ছবী: সংগৃহীত।
ন্যায়ের পক্ষে বলুন, ন্যায়ের জন্যে লড়ুন। অন্যায় দেখেও চুপ থাকা এখন সবচেয়ে বড় ক্রাইম। আয়েশা বিএনপি কর্মীর মেয়ে, দীপু দাস হিন্দু আর হাদি তো আমার কেউ না- হিসেব নিকেশ করে যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে চুপ থাকেন তবে হায়েনাদের পরের শিকার আপনি। অন্যায়-অপরাধের কোন পক্ষ-বিপক্ষ নাই। মানবিকতাবোধ থেকে, মানুষের পরিচয় থেকে এবং নৈতিক দায়িত্ব থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। আপনার শক্তি কম? কৌশল বদলে দৌড়ান। আপনার সাহস কম? সাহসী মানুষদের সাথে মিশো যান। তবুও অন্যায়কে তাড়ানো ছেড়ে দিয়ে বসে থাকা চলবে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। অন্যায় দমনে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। অন্তত ঘৃণা নামক অস্ত্র লুকিয়ে রাখা চলবে না।
হায়েনাদের হাত লম্বা হতে দিলে আপনার ঘাড় মটকাত বেশি দিন লাগবে না। কর্মস্থলে প্রতিবাদ করায় যদি ধর্ম অবমাননার দায় দিয়ে মেরে ফেলা হয় তবে আমরা লাশের সংখ্যা গুনতে গুনতে ক্লান্ত হয়ে যাবো। অধর্মের স্তম্ভ উদ্যত হতে দেখবো তবুও রুখতে পারবো না। অন্যায়ের প্রতিবাদকারী বীর হবে। কেননা অন্যায়কারী সবসময়ই ভীরু। অথচ সমাজে এখন উল্টো লাঙল চলতে দেখি। যেন মাছের কোচ লড়ানোর স্বভাব। এড়িয়ে থাকলে কতদিন চলতে পারবো? এভাবে একটা সুস্থ সমাজ, সভ্য দেশ চলতে পারে? অন্যায়ের বিরুদ্ধে পূর্বপুরুষদের থেকে বয়ে চলা সেই ক্রোধ আমরা কোথায় হারালাম?
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কিংবা দলীয় কোন্দল নয়তো ভিন্ন কারণে শত্রুতা- তাই বলে ঘরে ঘুমন্ত মানুষকে বাহির থেকে তালাবদ্ধ করে পুড়িয়ে মারা- সভ্যতার কোন ধাপে আছি- বলতে পারেন? আপনি যদি কেবল নিস্ক্রিয় দর্শক হন তবে এই আগুন থেকে আপনি বাঁচতে পারবেন? নগর পুড়লে দেবালয় রক্ষা পায় না। সাধু কিংবা সুশীলের ভাব ধরে, 'ধরি মাছ না ছুঁই পানি' নীতিতে চললে আপনিও ডুববেন। আপনার পক্ষের অন্যায় ও অন্যায়কারীই আপনার বিনাশ ঘটাবে।
সমাজের ভালো মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তবে অমানুষ বাড়ছে আরও বহুগুণে। পিটিয়ে হত্যা করে তারপর ঝুলিয়ে আগুনে ঝলসিয়ে দেওয়া- বীভৎসতার কোন স্তরে পড়ে? শিক্ষার হার, সার্টিফিকেট- এসব পরিসংখ্যান আমাদের মধ্যে কালেকটিভলি মনুষ্যত্ব গড়ছে না। সহিষ্ণুতা, সহনশীলতা বড় অভাব চারদিকে। বাহুর শক্তি প্রদর্শনীতে মেতেছে সমাজ- সেই যেন আদিম যুগের স্মৃতি জাগিয়ে তুলছে। ভদ্রতা, সম্মান কিংবা সত্য- কোনোটাই আমাদের আচরণের মানদণ্ডে নাই। হুক্কাহুয়া স্লোগানে গড্ডলিকা প্রবাহে আবর্তিত সমাজ!
