নদী দখল ও পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব পাশে অবস্থিত নৌপথ দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়দের কাছে কুহেলিয়া নদী নামে পরিচিত লোনাপানির এই খাল দিনদিন ভরাট হচ্ছে। এতে জোয়ারের সময় ওই খালের ওপর দিয়ে কোনো রকমভাবে নৌ-চলাচল করলেও ভাটার সময় তা বন্ধ থাকে। নৌপথটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় নৌ-চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি মাছ না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জেলেরাও।
এতে এই উপকূলীয় এলাকার ৪ হাজার পরিবারের মানুষ বর্তমানে কর্মবিমুখ হয়ে পড়েছেন।
জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোহেলিয়া নদী নামক এই খালের তীরে বসবাসকারীরা ওই নদী থেকে মাছ শিকার করে তাঁদের সংসার চালান।
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া থেকে শুরু হয়ে মাতারবাড়ী পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারজুড়ে লোনাপানির এই খাল প্রবাহিত হয়েছে।
কিন্তু বর্তমানে কোহেলিয়া প্রাণহীন হয়ে পড়ায় একে ঘিরে বসতি গড়া প্রায় চার হাজার জেলের কাজ নেই। । নাব্যতা হারিয়ে ফেলা একটি নদীর নাম কোহেলিয়া। নদীতে জল নেই তাই মাছও নেই; জেলেদের আয় নেই। নাব্যতা হারাতে হারাতে কয়েক বছরে অনেকটা মরেই গেছে কোহেলিয়া। জেলে পরিবারে চলছে নিরব কান্না। বেকার হয়ে পড়েছেন জেলেসহ মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ।
জেলেরা বলেছেন, ২০১৬ সালের পর থেকে কোহেলিয়া নদী ভরাট হতে শুরু করে। কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের বর্জ্য ও পলিমাটি সরাসরি নদীতে এসে পড়ে। যার কারণে নদী দ্রুত ভরাট হয়ে গেছে। আগে নদীতে জাল ফেললেই মাছ পাওয়া যেত, এখন সেই মাছের দেখা নেই।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সংসারের খরচ মেটাতে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় চলে গেছেন এখানকার জেলেরা। মাছ নেই তাই বদলে গেছে পেশা। তাদের কেউ এখন জাহাজ শ্রমিক, কেউ দিনমজুর, কারও কোন পেশাই নেই।
স্থানীয় জেলে রশিদ জানান, এক সময় কোহেলিয়া নদীটির প্রাণ ছিল। নদীতে উৎসবমুখর পরিবেশে দলবদ্ধ মাঝ শিকারে নামতো তারা। কিন্তু এই নদী ঘেষে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের রাস্তা ও স্থাপনা তৈরি করায় কোহেলিয়া নদী ছোট হয়ে যায়। সাথে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বর্জ্যের সাথে মাটিও এসে পড়ে নদীতে। ভাটার সময় নদীর পানি শুকিয়ে যায়। যার ফলে এই নদীতে আর জাল বসানো সম্ভব হয়না। ২০১৬ সালের পর ভরাট হয়ে নদীটি এখন মৃত প্রায়।
কোহেলিয়ার মৃত্যুতে জেলে পরিবারে হাহাকার চলছে। এই কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণেই কোহেলিয়া ভরাট হয়ে এখানকার মানুষের জীবনে কষ্ট নেমে এসেছে। এখন নদীতে মাছ ও মাছের পোনা পাওয়া যায় না। নদীর বুক ছিড়ে প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্য ব্রিজ ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে নদী আরো দ্বিগুণ গতিতে ভরাট হয়েছে।
উল্লেখ্য, কোহেলিয়া নদীটি কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া, হোয়ানক, মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নে অবস্থিত। এই নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে সভ্যতা। নদীর সাথে মিতালি করেই যেন কাটে কয়েক লাখ মানুষের জীবন।