ছবি: সংগৃহীত।
সর্বযুগের আদর্শ ব্যক্তিত্ব বিশ্বনবী (সা.)-এর সব কিছুই অনুকরণীয়। পরিবারের নারীদের সঙ্গে যেমন তাঁর মধুর ব্যবহার ছিল, তেমনি চমৎকার ব্যবহার ছিল সমাজের অন্য নারীদের সঙ্গেও। নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও প্রশংসা জ্ঞাপনে তাঁর কোনো কার্পণ্য ছিল না। আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, একদল নারী ও শিশুকে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে আসতে দেখে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয়।’ এ কথা তিনি তিনবার বলেন।
(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৮৯৯)
নারী বা পুরুষ সব অতিথিকে সব সময়ই হাসিমুখে স্বাগত জানাতেন তিনি। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, খাদিজার বোন হালা বিনতু খুওয়াইলিদ একদিন মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চাইলেন। তখন মহানবী (সা.) প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজার অনুমতি চাওয়ার কথা মনে করে হকচকিত হয়ে পড়েন। এটা তাঁর খুব ভালো লাগে। তারপর বললেন, ‘আল্লাহ, এ তো দেখছি হালা বিনতু খুওয়াইলিদ!’
রাসুলের যুগে নারীরা ছিলেন জ্ঞানানুরাগী ও মুত্তাকি। পর্দার বিধান পরিপূর্ণ মেনেই ব্যক্তিগত ও সামাজিক কোনো বিষয়ে নারীরা রাসুল (সা.)-কে সরাসরি জিজ্ঞেস করতেন। এসব বিষয়ে নারী সাহাবিরা সঠিক মাসআলা জানার জন্য প্রশ্ন করতেন; আর রাসুলও অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে তাঁদের কথা শুনতেন এবং সব প্রশ্নের উত্তর দিতেন। মহানবী (সা.) নানাভাবে নারীশিক্ষাকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি মদিনার আনসারি নারীদের প্রশংসায় বলতেন, ‘আনসার নারীরা কতই না উত্তম! দ্বিনের জ্ঞানার্জনে লজ্জা কখনো তাঁদের বিরত রাখতে পারে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১৬)
মুসলিম নারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের জন্য পৃথক দিন নির্ধারণ করেন রাসুল (সা.)। আবু সায়িদ খুদরি থেকে বর্ণিত; ‘নারীরা একবার বললেন, আল্লাহর রাসুল, পুরুষরা আপনার কাছে প্রাধান্য পাচ্ছেন সব সময়, তাই আমাদের জন্য পৃথক একটি দিন ঠিক করে দিন, যেদিন শুধু নারীরাই শিখতে পারবেন আপনার কাছে। তখন নবীজি (সা.) তাঁদের জন্য বিশেষ একটি দিনের ওয়াদা করলেন। সেদিন তিনি তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং তাঁদের (বিভিন্ন বিষয়ে) উপদেশ ও নির্দেশ দিলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১০১)
নারীদের প্রতি রাসুলের সম্মান ও মর্যাদা প্রদান দিবালোকের মতো স্পষ্ট। এমনকি চরম শত্রুগোষ্ঠীর নারীদের প্রতিও তিনি অতুলনীয় সম্মান দেখিয়েছেন। খায়বারযুদ্ধে বিজয়ের পর বিশ্বাসঘাতক বনু কুরায়জা ও বনু নাজিরের যুদ্ধবন্দি নারীদের দাসী হিসেবে মুসলিমদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। এর মধ্যে বনু নাজিরের সরদারকন্যা সাফিয়া বিনতু হুওয়াইকে গ্রহণ করেন দিহইয়া (রা.); কিন্তু তাঁর মর্যাদা লক্ষ করে সাহাবিদের অনুরোধে রাসুল (সা.) সাফিয়াকে স্বাধীনতা দেন এবং বিয়ে করার মাধ্যমে উম্মুল মুমিনিনের মর্যাদা দেন।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, খায়বার অভিযানের পর বনু নাজিরের সরদারকন্যা সাফিয়া বিনতু হুওয়াইকে দিহইয়ার হাতে সমর্পণ করা হয়। এক ব্যক্তি বললেন, সে তো আপনার যোগ্য, তাঁকে কেন দিহইয়ার হাতে তুলে দিলেন? রাসুল (সা.) এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে স্বাধীন করে দেন এবং পরে বিয়ে করেন। (বুখারি, হাদিস : ৯৪৭; মুসলিম, হাদিস: ১৩৬৫)
হাসান ( রা.) থেকে বর্ণিত; একবার এক বৃদ্ধা বিশ্বনবী (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, আমি যেন জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি।’ নবীজি বললেন, ‘মা, কোনো বুড়ো মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’
বর্ণনাকারী বলেন, নবীজির এই জবাব শুনে বৃদ্ধা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন। তখন বিশ্বনবী (সা.) বললেন, ‘তাঁকে বলে দাও, তুমি বুড়ো অবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ কারণ আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি তাদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছি। আর তাদেরকে করেছি কুমারী।’ (সুরা : ওয়াকিয়া, আয়াত : ৩৬; শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ১৭)
রাসুল (সা.) যখন কুবায় যেতেন, তখন উম্মু হারাম বিনতু মিলহান (রা.)-এর মেহমান হতেন। তিনি ছিলেন উবাদা ইবনে সামিত (রা.)-এর স্ত্রী। একদিন নবীজি সেই ঘরে দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন (কায়লুলা করছিলেন), হঠাৎ হাসতে হাসতে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। উম্মু হারাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনি কেন হাসছেন?’ নবীজি বললেন, ‘আমি আমার উম্মতের একদল মুজাহিদকে দেখলাম, তারা সিংহাসনে বসা রাজা-বাদশাহর মতো গভীর সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছে।’ উম্মু হারাম বললেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ, দোয়া করুন, আমিও যেন সেই দলে থাকি।’
উম্মু হারাম বলেন, তখন মহানবী (সা.) আমার জন্য দোয়া করে আবারও ঘুমিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর আবার হাসতে হাসতে জেগে ওঠেন। এবারও আমি তাঁর হাসির কারণ জানতে চাইলে মহানবী (সা.) বললেন, ‘আমি আমার উম্মতের একদল মুজাহিদকে দেখলাম তারা রাজকীয় অবস্থায় সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছে।’ উম্মু হারাম বলেন, ‘আমি আবার বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ, দোয়া করুন, আমিও যেন সেই দলে থাকি।’ মহানবী (সা.) বললেন, ‘তুমি প্রথম দলের সঙ্গে থাকবে।’
এরপর মুয়াবিয়া (রা.)-এর যুগে এই স্বপ্ন সত্য হয়েছিল। সে সময় উম্মু হারাম তাঁর স্বামী উবাদার সঙ্গে সেই সমুদ্র অভিযানে অংশ নেন। কিন্তু ফিরে আসার সময় বাড়ি পৌঁছার আগেই ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে শাহাদাতবরণ করেন। (বুখারি, হাদিস : ৬২৮৩)
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh