বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা গ্রাম-নদী আর সবুজে ঘেরা এক শান্ত জনপদ। এখানেই অবস্থিত প্রায় শতবর্ষী এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাধবপাশা চন্দ্রদ্বীপ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ। দীর্ঘ ইতিহাসের সাক্ষী এই বিদ্যালয়ে প্রায় চারশো শিক্ষার্থী প্রতিদিন স্বপ্ন বুনে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে আসে। কিন্তু স্বপ্ন যত বড়ই হোক, বাস্তবতা অনেক সময় তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
গ্রামের এই প্রতিষ্ঠানে নেই শহরের মতো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। নেই উন্নত ল্যাব, নেই পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত উপকরণ। ফলে শিক্ষার্থীদের শেখার পরিসরও থেকে যায় সীমিত। শহরের স্কুলে যেখানে কম্পিউটার শিক্ষা এখন নিয়মিত পাঠ্য, সেখানে মাধবপাশার ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই কিবোর্ড ছোঁয়ার সুযোগও পায়নি।
এই বাস্তবতাই পরিবর্তনের প্রেরণা হয়ে দাঁড়াল ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংক পিএলসির (ইউসিবি) কাছে।
ব্যাংকটি শুধু একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয় বরং একটি মানবিক প্রতিষ্ঠান, যা সমাজের প্রতিটি স্তরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করে চলেছে। শিশুদের বিনামূল্যে হৃদরোগ চিকিৎসা, দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান কিংবা পরিবেশ ও শিক্ষা খাতে সহযোগিতা– সব ক্ষেত্রেই ইউসিবি নিজেকে প্রমাণ করেছে এক দায়িত্বশীল সামাজিক অংশীদার হিসেবে।
এই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে সম্প্রতি ইউসিবি এগিয়ে এসেছে মাধবপাশা চন্দ্রদ্বীপ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে। তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির আওতায় প্রতিষ্ঠানটিতে ১০টি নতুন কম্পিউটার প্রদান করা হয়েছে– যা এখানকার শিক্ষার্থীদের জন্য এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।
একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু আনন্দঘন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই কম্পিউটারগুলো প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জীবন কৃষ্ণ বেপারীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন ইউসিবির প্রধান কার্যালয়ের প্রতিনিধিরা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন– তরুণ রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং কমিটি সভাপতি ডাক্তার প্রদীপ কুমার সরকারসহ কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার সুধীজন। সবার মুখে ছিল একটাই অনুভূতি–গর্ব, আনন্দ ও কৃতজ্ঞতা।
অধ্যক্ষ জানান, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা এত দিন বইয়ের পাতায় ‘কম্পিউটার’ শব্দটা পড়েছে, কিন্তু এখন তারা নিজের হাতে সেটা ব্যবহার করতে পারবে। এটা শুধু একটা যন্ত্র নয়, বরং আমাদের গ্রামের শিক্ষার মান উন্নয়নের এক নতুন সূচনা।’
অভিভাবকেরা বললেন, শহরে গিয়ে সন্তানদের পড়ানো সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। কিন্তু এখন নিজেদের গ্রামেই সন্তানরা প্রযুক্তির শিক্ষা পাবে, এটা তাদের কাছে অনেক বড় স্বস্তি ও আশার বার্তা।
ইউসিবির প্রতিনিধিরা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, জ্ঞান আর প্রযুক্তি সমাজ পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। মাধবপাশার শিক্ষার্থীরা যেন পিছিয়ে না থাকে, সেই লক্ষ্যেই আমাদের এই উদ্যোগ।’
এই ১০টি কম্পিউটার হয়তো সংখ্যায় ছোট, কিন্তু এর প্রভাব হতে পারে অনেক বড়। এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা এখন কম্পিউটার চালানো, ইন্টারনেট ব্যবহার, অনলাইন শিক্ষা ও ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পাবে। ছোট ছোট গ্রামে এভাবেই প্রযুক্তির আলো ছড়িয়ে পড়লে, একদিন পুরো দেশই এগিয়ে যাবে ডিজিটাল দক্ষতা ও জ্ঞানের শক্তিতে।
মাধবপাশা চন্দ্রদ্বীপ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আগে ভাবতাম কম্পিউটার শুধু শহরের বাচ্চারাই শেখে। এখন আমরা নিজেরাও পারব।’
এই এক বাক্যের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ– যেখানে সুযোগ থাকবে সবার জন্য, শহর-গ্রাম নির্বিশেষে। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে ইউসিবির এই মানবিক উদ্যোগ নিঃসন্দেহে এক উজ্জ্বল পদক্ষেপ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
