আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর নীতিনির্ধারক পরামর্শক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল কমিটি (আইএমএফসি) তাদের সর্বশেষ বৈঠক শেষে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর বাড়তে থাকা ঝুঁকি এবং ঋণ সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
আইএমএফসি সভাপতি (সৌদি আরবের অর্থমন্ত্রী) মোহাম্মদ আলজাদান এবং আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাসহ অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে কমিটি জানিয়েছে, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি এখনো টিকে আছে, তবে চাপ বাড়ায় ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ঝুঁকি এখন ‘নিম্নমুখী’। বাণিজ্য নীতির বড় পরিবর্তন, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, জলবায়ু বিপর্যয় এবং দ্রুত প্রযুক্তিগত রূপান্তরের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি এক জটিল ও অনিশ্চিত পথের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
মূল্যস্ফীতি ও ঋণের বোঝা
কমিটি সতর্ক করেছে যে মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমলেও তা সব দেশে সমানভাবে ঘটছে না। একইসঙ্গে, অনেক দেশে ঋণের পরিমাণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে, যা বিশেষ করে নিম্নআয়ের ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য পরিস্থিতিকে আরও সংকটজনক করে তুলেছে। আইএমএফসি আস্থা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আর্থিক নীতি গ্রহণে দৃঢ় হওয়ার এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণের মাধ্যমে ঘাটতি কমাতে ও আর্থিক রিজার্ভ গড়ে তুলতে আহ্বান জানিয়েছে।
প্রযুক্তি ও স্থিতিশীলতার ভারসাম্য
স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকাকে ‘বিশ্বাসযোগ্যতা ও নীতির স্থায়িত্বের ভিত্তি’ হিসেবে স্বীকার করে আইএমএফসি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডিজিটাল অ্যাসেটসহ আর্থিক ব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি প্রযুক্তির সুফলও কাজে লাগানোর কথা বলা হয়েছে। কমিটি ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার জন্য কাঠামোগত সংস্কার অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দিয়েছে।
আইএমএফসি যুদ্ধবিধ্বস্ত, দরিদ্র এবং ক্ষুদ্র উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণ সংকটের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবং গঠনতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে এসব দেশকে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে সহায়তা করার অঙ্গীকার করেছে। কমিটি জি-২০ এর ‘কমন ফ্রেমওয়ার্ক’-এর অধীনে আরও সমন্বিত ও দ্রুত ঋণ নিরসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে বলেছে।
এছাড়াও, কমিটি আইএমএফের কোটাভিত্তিক কাঠামো বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং ১৬তম সাধারণ কোটার পর্যালোচনার অধীনে কোটার বৃদ্ধি দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে। তাদের স্পষ্ট বার্তা, পরিবর্তনশীল বিশ্বে স্থিতিশীলতার চাবিকাঠি হলো বিশ্বব্যাপী ঐক্যবদ্ধ ও সুসমন্বিত নীতি।