আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস ২০২৫ উপলক্ষে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) ‘গ্লোবাল পিস অ্যান্ড হারমনি: বাংলাদেশ ইন ইউএন পিসকিপিং’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হলে আয়োজিত এ সেমিনারে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের অবদান, বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা এবং টেকসই শান্তি গঠনে শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সিন্ডিকেট হলে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী, পিএইচডি সভাপতিত্ব করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মেজর জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ মাসিহুর রহমান, কমান্ড্যান্ট, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট)। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে ইলাহী আকবর, বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা উপদেষ্টা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও একাডেমিয়ার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন এবং তাদের মতামত প্রদান করেন।
মূল প্রবন্ধে মেজর জেনারেল মাসিহুর রহমান শান্তিকে মানব জীবনের মৌলিক শর্ত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আজকের সংঘাতময় বিশ্বে শান্তি ক্রমেই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও ব্যক্তিস্বার্থের উত্থান বিশ্ব শান্তিকে হুমকির মুখে ফেললেও বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে শান্তির দেশ হিসেবে ভূমিকা রেখে আসছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের সেনা সদস্যরা আত্মত্যাগ ও মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
প্রবাসে কঠিন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালনকারী শান্তিরক্ষীদের দৃঢ়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, শান্তিরক্ষী কার্যক্রম বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে। তিনি শুধু ‘শান্তিরক্ষীদের দেশ’ নয়, বরং ‘শান্তির দেশ’ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধকে টেকসই শান্তির মূল চাবিকাঠি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বৈশ্বিক সম্প্রীতির জন্য মানবতার অগ্রাধিকারকে সর্বোচ্চ করার আহ্বান জানান।
প্যানেল আলোচনায় মেজর জেনারেল (অব.) মো. মাইন উল্লাহ চৌধুরী বৈশ্বিক শান্তি প্রচেষ্টার ওপর ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার প্রভাব তুলে ধরে বলেন, শান্তিরক্ষা বাংলাদেশের জন্য জাতীয় গৌরব, নরম ক্ষমতা ও কূটনৈতিক গ্রহণযোগ্যতার প্রতীক।
বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অর্থ) মো. আকরাম হোসেন বলেন, শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের অবদান শান্তির প্রতি এক অটল অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস শান্তিরক্ষার পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, সন্ত্রাসবাদ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সম্পদ রাজনীতি ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের কারণে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এসব মোকাবিলায় ডিজিটাল সাক্ষরতা, বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত অভিযোজনের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ার ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্বশীল ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে বলেন, গণতান্ত্রিক শান্তি তত্ত্ব অনুযায়ী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধ করে না। তবে বর্তমান বাস্তবতায় গণতান্ত্রিক ও অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘাত দেখা দিচ্ছে। তারপরও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে শান্তি সম্ভব।
বিশেষ অতিথি মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে ইলাহী আকবর বলেন, শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের অবদান তার নরম ক্ষমতার প্রতীক হলেও, নরম ক্ষমতা কেবল যথেষ্ট নয়, কঠোর ক্ষমতাও প্রয়োজন। তিনি প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতিতে অবহেলার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রতিরক্ষা, কূটনীতি ও উন্নয়ন সমানতালে অগ্রসর হতে হবে। বিদেশি মিশনে বাংলাদেশের অবদানকে স্মরণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠায় নয়, শান্তির সংস্কৃতি বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনীকে অবশ্যই ঘরোয়া রাজনীতির বাইরে থাকতে হবে, তবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাদের আত্মত্যাগের যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী, পিএইচডি, বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যক্তির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, বহুমাত্রিক ও সমন্বিত সম্প্রদায় গড়ে তুলতে হবে। তার বক্তব্যে তিনি মানবিক মূল্যবোধকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারের উদ্বোধনী বক্তব্য দেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের পরিচালক ও অধ্যাপক ড. এম. জসিম উদ্দিন। তিনি অনুষ্ঠানটি পরিচালনাও করেন। বক্তব্যে তিনি বিশ্ব শান্তিরক্ষায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের অবিচল প্রতিশ্রুতির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি একটি সমন্বিত জাতীয় নিরাপত্তা নীতি প্রণয়ন ও জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
শেষে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকসের ডিন অধ্যাপক ড. এ কে এম ওয়ারেসুল করিম ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে। তিনি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক, অতিথি, প্যানেলিস্ট এবং আয়োজক সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিকে কৃতজ্ঞতা জানান।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh