× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

যে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই মুরগির খামার

মো. আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি)

১৮ মার্চ ২০২৪, ১৪:০২ পিএম

পাহাড়ের মাটিতে আকাঁবাঁকা সর্পিল রাস্তা পেরিয়ে গভীর অরণ্য ভেদ করে একখণ্ড অজপাড়াগাঁ, অবহেলিত এই গ্রামের প্রত্যেকেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন বাড়ির আঙিনায় ছোট-বড় পোল্ট্রি  মুরগির খামার করে। এ গ্রামের প্রতিটি বাড়ি মানেই এক একটি খামার। 

মুরগির কিচিরমিচির ডাকে সকালে গুম ভাঙে তাদের। গ্রামজুড়ে মুরগির খামারে সয়লাব। অলস সময় বসে না থেকে মুরগির খামার করে এ গ্রামের সবাই আজ স্বাবলম্বী এবং সফল উদ্যেক্তা। তাদের খামারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। বর্তমানে নিজেদের স্বাবলম্বী হবার পাশাপাশি তাদের পরিবারেও এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। 

গ্রামে গঞ্জে পোল্ট্রি খামারের বিস্তার ঘটলে দেশে নিরাপদ ও প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে অত্র এলাকায় পোল্ট্রি খামারে মুরগি পালনে অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরীয় ঔষুধ কম ব্যবহার করে তারা অরগানিক পদ্ধতিতে মুরগি পালন করে থাকেন। 

পরিকল্পনা করে মুরগির বিষ্টা দিয়ে বায়োগ্যাস তৈরি করে নিজেদের জ্বালানি চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামেও গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব। অথচ পরিকল্পনার অভাবে  নামমাত্র মূল্যে এসব বিষ্ঠা বিক্রি করে দেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাটিরাঙ্গায় শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বেলছড়ি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের স্বর্ণকার টিলা নামক একটি গ্রাম। পথ চলতে দেখা মিলবে, রাস্তার ধারে, পাহাড়ের পাদদেশে, বসতবাড়ির সামনে স্থাপিত মুরগির খামার। তাদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত চারপাশ। 

ছোট বড় সব ধরনের মুরগির খামার রয়েছে এখানে। সর্বনিম্ন ২হাজার মুরগির শেড থেকে শুরু করে ৪হাজার মুরগির শেড রয়েছে এই গ্রামে। জানা যায়, ২০১২ সালে আজিজুল ইসলাম নামে এক যুবক পোল্ট্রি মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী হবার গল্পে অনুপ্রাণিত হয়ে মানিকছড়ির এক ডিলারের সাহচর্যে এসে তারই দিকনির্দেশনা এবং সহযোগিতায় প্রথমে এ এলাকায় ১হাজার মুরগী দিয়ে একটি খামার শুরু করেন। ১ম বছরে সফল হওয়ায় শুরু হয় মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী হবার স্বপ্ন। তখন থেকে ২০১৬ সালে ৪বছরের ব্যবধানে এ গ্রামের অন্যরা অনুপ্রণিত হয়ে শুরু করেন পোল্ট্রি খামারের ব্যবসা। ১ যুগ পরে এসে ১৩০ পরিবারের ১৮০ টি খামার রয়েছে। বর্তমানে এই গ্রামের সকলের আয়ের একমাত্র উৎস পোল্ট্রি খামার। গ্রামটি এখন আগের চেয়েও অনেক উন্নত। পথ চলতে দু'একটা উঁচু অট্রালিকাও চোখে পড়ে এ এলাকায়। যদিও যাতায়াতের একটি মাত্র রাস্তায়  এখনো ইটের সলিং। 

বর্তমানে এ সব পোলট্রি খামারে প্রতিমাসে প্রায় ৪লাখ মোরগ উৎপাদন করা হয়। এসব মোরগ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যত্র তথা চট্টগ্রাম, কুমিল্লা এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পাইকারী বিক্রি করা হয়। প্রতি মাসে প্রায় কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয় এ ব্যবসায়। তবে বিদ্যুৎ না থাকার দরুন দারুন বেগ পোহাতে হয়েছে খামারিদের। কয়লা, গ্যাস এবং সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে বাড়তি খরচ মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়ছে তাদের পক্ষে। তাছাড়া খামারে জরুরি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভেকসিন ফ্রিজআপ করা সম্ভব হচ্ছে না। 

খামারিদের অভিযোগ, দেশ স্মার্ট বাংলাদেশের যুগে পদাপর্ন করলেও ওই এলাকায় এখন অব্দি বিদ্যুতের আলো পৌঁছে নি । ২০১৯ সালে অত্র এলাকায় বৈদ্যুতিক খুটি এবং ট্রান্সমিটার স্থাপন করা হলেও অজানা কারণে সংযোগ দেয় নি বিদ্যুৎ বিভাগ। ফলে কোটি টাকা সরকারি রাজস্ব দেয়া ওই এলাকার জনগণ বিদ্যুতের  সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

এদিকে মুরগির উৎপাদন আশানুরূপ হলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই শিডিউলের অতিরিক্ত টোল আদায়ের কারণে চরম হতাশায় ভুগছেন তারা। ফলে লাভের অংশ হারিয়ে এ ব্যবসায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন সকলে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ একটি গাড়ি কুমিল্লায় যেতে তাদের এ অঞ্চলেই ৩ স্থানে টোল দিতে হয়। প্রথমে, বেলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদে প্রতি গাড়ি ৫০০ টাকা, মাটিরাঙ্গা পৌরসভায় ১৭০০টাকা, জেলা পরিষদের টোল ১৭০০ টাকা সহ মোট ৩৯০০ টাকার টোল দিতে হয়। প্রতি মাসে ৪০০ গাড়ি তে টোল দিতে হয় ১৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বছরে প্রায় ২ কোটি টাকার টোল দিতে হয়। ফলে উচ্চ হারে টোলের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে সফল হবার স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হচ্ছে। 

খামারিয়া বিভিন্ন ব্যংক এবং এনজিও থেকে লোন নিয়ে মুরগীর ব্যবসা পরিচালনা করেন।  এভাবে যদি একাধিক স্থানে উচ্চ হারে টোল আদায় করা হয় তাহলে লাভের অংশ কমে তারা ঋণী হয়ে যাবেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। 

প্রতি মাসে প্রায় ৪লাখ মোরগ উৎপাদন হয় এসব খামারে। প্রতিটি মোরগ গড়ে দেড় কেজি করে হলে উৎপাদন হয় ৬লাখ কেজি মোরগ । প্রতি কেজি মোরগ  সর্বশেষ বাজার দর হিসেবে ১৬৯ টাকা করে বিক্রি করা হয়। ফলে প্রতিমাসে ১০ কোটি ১৫ লাখ টাকার মোরগ বিক্রি হয়। বছরে ১২১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার পোল্ট্রি বিক্রি করা হয়।  বছরে কোটি টাকার লেনদেনের গ্রামটি আজ বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত। 

পোল্ট্রি ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী বলেন, ২০১৬ সাল থেকে মুরগী ব্যবসা শুরু করি অতিরিক্ত টোল আদায়ের ফলে ব্যবসা ভাল যাচ্ছে না। লাভের অংশ কমে যাচ্ছে। সরকারি সহায়তা ও ভর্তুকি পেলে অনেক উপকৃত হবেন বলে তিনি জানান। 

অপর ব্যবসায়ী আজিজুল বলেন, ২০১২ সাল থেকে মুরগীর খামার শুরু করি আগে টোলের পরিমাণ কম ছিল এখন একই গাড়িতে ৩/৪ স্থানে অতিরিক্ত টোলা আদায় করা হয় বিধায় ব্যবসায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

ব্যবসায়ী মিলন মিয়া বলেন, ১৩০ পরিবারের, ১৮০ টি খামার থাকলেও বিদ্যুৎ নেই। সংযোগ থাকলেও খুঁটির দিকে অপলক তাকিয়ে থেকেই দিন পার করতে হয় তাদের। জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো গেলেও খরছ বেশি হচ্ছে। এ এলাকায় শীঘ্রই বিদ্যুৎ সংযোগে দিয়ে সমস্যা নিরসনের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।  

মাটিরাঙ্গা পৌরসভার পেনেল মেয়র-১ মোহাম্মদ আলী বলেন, পৌরসভার টোল আদায়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে, শিডিউলের বাইরে মনগড়া মতো টোল আদায়ে করা উচিত নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানান।  

মাটিরাঙ্গা আবাসিক বিদ্যুৎ প্রকৌশলী যত্ন মানিক চাকমা বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে ওই এলাকায় বিদ্যুতের সংযোগ প্রদান করা হয়। কাজটি সম্পন্ন হবার পর ঠিকাদার বিদ্যুৎ বিভাগকে কাজ বুজিয়ে দেন নি এবং বিদ্যুতের সংযোগও দেন নি। তবে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালুর বিষয়ে ইতিমধ্যে উদ্যেগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। 

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী বলেন, ওই এলাকার পোল্ট্রি খামারিদের উন্নয়নে সবকিছু করা হবে। অতিরিক্ত টোল আদায় এবং বিদ্যুৎ সংযোগ সংক্রান্ত সমস্যা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে সমাধান করা হবে বলে তিনি জানান।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.