আকাশে ধবধবে সাদা মেঘের শতদল আর মাটিতে নদ-নদীর তীর ঘেঁষে মৃদু বাতাসে দোল খাওয়া কাশফুলের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য দেখলেই বোঝা যায় শরৎ এসে গেছে। শরতের মেঘহীন নীল আকাশে গুচ্ছ সাদা মেঘের ভেলা ও সমতল বিরানভূমিতে কাশফুলের সৌন্দর্য কেড়ে নেয় প্রকৃতিপ্রেমীদের মন।
বরিশালের বাতিঘর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা জুড়ে ফুটে আছে সারি সারি শুভ্র সাদা কাশফুল। এছাড়াও ত্রিশ গোডাউন এবং চরবাড়িয়া ইউনিয়নের তালতলী ব্রিজ এর ঢালে চোখে পড়বে এরকম চোখ জুড়ানো দৃশ্য।
শরৎকালে কাশফুল ঘিরে পর্যটকদের আনাগোনা হয় এসব স্থানে। কাশফুলের নাচানাচি ও নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে বরিশালের নিকটবর্তী ও বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য মানুষেরা বিকেল হলেই এসব স্থানে ভিড় করেন।
বিকেল হলেই প্রকৃতির রাজকীয় এ বিনোদন স্পটে দর্শনার্থীরা কাশফুলের সাথে মিলেমিশে একাকার হচ্ছেন আবার কেউ বা ক্যামেরা বা মুঠোফোনে ছবি তোলায় মেতে ওঠেন। আবার অনেক শর্ট ফিল্ম প্রযোজকরা আসেন শর্ট ফিল্ম নির্মাণ করতে।
শরতের এ সময়টাতে সাদা আর সবুজের সাথে একাত্ম হয়ে ছুটে বেড়ায় কোমলমতি শিশু থেকে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধরা। শরতের বিকেলে রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি উপেক্ষা করে যান্ত্রিক পরিবেশকে পেছনে ফেলে প্রকৃতির কাছ থেকে একটু প্রশান্তি পেতে প্রায়ই কাশবনে ছুটে আসেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
শরতের এই সময়টাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় যেন সাদার খেলায় মেতে উঠেছে কাশফুলেরা। এছাড়াও খয়রাবাদ সেতুর দুই পাশের কাশবনে মেঘের মতো বাতাসে দুলছে সারি সারি কাশফুল। নদীর তীরে কাশবনের ভেতরে ঢুকলেই চারদিকে কাশফুল, নদীর ধারে শরীর-মন জুড়িয়ে দেওয়া বাতাস। তাই দুপুরের তীব্র রোদ উপেক্ষা করেও কাশবনে বসে গল্প করছেন অনেকে। এভাবে বেলা গড়াতেই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দর্শনার্থীদের ভিড়।
বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের তালতলী ব্রিজ এর ঢালে কাশফুল দেখতে আসা সারা নামের এক পর্যটক বলেন, দীর্ঘদিন ঘরবন্দী থেকে কাশফুলের বাগান দেখা খুবই আনন্দের। মনকে প্রশান্তি করতেই এখানে এসেছি। কালের আবর্তনে শরতকালের সেই চিরচেনা দৃশ্য এখন আর তেমনটি চোখে পরে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ কাশবন কেটে কৃষি জমি সম্প্রসারণসহ আবাসিক এলাকা গড়ে তুলছে। এতে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতিকে অপরূপ শোভাদানকারী কাশফুল।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাশফুলের বাগানে নৃত্য করতে আসা নুসাইবা বলেন, কাশফুলের দোলাচল এখানকার কাশবন যে কারো মনকে উদ্বেলিত করে প্রকৃতিপ্রেমী যে কারোর মনে ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রশান্তি জোগাবে। মনের প্রশান্তির জন্যই এখানে বেড়াতে এসেছেন তারা। শরৎ মনে জাগিয়ে দেয় কাশফুল, স্বচ্ছ নীল আকাশে সাদা মেঘ আর দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের কথা। কাশফুলের গন্ধ নেই, কাশফুল প্রিয়জনের জন্য উপহার হিসেবে দেয়ার ফুলও নয়। তবে কাশফুলের মধ্যে রয়েছে রোমাঞ্চকর উন্মাদনা। যা দেখে মন ভালো হয়ে যায়। কাশফুলের এই শুভ্রতা এবং স্নিগ্ধতা ছুঁয়ে যাক প্রতিটি হৃদয়। কিন্তু মানুষ বাড়ছে ও বর্ধিত মানুষের খাদ্যের জোগান দিতে পতিত জমিও চলে যাচ্ছে চাষের আওতায়। ফলে কাশবন আর কাশফুল হারিয়ে যাচ্ছে।
বরিশাল স্টেডিয়াম এলাকায় কাশবন ঘুরতে আসা সাগর নামে এক শিক্ষার্থী অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, আজকের এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে মানুষ খুব একা হয়ে পড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে তার সামাজিক ও মানসিক জীবনে। মানুষ কে প্রকৃতির কাছে যেতে হবে মনকে সজীব রাখতে হবে। তাহলেই আমরা সকল বাধা ভেদ করে এগিয়ে যেতে পারবো সুন্দর আগামীর পানে। তার জন্য এই কাশবন অগনেকটাই পরিবেশ বান্ধব। সাদা আর সবুজের মিলনমেলার কাশফুলের বাগানে ঘুরে বেড়ানোর অনুভূতিই অন্যরকম। সাদা মেঘের সঙ্গে এ কাশফুলের সাদা রং মনকেও সাদা করে দেয়।
বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই কাশফুল দেখতে পাওয়া যায়। কাশফুল পালকের মতো নরম এবং ধবদবে সাদা। গাছটির চিরল পাতার দুই পাশ খুবই ধারালো। কাশফুলের বেশকিছু ওষুধি গুণ রয়েছে। যেমন-পিত্তথলিতে পাথর ও কাশমূল বেটে চন্দনের মতো নিয়মিত গায়ে মাখলে দুর্গন্ধ দূর হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তবুও ঋতু বৈচিত্রের এই দেশে ফুল-পাখিতে প্রকৃতির সৌন্দর্য ফুটিতে তোলে। ষড়ঋতুর দেশে ঋতু বৈচিত্র্য তেমন একটা দেখা যায় না।
প্রকৃতির অপরূপ এই সৌন্দর্য উপভোগ করে প্রকৃতিপ্রেমীরা জানান, নীল আকাশের নীচে সাদা কাশবন প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলেছে অপরূপ ভাবে। মনকে প্রফুল্ল রাখতে জীবনের শতব্যস্ততার মাঝেও শরৎ আসলেই নীল-সাদার এই অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে বারবার মন ছুটে যায় কাশবনে। আপনি যদি প্রকৃতিপ্রেমী হয়ে থাকেন, বরিশাল আসলে একবার হলেও এই স্বর্গরাজ্যে আসার নিমন্ত্রন রইলো।