কচুরিপানা থেকে উৎপাদিত জৈবসার প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর ফরহাদ শামীম। এ সারের নাম দেয়া হয়েছে ‘জলকমল’। দামে কম ও মানে ভালো হওয়ায় এ সারে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। তার এ প্রকল্প বিভাগীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে।
নবীনগর ইউএনও তানভীর ফরহাদ শামীম জানান, ইউএনও হিসেবে এখানে যোগদানের পর লক্ষ্য করেছি তিতাসসহ আশপাশের নদীতে কচুরিপানার কারণে নৌপথ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম তিতাস নদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে নবীনগরে স্পিডবোট যোগে যাতায়াতের সময় কচুরিপানায় আটকে গিয়েছিলেন। সে সময় তিনি নৌপথ স্বাভাবিক রাখতে কচুরিপানা পরিষ্কার করতে নির্দেশ দেন। খবর নিয়ে জানতে পারলাম চুয়াডাঙ্গার দর্শনা উপজেলায় আখের ছোবড়া থেকে বাণিজ্যিকভাবে জৈব সার উৎপাদন করছে। তখন মনে হলো, এতো বিপুল পরিমাণ কচুরিপানা থেকে জৈবসার উৎপাদন করে যদি লাভজনক উপায়ে কাজে লাগানো যায় তাহলে কচুরিপানার সমস্যাও দূর হবে।
ইউএনও আরও জানান, এ জৈব সার তৈরি করতে দুই মাস সময় লাগে। এ সার তৈরির পর পরীক্ষামূলক ব্যবহার করে সুফল পেয়েছি। সারটি ‘জলকমল’ নাম দিয়ে নবীনগর উপজেলায় বাজারজাত করা হয়েছে। উপজেলার বিসিইসির ২৬টি ডিলার জৈবসার কর্ণার স্থাপন করে প্যাকেটজাতের মাধ্যমে তা বিক্রি করছেন। এখন পর্যন্ত ৫ মে. টন সার বিক্রি হয়েছে।
সার তৈরি সম্পর্কে নবীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন, কচুরিপানা সংগ্রহের পর নিচের কালো অংশটুকু কেটে ফেলে দিতে হয়। কারন এটি থাকলে পঁচন প্রক্রিয়াটা অনেক দেরি হয়। বাকি পাতাসহ অংশটুকুর দেড় মে. টন পরিমাণ স্তূপ করে ১৫ সেন্টিমিটার পর পর ২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ট্রাইকোডার্মা নামক এক ধরণের ছত্রাক এবং ২০০ গ্রাম চুন ছিটিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ইউরিয়া পঁচন প্রক্রিয়া দ্রুত হয়।
এ বিষয়ে ডিলার মেসার্স রিনা এন্টারপ্রাইজের মালিক জাহিদ হাসান বলেন, দোকানে জৈবসার কর্ণার স্থাপন করেছি। সেখানে জলকমল সারটি রেখে বিক্রয় করা হয়। এখন পর্যন্ত ২০০ বস্তা জলকমল বিক্রি করেছি। প্রতি বস্তা অন্য সারের মূল্য সর্বনিম্ন ১৩০০ টাকা, আর প্রতি বস্তা জলকমলের মূল্য ৬০০ টাকা।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম বলেন, কচুরিপানা থেকে সার উৎপাদন একটি অনন্য উদ্যোগ। এটির ফলে নদী ও হাওরে মৎস্য প্রজননের সহায়তা হবে। কচুরিপানার কারণে নদীর স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হয়। এতে করে মাছে প্রজনন কমে যায়। পানি শুকিয়ে গেলে কচুরিপানা একদম পঁচে যায়। তখন অক্সিজেন নিঃশেষ হয়ে যায়। সে সময় মাছ অক্সিজেন পায় না।