ছবি:সংগৃহীত।
অভিনব দৃষ্টিভঙ্গি। নেতৃত্বের দৃঢ়তা আর অদম্য মনোবলের প্রতিচ্ছবি সৈয়দা আলভী খোরশেদ (নিতুল)। প্রতিযোগিতার মাঠে কিংবা সংগঠনের দায়িত্বশীলতায়। সব জায়গাতেই তিনি আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতার উজ্জ্বল প্রতীক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ৪৯তম আবর্তনের শিক্ষার্থী তিনি। বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলের আবাসিক এবং নড়াইল জেলার কৃতি সন্তান নিতুল এবার জাকসু নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার সহজ-সরল হাসি তাকে আলাদা করে চেনায়।
খেলার মাঠে দারুণ সাফল্য আর একাডেমিক অঙ্গনে উজ্জ্বল কৃতিত্ব। দুই দিকেই সমান পারদর্শী সৈয়দা আলভী খোরশেদ (নিতুল)। বিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস ক্লাবের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে নেতৃত্বে যেমন উজ্জ্বল। তেমনি খেলোয়াড় হিসেবেও অসাধারণ। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বৃত্তি। টানা চারবার বিশ্ববিদ্যালয় টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়ন। দু’বার আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফাইনাল। নবম বাংলাদেশ গেমসে নড়াইলের প্রতিনিধি। সব মিলিয়ে তিনি যেন এক আলোকিত নাম। শুধু খেলাধুলাই নয়। একাডেমিক অঙ্গনেও তিনি নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন। টানা চার বছরের বৃত্তি ও শেষ বর্ষে সিজিপিএ ৪.০০ তাঁর একাডেমিক পথচলার শ্রেষ্ঠ সাফল্য।
খেলাধুলায় হাতেখড়ি তার নড়াইল টেবিল টেনিস একাডেমিতে। পরিবারের ক্রীড়া-ঐতিহ্যই তাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। বাবা সৈয়দ খোরশেদ তৌহিদ কোহেল ছিলেন জাতীয় পর্যায়ের টেবিল টেনিস ও ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় এবং নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার দীর্ঘদিনের দায়িত্বশীল। অপরদিকে, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় ও জাতীয় চ্যাম্পিয়ন খন্দকার মোস্তফা বিল্লাহ ছিলেন তার বড় অনুপ্রেরণা। ভর্তি হওয়ার সময় বাবা ও মোস্তফা চাচ্চুর কথাই আজও তাকে অনুপ্রেরণা দেয়—“তোমাকে জাহাঙ্গীরনগরের চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেখাতে হবে।” আর সেই চ্যালেঞ্জকেই সাফল্যে রূপ দিয়েছেন তিনি।
জাকসু নির্বাচনে সহ-ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেলে নিতুল নারী শিক্ষার্থীদের খেলাধুলায় সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে চান। তিনি আলাদা ব্যায়ামাগার। নিরাপদ অবকাঠামো এবং নিয়মিত ক্রীড়া সূচি প্রবর্তনের পরিকল্পনা করেছেন। নিতুল বিশ্বাস করেন, এতে জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলার বাস্তব চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে নিতুল বলেন, “অবকাঠামো, রক্ষণাবেক্ষণ আর সুষ্ঠু ক্রীড়া ক্যালেন্ডারের অভাবই সবচেয়ে বড় সমস্যা।” একজন খেলোয়াড় হিসেবে নিজেও এসব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। তাই সমাধানকে প্রাধান্য দেওয়া তার অন্যতম লক্ষ্য।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও তার দৃষ্টি স্পষ্ট। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতার অভিজ্ঞতা তাকে দিয়েছে প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা। আর টানা সাফল্য শিখিয়েছে নিয়মিত সেরাটা দেওয়ার পাঠ। তিনি চান এসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ আরও সুদৃঢ় করতে।
একাডেমিক চাপ ও পরীক্ষার সময়সূচিকে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলায় অনাগ্রহের বড় কারণ মনে করেন নিতুল। তাই তিনি চান খেলাধুলাকে শিক্ষার অন্তরায় নয়। বরং সহায়ক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। তার মতে, মনোযোগী হওয়াটাই আসল। যখন পরীক্ষা তখন পড়াশোনা। আর খেলাধুলার সময় পুরো মনোযোগ অনুশীলনে। এভাবেই তিনি একাডেমিক, ক্রীড়া ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সমান্তরাল সাফল্য ধরে রেখেছেন।
সবশেষে নিতুলের দৃঢ় বিশ্বাস। খেলাধুলা শুধু শারীরিক সক্ষমতাই বাড়ায় না। বরং মানসিক দৃঢ়তা ও নেতৃত্বের গুণাবলি গড়ে তোলে। সহ-ক্রীড়া সম্পাদক নির্বাচিত হলে সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করাই হবে তার প্রধান অঙ্গীকার। মাঠের ভেতরে কিংবা বাইরে। দুই জায়গাতেই কৃতিত্বের ছাপ রেখে চলা এই সব্যসাচী মেয়ে প্রতিনিয়ত নিজেকে সাফল্যের নতুন শিখরে নিয়ে যাচ্ছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh