টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বাণিজ্যিকভাবে ননী ফলের চাষ শুরু হয়েছে। নানা রোগের ‘মহৌষধ’ হিসেবে এ ফলের চাষ করে প্রশংসা পাচ্ছেন উপজেলার পৌংলি এলাকার চাষি বাবুল হোসেন। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার আগে তিনি ভারতে ভেষজ উদ্ভিদ বিষয়ে একটি কর্মশালায় অংশ নেন। সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশে এসে এ ফলের গাছের চাষ শুরু করেন। ননী ফলের বৈজ্ঞানিক নাম ‘মরিন্ডাসিট্রিফোলিয়া’। এটি আফ্রিকা অঞ্চলের একটি ফল, তবে ক্রান্তীয় অঞ্চলে অর্থাৎ ভারত উপমহাদেশেও জন্মায়। জেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, টাঙ্গাইলে এ ফলের প্রথম চাষ হচ্ছে, এতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হবে।
জানা যায়, ননীগাছে বারো মাস ফল ধরে। বর্তমানে এ ফল বাজারে ১৫০ থেকে ২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর পাতা ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। ননীগাছের পাতা ও ফল মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির একটি মহৌষধ। যদিও এখন পর্যন্ত খুব কম মানুষের কাছে এ ফলটি পরিচিত। বর্তমানে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ননী ফলের রস বোতলবন্দি করে বাজারজাত করছে।
চাষি বাবুল হোসেন বলেন, ‘উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার পৌংলি এলাকায় ৪ বছর আগে ১ বিঘা জমি নিয়ে কিছু চারা কিনে বাগান তৈরি করি। বাগানটি সুরক্ষিত রাখতে আমি পুরো জায়গায় টিনের বেড়া দিয়েছি। বাগানের এক পাশে ননীগাছের নার্সারিও গড়ে তুলেছি। বাকি অংশে ৬ ফুট দূরত্ব রেখে গাছ রোপণ করেছি। ছোট-বড় মিলিয়ে বাগানে ৩ শতাধিক ঔষধি গাছ আছে। এই ফল সম্পর্কে মানুষ খুব একটা জানে না, তাই টাঙ্গাইলে তেমন বিক্রি হয় না। লোকমুখে শুনে কিছু লোকজন আসেন। এই ফলের অনেক গুণ থাকায় আশেপাশের এলাকা থেকে অনেকেই আমার বাগান দেখতে আসেন। এখনো বাজার প্রস্তুত করতে পারিনি, তবে অনলাইনে দেখে অনেকে এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।’
অনেকে কৌতূহল নিয়ে তার বাগান দেখতে আসেন এবং যাওয়ার সময় গাছের চারা ও ফল কিনে নিয়ে যান।
টাঙ্গাইল শহর থেকে আসা হালিম মিয়া বলেন, ‘আমরা এই ফলের নাম আগে কখনো শুনিনি। ইন্টারনেট থেকে জানতে পারি, এই ফল ও গাছের পাতা গ্যাস্ট্রিক ও চর্মরোগের কাজে লাগে, তাই আগ্রহ নিয়ে বাবুল হোসেনের বাগান দেখতে এসেছি।’
টাঙ্গাইল সদরের সুজন মিয়া বলেন, ‘বাবুল ভাইয়ের বাগানের অনেক ভিডিও অনলাইনে দেখেছি, যার কারণে বাগান দেখতে এলাম। ননী ফল খেলাম, ভালো লাগল।’
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, ‘ননী ফল বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এই ফল খাওয়ার পদ্ধতি খুব সহজ। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা এগুলো সংগ্রহ করে খাচ্ছে। গুণাগুণের দিক থেকে জানা গেছে, এই ফল ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে। পুরোনো বাতের ব্যথা সারাতে এই গাছের ফল ও পাতা ব্যবহার করা হয়। এ বিষয়ে উদ্যোক্তা বাবুল হোসেনকে সহযোগিতা করা হবে।’