গত বৃহস্পতিবার, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (NSU) স্থাপত্য ও চলচ্চিত্রের অন্তর্নিহিত সম্পর্ক নিয়ে এক অনন্য বক্তৃতা দেন প্রখ্যাত সিনেমাটোগ্রাফার রাশেদ জামান। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ, কথন লেকচার সিরিজের অংশ হিসেবে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপরিচিত রাশেদ জামান তুরস্কের মিডল ইস্ট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে স্থাপত্যে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিনেমাটোগ্রাফিতে শিক্ষা লাভ করেন। হলিউডে ক্যামেরা সহকারী ও লাইটিং টিমে কাজের মাধ্যমে তিনি সিনেমার জগতে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে নিজের স্বতন্ত্র ও বলিষ্ঠ অবস্থান তৈরি করেন। তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘোরানো কাজ ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত আয়নাবাজি (২০১৬) ।
বক্তৃতায় জামান একটি মৌলিক প্রশ্ন তোলেন: “স্থাপত্য ও চলচ্চিত্রের মধ্যে মূল সম্পর্ক কী?” তিনি ব্যাখ্যা করেন—স্থাপত্য চলচ্চিত্রে স্থানিক অভিজ্ঞতা ও বৈচিত্র্য তৈরি করে, আর আলো ও স্থানের পারস্পরিকতায় চলচ্চিত্র স্থির থেকে গতিশীল অভিজ্ঞতায় রূপ নেয়। তার ভাষায়, চলচ্চিত্র নির্মাণ হলো “চিত্র নির্মাণের প্রক্রিয়া”, যা অনেকটা স্থপতির নকশা ও কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার মতোই।
স্থাপত্য শিক্ষার দুটি মৌলিক শিক্ষা তিনি বিশেষভাবে তুলে ধরেন—
১. শূন্যতার মাঝে সৃষ্টির কল্পনা: যা স্থপতি ও সিনেমাটোগ্রাফার উভয়ের জন্য অপরিহার্য দক্ষতা।
২. মেধার চেয়ে শৃঙ্খলার প্রাধান্য: দীর্ঘ সৃজনশীল যাত্রার মূল চালিকা শক্তি হলো ধারাবাহিক শৃঙ্খলা।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান যুগের দর্শকরা শব্দের চেয়ে চিত্রকে বেশি গভীরভাবে অনুধাবন করে। ফলে ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং বা দৃশ্যমান গল্পনির্মাণ আজ আগের চেয়ে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।
চলচ্চিত্র ও স্থাপত্যের পার্থক্য প্রসঙ্গে জামান উল্লেখ করেন: “সিনেমাটোগ্রাফিতে দৃশ্যের অভিপ্রায় স্থাপত্যের তুলনায় দ্রুত পরিবর্তিত হয়। জলবায়ু, বাজেট ও অভিযোজনের কারণে সিনেমাটোগ্রাফারদের প্রায়ই আপস করতে হয়।”
তিনি পোলিশ সিনেমাটোগ্রাফার ভিটোল্ড সোবোচিন্সকির একটি উপদেশ শেয়ার করেন, যা তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল: “মুভি বানাও, ফটোগ্রাফ নয়।” তার ব্যাখ্যায়, ফটোগ্রাফ শুধু তথ্য দেয়, কিন্তু সিনেমা গল্প, দৃশ্য ও শব্দকে একত্রিত করে। তিনি দৃশ্য কাঠামোকে তিনটি উপাদানে ভাগ করে বোঝান—রূপ, অনুভূতি ও স্পর্শ—যা কাহিনি ও ঘরানার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।
দৃশ্যমান গল্প বলার দার্শনিক দিক নিয়ে জামান বলেন: “স্থান হলো সবচেয়ে প্রেরণাদায়ক উপাদান, আর সময় হলো আলোর পরিবর্তন।” তার মতে, জীবনের গল্প স্থান ও আলোর যাত্রার মধ্য দিয়েই উন্মোচিত হয়—যা তার স্থাপত্যশিক্ষার শিকড়ে গভীরভাবে প্রোথিত। আলোচনায় বিশেষভাবে উঠে আসে চলচ্চিত্র উৎসবে তার রঙ ব্যবহারের সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি। রাশেদ জামানের এই অসাধারণ লেকচার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথন লেকচার সিরিজে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
অনুষ্ঠান শেষে স্থাপত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শাহরিয়ার ইকবাল রাজ তাকে নর্থ সাউথ সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রাশেদ জামান পুরান ঢাকার একটি সড়কের তার তোলা অনন্য আলোকচিত্র স্থাপত্য বিভাগকে উপহার দেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh