ব্যাংকিং খাতের ভবিষ্যৎ ঝুঁকি মোকাবেলায় আরও শক্তিশালী গভার্ন্যান্স, কঠোর কমপ্লায়েন্স এবং আগাম প্রস্তুতিকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংকের নেতৃবৃন্দরা। ব্যাংকটির অ্যানুয়াল রিস্ক কনফারেন্স ২০২৫-এ এই আহ্বান জানানো হয়।
আয়োজনে অভিজ্ঞ ব্যাংকার ও ঝুঁকি বিশেষজ্ঞরা মানিলন্ডারিং এবং ডিজিটাল ব্যাংকিং ইকোসিস্টেমে বাড়তে থাকা ঝুঁকি নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যে দ্রুত পরিবর্তনশীল রিস্ক ল্যান্ডস্কেপের মুখোমুখি হচ্ছে, সেই বিষয়গুলোও নিয়েও কথা বলেন। অংশগ্রহণকারীরা বর্তমান ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি পুনর্মূল্যায়নের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ সমস্যা মোকাবেলায় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ফ্রেমওয়ার্ককে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
ব্র্যাক ব্যাংকের দৈনন্দিন ব্যাংকিং কার্যক্রমে ঝুঁকি সম্পর্কে সহকর্মীদের জ্ঞান বাড়ানো এবং কার্যকর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা তৈরির ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
২৯ নভেম্বর ২০২৫ ঢাকায় ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সরাসরি ও ভার্চুয়ালি হাইব্রিড ফরম্যাটে আয়োজিত দিনব্যাপী এই কনফারেন্সে ১,০০০-এরও বেশি ব্রাঞ্চ ম্যানেজার, ব্রাঞ্চ অপারেশনস ম্যানেজার এবং সাব-ব্রাঞ্চ ইন-চার্জ উপস্থিত ছিলেন।
ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও তারেক রেফাত উল্লাহ খান সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। আয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশনের অতিরিক্ত পরিচালক সুরভী ঘোষ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ব্র্যাক ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ও বোর্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হোসেন ‘ম্যাক্রোইকোনমিক আউটলুক – এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন অ্যান্ড ট্রেড ট্যারিফ’ বিষয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেন। এ সময় স্বতন্ত্র পরিচালক আনিতা গাজী রহমান এবং লীলা রশীদ উপস্থিত ছিলেন।
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারপারসন মেহেরিয়ার এম হাসান, সিএফএ সোসাইটি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও ইডিজিই এএমসি লিমিটেডের চেয়ারম্যান আসিফ খান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও তারেক রেফাত উল্লাহ খান ‘ইকোনমিক ফরকাস্টিং অ্যান্ড ব্যাংক’স রেডিনেস— আ রোডম্যাপ ফর ২০২৬’ বিষয়ে একটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন। সেশনটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিআরও আহমেদ রশীদ জয়।
ব্র্যাক ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ও বোর্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারপারসন সালেক আহমেদ আবুল মাসরুর, স্বতন্ত্র পরিচালক ও বোর্ড অডিট কমিটির চেয়ারপারসন চৌধুরী এমএকিউ সারোয়ার এবং ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব ব্রাঞ্চ ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক শেখ মোহাম্মদ আশফাক ‘বিল্ডিং আ ডেটা-ড্রিভেন, পিপল-পাওয়ার্ড এএমএল ফ্রেমওয়ার্ক’ বিষয়ক প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড ক্যামলকো চৌধুরী মঈনুল ইসলাম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশনের যুগ্মপরিচালক মাহমুদা হক ‘ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক উদ্যোগ’ বিষয়ে একটি সেশন পরিচালনা করেন। ভার্চুয়াল প্ল্য্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে দুবাই ইসলামিক ব্যাংকের হেড অব ক্রেডিট–রিটেইল, এসএমই অ্যান্ড ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট কাজী ফারুক কামাল ‘রিস্ক ল্যান্ডস্কেপ—রিটেইল লেন্ডিং’ বিষয়ে নিজের প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন।
কাজী ফারুক কামাল বলেন, “রিস্ক কালচার এবং স্ট্রেস টেস্টিং একটি প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি সচেতনতা এবং টেকসইতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়। স্ট্রেস টেস্টিং পিরিয়ডিক ভিত্তিতে না করে ধারাবাহিকভাবে করা উচিত, যাতে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজের দুর্বলতাগুলো সহজেই চিহ্নিত করতে পারে। একটি শক্তিশালী রিস্ক কালচার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ঝুঁকি চিহ্নিত করতে এবং সমাধান করতে উৎসাহিত করে। এর ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয় এবং টেকসইতা বৃদ্ধি পায়।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশনের অতিরিক্ত পরিচালক সুরভী ঘোষ বলেন, “ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি একটি স্বাভাবিক বিষয়, যা বিভিন্ন উৎস থেকে আসতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই সমস্যাগুলো আরও কার্যকরভাবে মোকাবেলার জন্য নতুন নীতিমালা এবং সুপারভিশন ডিপার্টমেন্টের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে কাজ করছে।”
সম্মেলনে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারপারসন মেহেরিয়ার এম হাসান বলেন, “প্রতিদিনই ব্যাংকগুলো নানা ধরনের ঝুঁকির মুখোমুখি হয়, যা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণে দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন। আমাদের ফ্রন্টলাইন সহকর্মীদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা আজকের এই সম্মেলনটি ঝুঁকি ও এর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তাঁদের জ্ঞান বৃদ্ধি করবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আজকের আয়োজন থেকে অর্জিত জ্ঞান তাঁরা কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ঝুঁকি মোকাবেলা করতে পারবেন।”
ব্র্যাক ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ও বোর্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারপারসন সালেক আহমেদ আবুল মাসরুর বলেন, “একটি মূল্যবোধনির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা উন্নত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও সুশাসনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিই। আমাদের এ যাত্রায় বাংলাদেশ ব্যাংকের দিকনির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা আমাদের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে এবং দায়িত্বশীল ব্যাংকিংয়ে নতুন মানদণ্ড তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”