রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশের একমাত্র এভিয়েশন ও ভ্রমণ শিল্পভিত্তিক এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিচারক কমিটি বাংলাদেশের ভ্রমণ খাতের রূপান্তরে তৌফিক উদ্দিন আহমেদের “দূরদর্শী নেতৃত্ব ও অগ্রণী ভূমিকা”-র ভূয়সী প্রশংসা করেন।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের ভ্রমণ খাতের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে গ্যালাক্সি ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তৌফিক উদ্দিন আহমেদের পথচলা শুরু হয়। ঢাকার দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকার একটি ছোট্ট অফিস থেকে শুরু করে তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে গড়ে তোলেন দেশের অন্যতম সম্মানিত ও বহুমুখী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে।
সত্তর ও আশির দশকে তৌফিক আহমেদের নেতৃত্বে গ্যালাক্সি ট্রাভেল বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট হাউজ, দেশি-বিদেশি ব্যাংক, বহুজাতিক কোম্পানি (এমএনসি) ও বিভিন্ন এনজিও’র জন্য অন্যতম শীর্ষ কর্পোরেট ট্রাভেল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।
ভ্রমণের প্রতি গভীর আকর্ষণ ও বাংলাদেশকে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করার দৃঢ় সংকল্প থেকেই তৌফিক আহমেদ গ্যালাক্সিকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে যান, যেখান থেকে প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সগুলোকে বাংলাদেশের বাজারে নিয়ে আসার পথিকৃত হিসেবে কাজ করে। তাঁর নেতৃত্বে গ্যালাক্সি ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, অ্যানসেট অস্ট্রেলিয়া, কিংফিশার এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারওয়েজ, থাই এয়ারওয়েজ, স্পাইসজেট, সৌদিয়া, ওমান এয়ার, জাজিরা এয়ারওয়েজসহ বহু আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।
পেশাদার কর্পোরেট পোর্টফোলিও গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক ভ্রমণ খাতের বিকাশেও তিনি অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (এটিএবি)-এর প্রতিষ্ঠাকালীন সংগঠক এবং ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিওএবি)-এর তিনবারের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে তিনি উচ্চতর শিল্পমান, কার্যকর নীতিমালা এবং সম্মিলিত অগ্রগতির পক্ষে সক্রিয় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর দিকনির্দেশনায় গ্যালাক্সি ভিসা পরিষেবাও চালু করে, যেখানে ভিএফএস গ্লোবালের মতো আন্তর্জাতিক ভিসা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে অসংখ্য বাংলাদেশির জন্য আন্তর্জাতিক ভ্রমণ আরও সহজ, কার্যকর ও সাশ্রয়ী হয়ে ওঠে।
এই সম্মাননা প্রসঙ্গে তৌফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, “এই স্বীকৃতি শুধুমাত্র আমার ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং পুরো গ্যালাক্সি পরিবারের পরিশ্রম ও নিষ্ঠার প্রতিফলন। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে বৈশ্বিক মানচিত্রে তুলে ধরার অভিযাত্রায় বিমানসংস্থার অংশীদার, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থা, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও অন্যান্য বেসরকারি এয়ারলাইন্স, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এবং বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের অব্যাহত সহযোগিতার জন্য আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আমরা গুণগত উৎকর্ষ ধরে রাখা, নতুন প্রতিভা গড়ে তোলা এবং দেশের এভিয়েশন, ট্রাভেল ও পর্যটন খাতকে আরও গতিশীল করে তুলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
আজও তৌফিক আহমেদ তাঁর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তাভাবনার মাধ্যমে দেশের এভিয়েশন ও পর্যটন খাতের অনেককে অনুপ্রেরণা দিয়ে চলেছেন। তিনি চিকিৎসা ও বিনোদনভিত্তিক পর্যটনের সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং খাতটির টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রচার বাড়ানোর ওপর বিশেষভাবে জোর দিচ্ছেন।
বিচারক কমিটি জানান, “বাংলাদেশের ভ্রমণ শিল্পের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে তৌফিক উদ্দিন আহমেদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়েছে।”
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা তৌফিক আহমেদের দীর্ঘ কর্মময় জীবনকে বাংলাদেশের এভিয়েশন ও পর্যটন খাতের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে উল্লেখ করেন। তাঁদের মতে, মানুষের সঙ্গে মানুষের, সংস্কৃতির সঙ্গে সংস্কৃতির এবং গন্তব্যের সঙ্গে গন্তব্যের সংযোগ স্থাপনে তাঁর অঙ্গীকার বাংলাদেশের বৈশ্বিক সংযুক্তিকে আরও সুদৃঢ় করেছে।