ছবি: সংগৃহীত।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার বহুল আলোচিত সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম মানব পাচারের মামলায় গ্রেপ্তার করেছে বনানী থানা পুলিশ।
সোমবার (১০ নভেম্বর) রাতে মানবপাচারের মামলায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সরোয়ার মামলা গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তাকে রিমান্ডের আবদনসহ আদালতে পাঠানো হবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ফকরুল ও তার সহযোগী জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বনানী থানায় মানবপাচার এবং প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেন আরইউএল ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং পার্টনার মো. রুবেল হোসেন।
ফকরুলের বিরুদ্ধে করা এজাহারে বলা হয়েছে, বাদী রুবেল হোসেন আরইউএল ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির ম্যানেজিং পার্টনার। তিনি বারিধারার হিউম্যান রিসোর্স ডেভলপমেন্ট সেন্টারের (আরএল-৪৫২) প্রোফাইটার ফখরুল ইসলাম ও তার সহযোগী জসিম উদ্দিনের সঙ্গে আনুমানিক ৫ বছর আগে ব্যাবসায়িক সুবাদে পরিচিত হন। তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ব্যাবসায়িক সম্পর্ক ছিল। ২০২৩ সালের মে মাসে ফখরুল ইসলাম ও জসিম একত্র হয়ে রুবলেকে বলেন, তাদের কাছে মালয়েশিয়ার ভালো ভালো কোম্পানির ভিসা আছে। রুবেল ওইসব ভিসায় লোক পাঠাতে আগ্রহ প্রকাশ করলে ওই বছরের ২৫ মে ফখরুল ও জসিম বনানীর মেসার্স আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল নাম অফিসে দেখা করেন।
ফখরুল ও জসিম বলেন, মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন কোম্পানি যেমন নিউ ভিশন গ্রীন ল্যান্ড, এসএনডি, প্রিমভিনান ডান কেজুরটিউরান এসইইএ এসনডি, চাই চাং ফুড ইন্ডাস্ট্রি, এসএনডি কোম্পানিতে শ্রমিকর ডিমান্ড আছে বলে জানায়। তারা শ্রমিকদের পাসপোর্ট থাকলে জমা দিতে বলে। ফখরুল ও জসিম শ্রমিক পাঠাতে পাসপোর্ট প্রতি ৫ লাখ ৫০ হাজার দিতে হবে মর্মে মৌখিক চুক্তি করে। বাদী চতুর আসামিদের কথায় সরল বিশ্বাসে চুক্তি অনুযায়ী আসামিদেরকে ২০২৩ সালের ২৭ মে বনানী থানাধীন আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল অফিসে বসে ৫৫ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় প্রেরণের জন্য কথা বলে। পাসপোর্ট সহ কর্মীপ্রতি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে নগদ তিন কোটি দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা আসামিদেরকে দিয়েছেন।
২০২৩ সালের ২৭ জুন আসামিরা মালয়েশিয়ার ইকো ইন্টেরিয়র্স ইন্টারন্যাশনাল নামক কোম্পানিতে চাকুরি দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ২৪ জন কর্মীর পাসপোর্টে নেয়। ওই ২৪ কর্মহেচ্ছেন রফিকুল ইসলাম, সাগর আলী, রাজু আহমেদ, ইয়াসিন আরাফাত, রাকিব হাসান, আব্দুল আলিম, আলমগীর হোসেন, এনামুল হক, রইজুল ইসলাম, শরিফ আহমেদ, আসাদুল ইসলাম, রাসেল ব্যাপারী, লিটন মিয়া, জামাল শাকি, মো. হুমায়ুন কবির, মোস্তফা আলী, সাগর মিয়া, আব্দুল আলীম, আমিরুল ইসলাম, মোহাব্বত আলী, শিহাব উদ্দিন, আলীফ আহমেদ, চনু মিয়া ও সজিব হোসেন।
এছাড়াও বিভিন্ন তারিখে চাই চাং ফুড ইন্ডাস্ট্রি, এসএনডি কোম্পানিতে চাকুরি দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সুজন খান ও নূর আলম খানকে এবং এলবিএস ইন্ডাস্ট্রিজে বাবলু ও বাদল নামে আরও ৪ জনসহ মোট ২৮ জন কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠান। কিন্তু আসামিরা উল্লিখিত শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। চুক্তি মোতাবেক কোম্পানিতে চাকুরি না দিয়ে অন্যত্র নিয়ে আটকে রাখে। ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে পুনঃরায় টাকা দাবি করে।
বাদী বিষয়টি জানতে পেরে তার এজেন্সির মাধ্যমে আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আসামিরা তাদের লোকজনের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মীদের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয়। কার্যালয়ে আসামিরা বাদীর চাপের মুখে শ্রমিকদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। আসামিরা চুক্তি মোতাবেক শ্রমিকদের কাজ দেয়নি। প্রেরিত শ্রমিকদের কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও আসামিরা বিভিন্ন তালবাহানায় বাদী ও তার লোকজনদের ঘুরাতে থাকে। পরবর্তীতে বাদী রুবেল আসামিদের নিকট বিভিন্ন মাধ্যমে পাঠানো ২৮ জন কর্মীর সমস্যা সমাধান কিংবা পাঠানো শ্রমিকদের দেশে ফেরত নিয়ে আসার কথা বলে। অন্যদের শ্রমিকদের জন্য জমা দেওয়া আরও ১ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত চান বাদী। কিন্তু আসামিরা টাকা না দিয়ে বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধমকি এবং টাকা না দেওয়ার জন্য নানা রকম টালবাহানা করে যাচ্ছে। আসামরিা পরস্পর যোগসাজশে, বাদী ও শ্রমিকদের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে, ভালো কাজের আশ্বাস দিয়ে মালয়েশিয়ায় (বিদেশি) কর্মীদের প্রেরণ করে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করে চুক্তি মোতাবেক কাজ প্রদান না করে আটকিয়ে রেখে নির্যাতন করেন। এছাড়াও আসামিরা মালয়েশিয়ার শ্রমিক পাঠানোর কথা বলে বাদীর কাছ থেকে অঙ্কের অঙ্কের টাকা নিয়েছে। আসামিদের কাছে বাদীর এখনো ১ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে।
জানা গেছে, বিতর্কিত ব্যবসায়ী ফকরুল আগেও বহুমানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে বিদশে পাঠিয়েছে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ দেয়নি। তার বিরুদ্ধে আগেও প্রতারণা ও মানবপাচার আইনে মামলা ছিল। চতুর ফকরুল সেগুলো থেকে আইনের ফাঁকফোকরে বেরিয়ে গেছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