যে শিশু ঘুমে ছিল সে আগুনে সেখানেই পুড়ে শেষ- শুধু আফসোস করে থেমে থাকবেন? আপনার কোনো দায়িত্ব নাই? লাভ-ক্ষতির হিসাব কষে চুপ থাকলে দানবের পরের থাবায় আপনি কিংবা আপনার সন্তানই ছবি হবে। সবকিছু দেখেও আপনার এড়িয়ে যাওয়া স্বভাবের কারণেই আপনার পরবর্তী প্রজন্ম পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে বাধ্য হবে। প্রকৃতির প্রতিশোধ বড্ড নির্মম। যা রেখে যাবেন তা ফিরে পাবেন।
মানুষের এই অধঃপতনের কারণ খুঁজে বের করুন। মন থেকে মায়া-মমতা, দয়া-করুণা কোথায় হারিয়ে গেলো? ক্ষমতার জন্য, স্বার্থের জন্য কোন মানুষ কিংবা সম্প্রদায় অন্য মানুষ কিংবা সম্প্রদায়কে এভাবে খুন করতে পারে? এমন ঘৃণ্যতর হামলা, জখম? আমাদের মনে হলোটা কী? দুঃসংবাদে ব্যথিত হওয়ার বদলে এখন সমাজে মানুষের মধ্যে উৎসব দেখি। দুর্ঘটনা যত সাংঘাতিক উপভোগে তত সাংবাদিক! নেতিবাচক খবরে পত্রিকার পৃষ্ঠা, গণমাধ্যমের পৃষ্ঠ ভরে ওঠে। ভালো খবরে আকর্ষণ নাই। যত অঘটন তা পড়ে/শুনে তৃপ্তির ঢেউ ওঠে। অমানুষের সংসারে আগুনের স্পর্শই সুবাতাস!
এভাবে চলতে দিবেন? বলবেন না অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা। আল্লাহর দোহাই- চুপ থাইকেন না। শত্রুর প্রতি অবিচারেও সায় দিয়েন না। জুলুমবাজের পক্ষ নিয়ে নিরব থাইকেন না। কথা বলুন। কণ্ঠনালী চওড়া করুন। নইলে হায়েনার হাত আপনার মস্তিস্কও গুড়িয়ে দেবে। ওদের চক্রান্তই আপনাকে দাস বানানো। আপনাদেরকে বিভাজিত করে ওরা ওদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। কুচক্রীর কুচক্রে বলি হলে আপনার দেউলিয়া হতেও বেশিদিন লাগবে না। যে মানুষ বিবেকহীন তাকে মানুষ বলতে বা ভাবতে মানুষের ঘৃণা জাগা উচিত।
কত খুন আর কত জখমের ভার সভ্যতাকে বইতে হবে? এভাবে চলতে দিয়েন না। রাষ্ট্রের গর্ভ ভারী হয়ে উঠছে। অপরাধ ও অপরাধীর বিরুদ্ধে দাঁড়ান। দীপুর খুনীদের বিপক্ষে বলুন। আয়েশার জন্য ন্যায়বিচার দাবি করুন। হাদির জন্য কান্নাকাটি করে দায় শোধ করার অপচেষ্টা করবেন না। দায়িত্ববান হয়ে উঠুন। আপনার কর্তব্য আপনি পালন করলে হাদি হত্যাযোগ্য হয়ে উঠতো না। পরিবারে শান্তি না থাকলে, সমাজ বাসযোগ্য না থাকলে এবং রাষ্ট্র নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে না পারলে আপনি টিবেন না, টিকতে পারবেন না। গণঅধিকারের কথা বলুন, মত ও চিন্তার স্বাধিকার আদায় করুন এবং আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন।
অন্যায় দেখেও আপনি চুপ থাকলে, অন্যায় সয়ে বা অন্যায়ের সাথে আপোস করে স্বার্থ হাসিল করলে আপনি কাপুরুষ। মানুষের সংজ্ঞা ভিন্ন। সে বিনত হবে তবে অন্যায়ের কাছে শির নত করবে না। মানুষ তো সে যে দীপ্ত কণ্ঠে, 'হাঁকে বীর 'শির দেগা, নেহি দেগা আমামা!' শপথে অনড় থাকবে। কেবল বেঁচে থাকার জন্য নিজেকে বেঁচে দিলে সেটা ভীরুতা। কাপুরুষের মত পাঁচশো বছর বাঁচার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নাই। ওসমান হাদির মত তেত্রিশ বছর বেঁচে তিনশো বছরের ইমপ্যাক্ট তৈরি করাতেই মানবজীবনের সার্থকতা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
