প্রতি বছর ২৪ সেপ্টেম্বর পালিত হয় মীনা দিবস। দক্ষিণ এশিয়ার কোটি কোটি শিশুর কাছে মীনা শুধু একটি কার্টুন চরিত্র নয়, বরং সাহস, সমতা আর শিক্ষার প্রতীক। নব্বইয়ের দশকে ইউনিসেফ নির্মিত এই চরিত্রের কাহিনী খুব অল্প সময়েই গ্রামীণ সমাজে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। সাধারণ গ্রামের মেয়ে মীনা, তার ছোট ভাই রাজু এবং পোষা টিয়া মিঠুকে ঘিরে নির্মিত গল্পগুলো শিশুদের জীবনের প্রতিদিনের সংগ্রাম ও সম্ভাবনাকে সামনে এনেছে। মীনা দেখিয়েছে, মেয়েরা ছেলেদের মতো সমানভাবে শিক্ষালাভ করতে পারে, কুসংস্কারকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের পথ তৈরি করতে পারে।
আজকের দিনে মীনা দিবসের গুরুত্ব আরও বেশি করে অনুভূত হয়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার সমাজে শিশুদের অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে বহু অগ্রগতি ঘটেছে বটে, কিন্তু এখনো দীর্ঘ পথ বাকি। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকারের হার বেড়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুদের সংখ্যা আশাব্যঞ্জকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, শিশুমৃত্যুর হার কমেছে এসব নি:সন্দেহে ইতিবাচক অর্জন। কিন্তু শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ, বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া, অপুষ্টি, শারীরিক শাস্তি এবং মানসম্মত শিক্ষা না পাওয়ার মতো সমস্যা এখনো শিশুদের ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করছে। করোনা মহামারির অভিঘাত এই সংকটকে আরও প্রকট করেছে। অনেক শিশু পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, অনেক কিশোরী অনিচ্ছাকৃতভাবে বাল্যবিবাহে বাধ্য হয়েছে।
এমন বাস্তবতায় মীনা দিবস আমাদের জন্য কেবল একটি উদযাপন নয়, বরং আত্মসমালোচনার সুযোগ। আমরা কি সত্যিই শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ, সমান ও মর্যাদাপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে পেরেছি? মীনা যেভাবে প্রতিটি পর্বে সামাজিক বৈষম্য, কুসংস্কার আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, তেমনি আমাদেরও শিশুদের অধিকার রক্ষায় অবিচল থাকতে হবে। শুধু বিদ্যালয়ে শিশুদের নিয়ে নাটক বা আলোচনা অনুষ্ঠান করলেই এই দিবসের উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে না। প্রয়োজন পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় নীতিতে শিশুদের কল্যাণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া।
মীনা দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শিশুরা ভবিষ্যতের জন্য নয়, তারা বর্তমানেরও নাগরিক। তাদের মতামত, আনন্দ, শিক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মানে আসলে আমাদের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করা। মীনার মতো প্রতিটি শিশুই যেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারে- "আমি পারি" সেই পরিবেশ গড়ে তোলাই হবে প্রকৃত সাফল্য।
মীনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, সমাজে মেয়েশিশুর স্থান অবহেলার নয়, অবদান রাখার। শিশুর অধিকার রক্ষার লড়াই মানে একটি মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার লড়াই। তাই মীনা দিবস কেবল একটি তারিখ নয়, বরং একটি অঙ্গীকার-আমাদের শিশুদের জন্য এক আলোকিত আগামী গড়ার প্রতিশ্রুতি।
মো. সাজ্জাদুল ইসলাম
পাবলিক রিলেশন অফিসার, ডিপার্টমেন্ট অব বিসিপিআর, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি