বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ইনডিপেনডেন্ট আইএফআরএস 'এস১' এবং 'এস-২' রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। ইন্টারন্যাশনাল সাসটেইনেবিলিটি স্ট্যান্ডার্স বোর্ডর (আইএসএসবি) তৈরি জলবায়ু এবং টেকসইতা ঝুঁকি প্রকাশের বৈশ্বিক ফ্রেমওয়ার্ক অনুসরণ করে এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রথম ইনডিপেনডেন্টরিপোর্ট প্রকাশের মধ্য দিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকবাংলাদেশের একমাত্র ব্যাংক হিসেবে নতুন প্রবর্তিত এই স্ট্যান্ডার্ড গ্রহণ করেছে। শুধু বাংলাদেশেই প্রথম নয়, বিশ্বব্যাপী হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও ব্র্যাক ব্যাংক একটি, যারা এই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্র্যাক ব্যাংকের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, কর্পোরেট সুশাসন এবং ক্লাইমেট গভর্নেসের প্রতি প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
২০২৩ সালে এই ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডস্ আইএফআরএস) এস১ এবং এস২ স্ট্যান্ডার্ডস প্রবর্তিত হয়, যা সাসটেইনেবিলিটি এবং জলবায়ু-সম্পর্কিত আর্থিক তথ্য প্রকাশে একটি সমন্বিত ও বিনিয়োগকারী-কেন্দ্রিক কাঠামো প্রদান করে। ব্র্যাক ব্যাংক নিজস্ব উদ্যোগে ব্যাংকটির ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে এই কাঠামোগুলো অনুসরণ করার অগ্রণী পদক্ষেপ নিয়েছে যা উদীয়মান অর্থনীতির আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে।
এই প্রতিবেদনে টেকসইতা এবং জলবায়ু-সম্পর্কিত ঝুঁকিও সুযোগে কীভাবে ব্র্যাক ব্যাংকএক্সপোজার শনাক্ত, পরিচালনা ও প্রকাশ করে থাকে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এতে বোর্ড-লেভেলের ইএসজি ওভারসাইট, ব্যবসায়িক কৌশলে টেকসইতা অন্তর্ভুক্তিকরণ, জলবায়ু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং স্কোপ ১, স্কোপ ২ ও স্কোপ ৩ নির্গমনসহ ব্যাংকটির পূর্ণাঙ্গ গ্রিনহাউস গ্যাস (জিএইচজি) নির্গমনের বিস্তারিত মেট্রিক্সউল্লেখ করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এট বৈশ্বিক পিসিএএফ (পার্টনারশিপ ফর কার্বন অ্যাকাউন্টিং ফাইন্যান্সিয়ালস) পদ্ধতি প্রয়োগ করে ফাইন্যান্সড নির্গমন রিপোর্ট প্রকাশ করে। এটি জলবায়ু প্রভাব পরিমাপের এমন একটি উন্নত পদ্ধতি, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খুব একটা অনুসরণ করা হয় না।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় এটি রেগুলেটর, বিনিয়োগকারী, উন্নয়ন অংশীদার এবং যারা দায়িত্বশীল ও ভবিষ্যতমুখী আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুঁজছেন এমন সব গ্রাহকদের ব্যাংকটি সম্পর্কে একটি বিস্তারিত ধারণা দিচ্ছে। এটি সুশাসন, কৌশল ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং প্রতিষ্ঠানের মেট্রিক্স-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে কাজ করে।
বাংলাদেশ যখন তীব্র পরিবেশগত ঝুঁকির সম্মুখীন, তখন এই উদ্যোগটি কীভাবে একটি স্থানীয় ব্যাংকনিজেদের ঝুঁকি কাঠামো, ঋণদান পোর্টফোলিও এবং কৌশলগত দিকনির্দেশনার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক মান বজায় রাখতে পারে, সেটিআমাদের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংক ইতিমধ্যেই সেক্টরভিত্তিক কার্বন নিঃসরণ রোধের কৌশলগুলো নিয়ে এগিয়ে গেছে এবং ক্লাইমেট-স্ট্রেস পরীক্ষার পদ্ধতিগুলো আরও শক্তিশালীকরণে কাজ করছে।
এই যুগান্তকারী প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমেব্র্যাক ব্যাংক ক্লাইমেট গভর্নেন্দে ব্যাংকটির অগ্রণী ভূমিকা ওনেতৃত্বস্থানকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী এবং ইএসজি রেটিং এজেন্সিগুলোর বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে নিজের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করেছে। নীতিনির্ধারক এবং নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতিবেদনটি এক উল্লেখযোগ্য মাধ্যম। জলবায়ু সম্পর্কিত ফাইন্যান্সিয়াল ডিসক্লোজারকে কীভাবে স্থানীয়করণ পরিচালনা এবং ব্যাংকিং খাতে বিস্তৃত করা যেতে পারে, তার একটি উল্লেখযোগ্য মডেল হিসেবে এই প্রতিবেদনটি ভূমিকা রাখবে।
ব্র্যাক ব্যাংকের এমন প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে ব্যাংকটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও (কারেন্ট চার্জচারেক রেফাত উল্লাহ খান বলেন "স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সুশাসন হলো ব্র্যাক ব্যাংকে দায়িত্বশীল ব্যাংকিংয়েরমূল ভিত্তি। ব্ল্যাক ব্যাংক যে কেবল মুনাফা অর্জনের বিষয়েই নয়, বরং পরিবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সহ আরও অন্যান্য অনেক বিষয় নিঞ্চে কাজ করে, এই প্রতিবেদনটি সেটিরই এক পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের প্রতিবেদনটি কেবল ব্যাংকিং খাতেই নয়, বরং বাংলাদেশের কর্পোরেট খাতেও অনুকরণীয় বেঞ্চমার্ক স্থাপন করবে যা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও এ ধরনের রিপোর্ট প্রকাশে উদ্বুদ্ধ করবে।"