× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

জলবায়ু পরিকল্পনার কেন্দ্রে শিশু-তরুণরা, বিশ্বে প্রথম বাংলাদেশ

ডেস্ক রিপোর্ট।

০১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:৩১ পিএম

ছবি: সংগৃহীত।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি এনডিসি ৩.০ প্রণয়নে এক অনন্য নজির গড়েছে বাংলাদেশ। এই প্রথম কোনো দেশ তার জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনার কেন্দ্রে শিশু ও তরুণদের অধিকার, সুরক্ষা ও অংশগ্রহণকে কৌশলগতভাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

কার্বন নিঃসরণ কমানো বা অভিযোজন কৌশলের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি, পুষ্টি, শিশু সুরক্ষা থেকে শুরু করে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস পর্যন্ত সামাজিক খাতগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশ দেখাল যে জলবায়ু কার্যক্রম শুধু পরিবেশ নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা ও ন্যায্যতাকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।

বুধবার (১ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ।

এতে বলা হয়েছে, এনডিসি ৩.০ প্রণয়নের নেতৃত্ব দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। পুরো প্রক্রিয়ায় কারিগরি সহায়তা দিয়েছে ইউনিসেফ।

সংস্থাটির প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক। প্রথমবারের মতো শিশু ও তরুণদের বিষয়টি শুধু স্বীকার করা হয়নি, বরং দেশের জলবায়ু রোডম্যাপ নির্ধারণে তাদের মতামত ও অগ্রাধিকারকে সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তাদের জীবন-অভিজ্ঞতাকে জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রে আনা হয়েছে। এনডিসি ৩.০ অনুপ্রেরণাদায়ক, কারণ এখানে শিশুদের জরুরি প্রয়োজনগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, কারণ তরুণেরা যেন অন্যদের সঙ্গে মিলে সমাধান বের করতে পারে, তার জন্য যথাযথ প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই উদ্যোগের অংশীদার হতে পেরে ইউনিসেফ খুবই গর্বিত। যথাযথ বাস্তবায়নে সহায়তা করতে আমরা গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আসল কাজ এখন শুরু হচ্ছে, এই শক্তিশালী দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবে রূপ দেওয়া এবং বাংলাদেশকে আরও নিরাপদ ও জলবায়ু-সহনশীল একটি দেশ বানানো, যেখানে প্রতিটি শিশু বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে।

এই প্রসঙ্গে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, এনডিসি ৩.০ কেবল নিঃসরণ কমানোর একটি পরিকল্পনা নয় বরং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সংগত ভবিষ্যৎ নির্মাণের অঙ্গীকার। নারী, শিশু, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, জাতিগত সংখ্যালঘু ও জলবায়ু অভিবাসীদের অংশগ্রহণকে এখানে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, জলবায়ু কার্যক্রমকে অধিকারভিত্তিক করা জরুরি, যাতে কেউ পিছিয়ে না থাকে।

ইউনিসেফ বাংলাদেশ জানিয়েছে, নতুন পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ), শিক্ষা, শিশু সুরক্ষা, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলাকে জলবায়ু কার্যক্রমের কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিশু ও তরুণদের ওপর যে অসম ও মারাত্মক প্রভাব পড়ছে, তা মোকাবিলায় বিশেষ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্কুল চালু রাখা, স্বাস্থ্যসেবা সচল রাখা এবং নিরাপদ পানির সুযোগ নিশ্চিত করা– যাতে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা বৃদ্ধি কিংবা তাপপ্রবাহের মতো জলবায়ুজনিত দুর্যোগেও মৌলিক সেবাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

আরও জানানো হয়েছে, বিশ্বে প্রথমবারের মতো তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এনডিসি কাঠামোর মনিটরিং, রিপোর্টিং ও ভেরিফিকেশন (এমআরভি) প্রক্রিয়ায়। শুধু পরিকল্পনা নয়, বাস্তবায়ন ও তদারকির ক্ষেত্রেও তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। একই সঙ্গে শিশু-সংবেদনশীল সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং অভিযোগ–প্রতিকার প্রক্রিয়া (গ্রিভেন্স অ্যান্ড রেডরেস মেকানিজম) চালুর প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাল্যবিবাহ বা শিশুশ্রমের ঝুঁকি বাড়লে তা প্রতিরোধে এই সুরক্ষা কাঠামো জরুরি সহায়তা দেবে।

ইউনিসেফের সহযোগিতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, পরিকল্পনা প্রণয়নের পুরো প্রক্রিয়ায় ইউনিসেফ দেশব্যাপী শিশু ও তরুণদের পরামর্শ সভার আয়োজন করেছে। পাশাপাশি পরিবেশবিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে এবং আচরণগত পরিবর্তন আনতে তিনটি শিক্ষামূলক ভিডিও তৈরি করেছে, যেগুলো শৈশব থেকেই স্বাস্থ্যকর পরিবেশগত অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। এগুলোকে পাঠ্যক্রমে যুক্ত করার প্রস্তুতি চলছে।

জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ এবং প্যারিস চুক্তির বৈশ্বিক পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এনডিসি ৩.০ শিশু অধিকারকে জলবায়ু কার্যক্রমের মূলনীতি হিসেবে যুক্ত করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৩৫ সালের লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের প্রয়োজন শক্তিশালী জাতীয় নেতৃত্ব এবং দীর্ঘমেয়াদি আন্তর্জাতিক সহায়তা।

জলবায়ু অর্থায়ন, শিশু-সংবেদনশীল সমাধান প্রণয়ন এবং শিশু ও তরুণদের বাস্তবায়ন–মনিটরিং উভয় ক্ষেত্রেই সক্রিয় সম্পৃক্ততা– এসবই সাফল্যের শর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এই প্রসঙ্গে রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, কেবল একটি জলবায়ু পরিকল্পনা নয়, এনডিসি ৩.০ একটি পরিবর্তনের পরিকল্পনা। এটি আজকের শিশু ও তরুণদের সুরক্ষিত করার পাশাপাশি সবার জন্য একটি নিরাপদ, সহনশীল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।


Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.