ছবিঃ সংগৃহীত।
আজ (১৮ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস। ১৯৭৩ সালের এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ সভার ২৮ তম অধিবেশনে প্রথম আরবি ভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সেই দিনটিকে স্মরণীয় রাখতে ২০১২ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক অন্যতম সংস্থা ইউনেসকোর নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে ১৯০ তম অধিবেশনে ১৮ই ডিসেম্বরকে বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। সেই থেকে বিশ্বব্যাপী প্রাচীন এই ভাষাটির ঐতিহ্য ও প্রাচুর্য্য রক্ষায় দিবসটি পালন করে আসছে বিশ্ববাসী।
জাতিসংঘ
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর
দাপ্তরিক ভাষা ছিল পাঁচটি। ইংরেজি, ফ্রেন্স, চীনা, রুশ ও স্প্যানিশ। বিশ্বের
বহুল ব্যবহৃত ও প্রাচীন ভাষাগুলোর
অন্যতম আরবি।
তার
পরও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আরবি ভাষা ছিল অনেকটা উপেক্ষিত। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় আরব নেতাদের আরবি ভাষা ব্যবহারের সুযোগ ছিল না। ফলে আরব বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো এ ভাষার আন্তর্জাতিক
স্বীকৃতি আদায়ে সোচ্চার হয়। এ ক্ষেত্রে সৌদি
আরব ও মরক্কোর ভূমিকা
বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য।
দীর্ঘ
কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পর ১৯৭৩ সালে
জাতিসংঘের ৩১৯০ নম্বর সিদ্ধান্তে আরবি জাতিসংঘ ও তার সংশ্লিষ্ট
সংস্থার দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা লাভ করে।
আন্তর্জাতিক
অঙ্গনে আরবি ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। আরবি সেমিটিক ভাষাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও বহুল প্রচলিত।
সৌদি আরবের কিং সালমান গ্লোবাল সেন্টার ফর অ্যারাবিক ল্যাংগুয়েজের
তথ্য মতে, বর্তমানে ৫০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ আরবি ভাষায় কথা বলে। পৃথিবীর ২৫টি দেশের সরকারি ভাষা আরবি।
গোটা
বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহৃত ভাষাগুলোর মধ্যে আরবির অবস্থান চতুর্থ। এ ছাড়া গোটা
দুনিয়ার সব মুসলিম এই
ভাষায় ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধান পালন করে। এমনকি প্রাচ্যের খিস্টানদের অনেক গির্জারও নির্ভরযোগ্য ভাষা হলো আরবি। আরবি ভাষায় ইহুদি ও খিস্টানদের অনেক
গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় গ্রন্থ লেখা। আরব বিশ্বে তো বটেই, পৃথিবীর
প্রায় সব আন্তর্জাতিক মানের
বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগ আছে। পবিত্র কোরআনের ভাষা আরবি হওয়ায় এ ভাষা অমর,
অক্ষয়।
আরবি
ভাষার ইতিহাস প্রায় দুই হাজার বছরের পুরনো। এই ভাষায়ই আছে
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি শব্দ। আরবি ভাষার আছে কদর সারা বিশ্বে। আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে পৃথিবীর প্রায় সব দেশের কূটনৈতিক
ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকায় আরবির গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহুগুণ
বৃদ্ধি পেয়েছে আধুনিক যুগে। মুসলমান ছাড়াও অসংখ্য অমুসলিম পণ্ডিত আরবি ভাষাচর্চায় তৎপর। তাদের কেউ প্রাচ্যবিদ হিসেবে খ্যাত, আবার কেউ কেউ প্রসিদ্ধ ‘মধ্যপ্রাচ্য-গবেষক'রূপে।
২০১২
সাল থেকে ইউনেসকোসহ আরব বিশ্বের সাথে সাথে অন্য অনেক দেশ এ দিবসটি বিভিন্ন
আনুষ্ঠানিকতা ও সভা-সেমিনারের
মাধ্যমে পালন করে থাকে। আরবি ভাষার গুরুত্ব বৃদ্ধি, এর প্রচার-প্রসার
এবং বিশ্বময় এ ভাষাকে ছড়িয়ে
দিতে দিবসটি অনন্য ভূমিকা পালন করে।
প্রতি
বছর এ দিবসটি পালনের
জন্য বিভিন্ন আরবীয় সংস্থা ও ইউনেসকোর যৌথ
উদ্যোগে একটি শ্লোগান বা আলোচনার প্রতিপাদ্য
বিষয় নির্ধারণ করা হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য
বিষয় হচ্ছে ‘আরবি ভাষা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) : সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি উদ্ভাবনকে শক্তিশালীকরণ।’
২০১৩ সালে
