা জায়গা।
উত্তর-দক্ষিণের একই অবস্থা
মিরপুর-১০ থেকে ১৪ নম্বর পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে ফুটপাত সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ। হকাররা বলছেন, আমরা চাই বিকল্প ব্যবস্থা। না থাকায় বাধ্য হয়েই ফুটপাতে বসতে হয়।
মহাখালী তিতুমীর কলেজের সামনের পুরো ফুটপাত দখল করে রেখেছে ওভারব্রিজের সিঁড়ি ও খুঁটি। কলাবাগান শিশু পার্কের সামনে ময়লার ভ্যান, ডিএনসিসির বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র এবং বিভিন্ন আবর্জনার স্তূপে পথচারীর হাঁটার পরিবেশই নেই।
পরিসংখ্যানের ভয়াবহ চিত্র
ডিএনসিসি জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত ২৩৬টি উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। ২১৭০টি অস্থায়ী ও ৫২টি স্থায়ী স্থাপনা সরানো হলেও বেশির ভাগ ফুটপাত আবারও দখল হয়ে গেছে।
অন্যদিকে, ডিএনসিসি এলাকায় গত এক বছরে ৭০টি অভিযানে আদায় হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা জরিমানা। বিশেষজ্ঞদের মতে, গুলিস্তানের ফুটপাতের ৯৫ শতাংশই এখন হকারদের দখলে।
চাঁদা ব্যবসা
কোটি টাকার লেনদেন গুলিস্তান ও আশপাশের ফুটপাত দখলকারীরা প্রতিদিন গড়ে জনপ্রতি ১০০ থেকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা দেন।
মাস শেষে হিসাব দাঁড়ায় প্রায় এক কোটি টাকা।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানায়, দখলকারীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এই চাঁদা উত্তোলন করেন।
গবেষণা বলছে, দুই সিটি মিলিয়ে বছরে প্রায় ২১৬০ কোটি টাকা তোলা হয় হকারদের কাছ থেকে।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, আমরা বারবার উচ্ছেদ করি, কিন্তু তা স্থায়ী হয় না। রাজনৈতিক ও স্থানীয় সহযোগিতা ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়।
দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, গুলিস্তানে দিনে একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান চালালেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হকাররা ফের বসে যায়। অভিযানের খবর আগেভাগেই পেয়ে যায় তারা।