× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য

গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন

শাহনাজ পারভীন এলিস

১৮ জানুয়ারি ২০২২, ০৪:৫৬ এএম । আপডেটঃ ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ২২:১০ পিএম

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট এবং প্রায় ৫০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি গণতন্ত্রের জন্য শুভবার্তা নিয়ে এসেছে বলে মনে করেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণকেও ইতিবাচক মনে করেন তারা। তবে জাতীয় সংসদ থেকে স্থানীয় সরকারের প্রায় সব নির্বাচনেই উঠেছে জাল-জালিয়াতি ও নিয়ন্ত্রিত ভোটের অভিযোগ। তাই নারায়ণগঞ্জ সিটির এবারের নির্বাচন অবাধ ও উৎসবমুখর হওয়ার পেছনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির হিসাব কষেছেন বিশ্লেষকরা।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ধারাবাহিক অভিযোগের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটির শঙ্কাহীন ভোট-প্রশ্নমুক্ত নির্বাচনের উদাহরণ সৃষ্টি হলো। তবে এ ভোটে নির্বাচন কমিশনের কোনো কৃতিত্ব নেই বলে মনে করেন তিনি। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হলেও ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর জয়ের মূলমন্ত্র তার নিজস্ব ভাবমূর্তি ও জনপ্রিয়তা। তাই আইভীকে জেতাতে সরকারের গণ্ডগোল করার কোনো প্রয়োজন হয়নি। তার মানে এই নয় যে, জাতীয় রাজনীতিতে এই ভোটের প্রভাব পড়বে। কারণ এই ভোটে হেরে গেলেও সরকারের কোনো সমস্যা হতো না। ক্ষমতা হারানোর ভয় বা পরাজয়ের কোনো শঙ্কা না থাকায় সরকার এ নির্বাচনে কোনো প্রভাব বিস্তার করেনি। তাকে জেতাতে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার কোনো প্রয়োজনও ছিল না। কিন্তু ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জের মানুষ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল। তবে আইভীর জয়ী হওয়ার পর সেখানে আর সন্ত্রাস ফিরে আসেনি। আইভীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগও উঠেনি। তাই মানুষ আবার তার ওপর আস্থা রেখেছে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন’-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ আর ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি গণতন্ত্রের জন্য আশার সঞ্চার করেছে। শত বাধা অতিক্রম করে টানা তৃতীয়বারের মতো ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর এ বিজয় দৃষ্টান্ত বলেই মনে করেন তিনি। বিগত দিনে মেয়র পদে থাকাকালে আইভী নারায়ণগঞ্জের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তাই দলীয় সমর্থনের পাশাপাশি আইভী রহমানের ব্যক্তি ভাবমূর্তি এবং জনগণের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতাই বড় মনে হয়েছে। নির্বাচনে সহিংসতা হতে পারে বিরোধী পক্ষ আর ভোটারদের, এমন সব আশঙ্কাকে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে এটা ইতিবাচক। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে, এটা সম্ভব হয়েছে সরকার ও প্রশাসনের আন্তরিকতার কারণে। তিনি মনে করেন, এ নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে সরকারের জন্য কোনো ঝুঁকি ছিল না, সরকারি দলের কোনো প্রভাব পরিলক্ষিত হয়নি, তাই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। তাই বলে আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ অন্য সব নির্বাচন এমন হবে, এমন আশা করা ঠিক হবে না।

এই বিশ্লেষক মনে করেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে চাপের মধ্যে রয়েছে। যে কারণে তারা সর্বশেষ জাতীয় সংসদ ও অন্যান্য নির্বাচনের মতো নিয়ন্ত্রিত ভোটের পথে না গিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করেছে নারায়ণগঞ্জে। আওয়ামী লীগ প্রমাণ করতে চাইছে, বর্তমান সরকারের ওপরে আস্থা রাখা যায়। যদিও এর আগে ২০১৩ সালে বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা ও গাজীপুরসহ পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনও সুষ্ঠু করেছিল আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনগুলোকে তারা দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোটের উদাহরণ হিসেবে দেখিয়েছিল। কিন্তু পরের নির্বাচনগুলোতে তা বজায় ছিল না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটেও জনগণকে তার মাশুল দিতে হয়েছিল। অতীতের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনিয়ম ঠেকানোর বদলে লুকাতে দেখা গেছে। কিন্তু গতকাল বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে এমন অনিয়মের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশেষ কোনো প্রার্থীর পক্ষে কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও ছিল না। সাংবাদিকরা অবাধে কেন্দ্রে প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহের কাজ করতে পেরেছেন। এছাড়া চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেই কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা ও সাংবাদিক লাঞ্ছিত হওয়ার অনেক ঘটনা রয়েছে।

বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ এই নির্বাচনে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। তার মানে এই নয় যে, সব নির্বাচনেই ইভিএম বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম। কারণ এই পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণে কারচুপি করার সুযোগ রয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সর্বজন গ্রহণযোগ্য করতে সর্বদলীয় রাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ-জানিপপ এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ মনে করছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গণতন্ত্রের জন্য খুবই ইতিবাচক। তবে এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এই নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী’র বিজয় তাতে দলীয় সমর্থনের চেয়ে বড় ব্যাপার ছিল মাঠপর্যায়ে তার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ও গ্রহণযোগ্যতা। তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেন, প্রশাসনের সদি”ছা আর প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর সহনশীল আচরণের কারণে ভোট অনুষ্ঠানে সুশৃঙ্খল পরিবেশও লক্ষ্য করা গেছে। নির্বাচনে শতভাগ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তবে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দিতে ভোটাররা এখনো অভ্যস্ত না হওয়ায় ভোট প্রদানে সময় অনেক বেশি লেগেছে। আগামীতে এই প্রক্রিয়ায় ভোটগ্রহণকে গতিশীল করতে বছরব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু রাখার পরামর্শ দিলেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, আগামী মাসে গঠিত হবে নতুন কমিশন। এ নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে চলছে টানাপড়েন। আগামীতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে সরকার আন্তর্জাতিক মহলের প্রশ্নের মুখে রয়েছে। এসব বিষয়ও এই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের কারণ হিসেবে মনে করছেন তারা। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদের শেষ সময়ে নারায়ণগঞ্জে এমন ভালো ভোট বিশেষ কিছুর বার্তা দিচ্ছে। নানা আশঙ্কার কথা বলা হলেও রোববারের ভোটে দেখা যায়নি ভোটকেন্দ্র দখলের অপচেষ্টা। ছিল না পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়াবাড়িও ছিল না। বছর তিনেক আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিক্ত অভিজ্ঞতার নানা শঙ্কা নিয়ে ভোটাররা কেন্দ্রে এলেও এবার নির্বিঘেœ ভোট দিয়ে সš‘ষ্টি নিয়ে ঘরে ফিরছেন তারা।

স্থানীয় এমপি ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের সঙ্গে পুরনো ও প্রকাশ্য বিরোধ থাকলেও বেসরকারি ফলে প্রায় ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। ভোটের মাঠে একজন প্রার্থীর ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা যে কতটা জরুরি তাও নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.