প্রথম এ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করায় হয়। সে বছর যার শিরোনাম ছিল ‘মিডিয়া ও
আরবি ভাষা'। ২০১৪ সালে ‘আরবি হরফ'। ২০১৫ সালে ‘আরবি ভাষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান'। ২০১৬ সালে
এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল আরবি ভাষার প্রচার জোরদার করা'। ২০১৭ সালে ছিল ‘আরবি ভাষা
ও নতুন তথ্যপ্রযুক্তি ’। ২০১৮ সালে ছিল ‘আরবি ভাষা ও তারুণ্য'। ২০১৯ সালে ছিল ‘আরবি
ভাষা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা'। ২০২০ সালে ছিল ‘আরবি ভাষা একাডেমি, প্রয়োজন না বিলাসিতা?’।
২০২১ সালে ছিল ‘আরবি ভাষা এবং সভ্যতার যোগযোগ'। ২০২২ সালে ছিল ‘আরবি ভাষা ও আত্মপরিচয়'।
২০২৩ সালে ছিল ‘আরবি : কবিতা ও শিল্পের ভাষা'।
আজকের
এ দিবসটি পালনে সৌদি আরবে সকল বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা বিশ্বের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ফ্যাকাল্টি এবং আরবি ভাষা ইনিস্টিটিউটে রয়েছে বিশেষ অুনষ্ঠান। মিসর আরবি ভাষা একাডেমি আয়োজন করেছে ‘আরবি ভাষা শিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা' শিরোনামে বিশেষ সেমিনার।
বাংলাদেশে
২০১৪ সাল থেকে ‘মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশ' দিবসটি পালন করে আসছে। এ বছরও মারকায
কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন আয়োজন ঘোষণা করেছে। এছাড়া বিভিন্ন মাদরাসা, মারকায এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দিবসটি আয়োজনের মাধ্যমে সবার সামনে আরবি ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরা ও শেখার প্রতি
আগ্রহ তৈরি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
আজকের
এ দিবসটি পালনে সৌদির সকল বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা বিশ্বের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ফ্যাকাল্টি এবং আরবি ভাষা ইনিস্টিটিউটে রয়েছে বিশেষ অুনষ্ঠান। মিসর আরবি ভাষা একাডেমি আয়োজন করেছে ‘আরবি ভাষা শিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ শিরোনামে বিশেষ সেমিনার। বাংলাদেশে ২০১৪ সাল থেকে ‘মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশ' দিবসটি পালন করে আসছে। এ বছরও মারকায
কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন আয়োজন ঘোষণা করেছে।
এছাড়া
বিভিন্ন মাদরাসা, মারকায এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দিবসটি আয়োজনের মাধ্যমে সবার সামনে আরবি ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরা ও শেখার প্রতি
আগ্রহ তৈরি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। প্রত্যেক দেশে অবস্থিত সৌদি দূতাবাস দিবসটি পালনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।
এবারের
আরবি ভাষা দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ের দাবি হচ্ছে, অন্যান্য ভাষা যেভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছে, তেমনিভাবে এর মাধ্যমে যেন
আরবি ভাষাও উপকৃত হতে পারে। ভাষা শিক্ষাদান, গবেষণা ও প্রচারসহ বিভিন্ন
কার্যক্রম পরিচালনায় যেন এআই-এর সহযোগিতা ব্যাপকভাবে
গ্রহণ করা যায়। এছাড়াও এর মাধ্যমে যেন
স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাষাবিষয়ক অনেক সমস্যার সমাধান, অনুবাদ, টেক্সট পাঠ ও বিশ্লেষণ করা
যায়। আরবির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ঠিক রেখে এক্ষেত্রে ব্যাপক আবিস্কার এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার প্রতিও বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে এবারের আয়োজনে।
আরবি
ভাষার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়টি কতটুকু ফলপ্রসু হবে, তা নিয়ে আরবি
ভাষাবিদদের মাঝে মতবিনিময় চলছে। আয়োজন করা হচ্ছে বিভিন্ন সেমিনার ও আলোচনা অনুষ্ঠান।
অন্যদিকে আরবি ভাষার বেশ কিছু ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অক্ষম হওয়ার বিষয়ে প্রায় সকলেই সহমত পোষণ করেছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh