× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

জনসংযোগের ভবিষ্যৎ: শুধু প্রচার নয় আস্থা ও আত্মপরিচয় নির্মাণ

মো. সাজ্জাদুল ইসলাম

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:২৯ পিএম

একবিংশ শতাব্দীর এই দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে, যেখানে তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লব প্রতিটি ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করছে, সেখানে জনসংযোগ (Public Relations-PR) ধারণাও এক নতুন মোড় নিয়েছে। একসময় জনসংযোগ মানে শুধু প্রেস রিলিজ পাঠানো, ইভেন্ট আয়োজন করা বা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা বোঝাত। কিন্তু বর্তমান সময়ে এটি আরও ব্যাপক ও কৌশলগত রূপ ধারণ করেছে। এখন জনসংযোগ শুধু বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যম নয়, বরং একটি প্রতিষ্ঠানের আত্মণ্ডআবিষ্কার এবং ক্রমাগত নিজেকে নতুন করে গড়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ডিজিটাল মিডিয়ার উত্থান জনসংযোগের চিরাচরিত পদ্ধতিকে আমূল বদলে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ব্লগ, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের মতো নতুন প্ল্যাটফর্মগুলো জনসংযোগ পেশাদারদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এখন একটি সংবাদ বা তথ্য মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর ফলে তথ্যের প্রবাহ যেমন দ্রুত হয়েছে, তেমনি ভুল বা মিথ্যা তথ্যের প্রচারও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই, বর্তমান জনসংযোগ পেশাদারদের কেবল তথ্য প্রচার করলেই হবে না, বরং তথ্যের সত্যতা যাচাই করা এবং গুজব প্রতিরোধেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

নতুন যুগে জনসংযোগ কেবল অনুমানের উপর ভিত্তি করে চলে না, বরং ডেটা-চালিত অন্তর্দৃষ্টি এর উপর নির্ভরশীল। অ্যানালিটিক্স টুলস ব্যবহার করে জনসংযোগ কর্মীরা বুঝতে পারেন কোন ধরনের কন্টেন্ট সবচেয়ে বেশি কার্যকর হচ্ছে, কোন প্ল্যাটফর্মে তাদের টার্গেট অডিয়েন্স সবচেয়ে বেশি সক্রিয় এবং কোন বার্তা তাদের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে। এই ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে তারা আরও কার্যকর কৌশল প্রণয়ন করতে পারেন এবং তাদের কার্যক্রমের প্রভাব পরিমাপ করতে পারেন। এটি জনসংযোগকে আরও পরিমাপযোগ্য এবং ফলাফল-ভিত্তিক করে তুলেছে।

আজকের যুগে, একটি ব্র্যান্ডের পরিচয় কেবল তার পণ্য বা সেবার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি তার মূল্যবোধ, তার সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং তার কর্মসংস্কৃতির মাধ্যমেও নির্ধারিত হয়। জনসংযোগের নতুন ভূমিকা হলো একটি ব্র্যান্ডকে তার প্রকৃত পরিচয় খুঁজে পেতে এবং সেটিকে কার্যকরভাবে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরতে সাহায্য করা। এরমধ্যে রয়েছে ব্র্যান্ডের মিশন ও ভিশন স্পষ্ট করা, তার কোর ভ্যালুগুলো চিহ্নিত করা এবং সেগুলোকে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকভাবে যোগাযোগ করা।

একটি ব্র্যান্ড যখন নিজেকে সঠিকভাবে চেনে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে, তখন তার প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও আনুগত্য বৃদ্ধি পায়। ডিজিটাল যুগে সংকটের আগমন অপ্রত্যাশিত নয় এবং এর প্রভাব হতে পারে সুদূরপ্রসারী। একটি ছোট্ট ভুল বা একটি নেতিবাচক মন্তব্য মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে একটি ব্র্যান্ডের সুনাম নষ্ট করে দিতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, জনসংযোগ পেশাদারদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের দ্রুত এবং কার্যকরভাবে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে হবে, স্বচ্ছতার সঙ্গে তথ্য সরবরাহ করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করতে হবে। সক্রিয় সংকট ব্যবস্থাপনা এবং একটি শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এখন জনসংযোগের অন্যতম প্রধান কাজ। এর মাধ্যমে একটি ব্র্যান্ড সংকটের সময়ও নিজের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে পারে এবং জনসাধারণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে। জনসংযোগ কেবল বাইরের বিশ্বের সঙ্গেই সম্পর্ক তৈরি করে না, বরং একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগও এর অবিচ্ছেদ্য অংশ।

নতুন যুগে, কর্মীদের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করা, তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। যখন কর্মীরা একটি ব্র্যান্ডের মিশন ও ভিশনকে বিশ্বাস করে এবং নিজেদেরকে এর অংশ মনে করে, তখন তারা ব্র্যান্ডের সবচেয়ে শক্তিশালী দূত হিসেবে কাজ করে। অভ্যন্তরীণ জনসংযোগ একটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করে এবং কর্মীদের মধ্যে একতা ও অনুপ্রেরণা তৈরি করে।

পরিবর্তনের এই সময়ে, জনসংযোগ পেশাদারদেরও নিজেদের নতুন করে গড়ে তোলার প্রয়োজন। তাদের কেবল যোগাযোগের দক্ষতা থাকলেই চলবে না, বরং ডেটা বিশ্লেষণ, ডিজিটাল মার্কেটিং, সংকট ব্যবস্থাপনা এবং কৌশলগত পরিকল্পনাতেও পারদর্শী হতে হবে। প্রতিনিয়ত নতুন প্রযুক্তি ও প্রবণতা সম্পর্কে আপডেট থাকা এবং সেগুলোকে তাদের কাজে অন্তর্ভুক্ত করা অপরিহার্য। এই পেশা এখন আরও গতিশীল, কৌশলগত এবং প্রভাব বিস্তারকারী হয়ে উঠেছে।

পরিশেষে বলা যায়, নতুন যুগে জনসংযোগ কেবল তথ্য আদান-প্রদানের একটি মাধ্যম নয়, বরং এটি একটি প্রতিষ্ঠানের আত্মণ্ডআবিষ্কার, আত্মণ্ডপ্রকাশ এবং আত্মণ্ডউন্নতির একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া। এই চ্যালেঞ্জিং এবং একই সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে, জনসংযোগ পেশাদারদের নিজেদের প্রস্তুত রাখতে হবে ভবিষ্যতের জন্য, যেখানে তাদের ভূমিকা কেবল যোগাযোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং তারা একটি প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক সাফল্য এবং সুনামের স্থপতি হিসেবে কাজ করবে।

লেখক : পাবলিক রিলেশন অফিসার ডিপার্টমেন্ট অব বিসিপিআর

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.