আজ ১০ মহররম। মুসলিম উম্মাহর জন্য এক গভীর শোক ও স্মৃতিবিজড়িত দিন। আজ পবিত্র আশুরা। এই দিনে কারবালার প্রান্তরে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ও তার পরিবার নির্মমভাবে শহীদ হন। তাই এ দিনটি মুসলমানদের কাছে শুধু শোকের নয়, বরং ত্যাগ, আদর্শ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত।
কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনার স্মরণে মুসলিমবিশ্বে দিনটি পালিত হয় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে। বাংলাদেশেও আশুরা উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি ও ধর্মীয় আয়োজন হয়েছে। ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি জননিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
ঢাকা মহানগরীতে আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিল হবে। তবে মিছিলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু কড়াকড়ি আরোপ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গত ২ জুলাই ডিএমপি একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, মিছিলে কোনো ধরনের অস্ত্র বা বিপজ্জনক বস্তু বহন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। যেমন দা, ছোরা, তলোয়ার, বল্লম, বর্শা, কাঁচি বা লাঠি।
এই নিষেধাজ্ঞা ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ সরওয়ার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬-এর ২৮ ও ২৯ ধারা অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞাটি জারি করা হয়েছে। মিছিল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এটি বলবৎ থাকবে।
আশুরা উপলক্ষে দেশের রাজনৈতিক নেতারাও কারবালার আত্মত্যাগের আদর্শ স্মরণ করে বার্তা দিয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বাণীতে কারবালার ঘটনার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ইমাম হোসেন (রা.)-এর শাহাদাত ছিল ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত।
তারেক রহমান আরও বলেন, যারা অন্যায়, অত্যাচার ও নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ইমাম হোসেন (রা.) ও তার সঙ্গীরা আত্মোৎসর্গ করেছিলেন। এই আত্মত্যাগ আজও নিপীড়িত মানুষকে সাহস জোগায়।
তার ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমান সময়ে ফ্যাসিবাদ, গণতন্ত্রহীনতা, ভোটাধিকার হরণ, গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কারবালার আদর্শকে ধারণ করেই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
অন্যদিকে, পবিত্র আশুরা উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, কারবালার আত্মত্যাগ চিরকাল মানবতার ইতিহাসে অম্লান থাকবে। জুলুম ও অবিচারের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় এই ত্যাগ মুসলমানদের চেতনায় শক্তি ও সাহস যোগায়।
তিনি আরও বলেন, ইমাম হোসেন (রা.) ও তার সঙ্গীরা ইসলামের শান্তিপূর্ণ আদর্শ রক্ষায় যে আত্মদান করেছেন, তা শুধু শোকের নয়, বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অনন্য উদাহরণ। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আশুরার চেতনাকে ধারণ করা জরুরি।
কারবালার ঘটনার বাইরেও আশুরা ইসলামে একটি ফজিলতপূর্ণ দিন। হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) আশুরার দিনে রোজা রাখতেন এবং সাহাবিদের তা রাখতে উৎসাহিত করতেন। তাই এই দিনটি রোজা, দোয়া-মোনাজাত, ইবাদত এবং সমাজকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে পালিত হয়।
বাংলাদেশে শিয়া মুসলমানদের পাশাপাশি সুন্নি সম্প্রদায়ও আশুরার দিন আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও ন্যায়প্রতিষ্ঠার আদর্শে দিনটি পালন করেন। যুগ যুগ ধরে এই দিনটি মুসলিম সমাজে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বিবেচিত।