জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, আমাদের দেশের শ্রমিকরা এখন ক্রীতদাস। ক্রীতদাসদের বাঁচিয়ে রাখা হয় শুধু কাজ করার জন্য। সেভাবেই আমাদের শ্রমিকদের বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। শ্রমিকদের রক্ত চুষে খাচ্ছে মালিকরা। ক্রীতদাসত্ব থেকে শ্রমিকদের রক্ষা করতে হবে।
গতকাল সোমবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় শ্রমিক পার্টি আয়োজিত মহান মে দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশে মানুষের অধিকার আছে? মানুষ কী রাস্তায় নামতে পারছে? শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য আইন আছে কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই। শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আইন বাস্তবায়নে সরকারের কোন আন্তরিকতা নেই।
তিনি বলেন, সামনের দিকে রাজনীতি হবে মানুষের অধিকার রক্ষার রাজনীতি। মানুষের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার সংগ্রাম শুরু হবে। যে অধিকারের জন্য দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক সংগঠনগুলোও শক্তিশালী ছিল। সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা শ্রমিকদের স্বার্থ কুক্ষিগত করছে। তারাও শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিত করে নিজেরা ফায়দা লুটছে। আইন অনুযায়ী শ্রমিকরা অধিকার পাচ্ছে না। সমতা ভিত্তিক ও ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ গড়ার সংগ্রামে শ্রমিক শ্রেণীকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, সংসদে আমরা কথা বলতে পারি। সংসদে আমরা অনেক দাবি করি, সরকার সে দাবি মানলে আমাদের ভোট ও জনপ্রিয়তা বেড়ে যাবে। এ কারণেও সরকার বিরোধীদলের কথা শোনেন না। এভাবেই দেশ চলছে। দেশের মানুষের আইনগত অধিকার নেই। দেশের মানুষের ফোন ও গতিবিধি নজরদারী করা হচ্ছে। এটা করার অধিকার কারোরই নেই। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, মানুষের কথা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, লেখার অধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সংবাদ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আইন তৈরি করা হচ্ছে। খুন-গুমের মাধ্যামে মানুষের বাঁচার অধিকার হরণ করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। আগামী দিনে অনেক বড় সংগ্রাম আছে, এই সংগ্রামে জিততে হবে।
এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণীর গৌরবময় ঐতিহ্য আছে। মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষার আন্দোলনেও শ্রমিকদের গৌরবোজ্জল ভূমিকা ছিলো। পরবর্তীতে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ছাত্ররা এগিয়ে এলেও প্রধান চালিকা শক্তি ছিলো শ্রমিক শ্রেণী। স্বাধীনতা সংগ্রামসহ প্রতিটি আন্দোলনে শ্রমিকদের অবদান গৌরবোজ্জল। সরকার সব সময় মালিকদের মাথায় তেল দিচ্ছে। দুঃখের বিষয় আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আমাদের বলে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করো। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শ্রমিকরা আন্দোলন করতে পেরেছিলো, রাস্তায় নামতে পেরেছিলো। এখন আমাদের দেশের শ্রমিকরা আন্দোলন করতে পারে না, রাস্তায় নামতে পারে না। সেই সময়ের চেয়ে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অবস্থা এখন কোন কোন ক্ষেত্রে বেশি খারাপ। বিদেশিরা আমাদের শ্রমিকদের স্বার্থ ক্ষার জন্য কথা বলে কিন্তু আমাদের সরকার শ্রমিকদের স্বার্থ দেখে না। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের সরকার কী করছে? সরকার মালিকদের স্বার্থ দেখছে নিজেদের মোটাতাজা করতে। মালিকরা শ্রমিকদের শোষণ করে আর সরকার তাতে সহায়তা করছে। অথচ, সরকার হেলিকপ্টর নিয়ে ঘুড়ে বেড়ায়, এয়ারকন্ডিশন ঘর-বাড়িতে আরাম করে, একেক জন তিনটি করে গাড়ি ব্যবহার করছে শ্রমিকদের কষ্টের পয়সায়।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, গ্রামের কৃষকরাও কৃতদাস হচ্ছে। শ্রমিকরা কাজ করতে না পারলে মধ্যযুগের মত ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। বেকারত্ব বাড়ছে তাই শ্রমিকদের মূল্য আরো কমছে। মানবেতর জীবনে কাউকে দেখতে চাই না। আমরা চাই সবাই যেনো সম্মানের সাথে কাজ করতে পারে। যারা বড় বড় কর্মকর্তা হচ্ছেন, মন্ত্রী হচ্ছেন, তারা শ্রমিকদের পয়সায় বিলাসী জীবনযাপন করছেন কিন্তু তারা শ্রমিকদের স্বার্থ দেখছেন না। মালিকদের কাছ থেকে নগদ পাওয়া যায় তাই তারা মালিকের স্বার্থ দেখছেন।
প্রধান বক্তা হিসেবে জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, শ্রমজীবি মানুষের স্বার্থরক্ষায় পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যে রেকর্ড গড়েছেন এখনো কেউ তা ভাঙতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তাদের চরিত্র এক হয়ে যায়। দেশের মানুষ এই দুটি দলের হাত থেকে বাঁচতে জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে।
তিনি বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের নুন্যতম বেতন ১৫ হাজার টাকা করতে হবে। গৃহকর্মীদের নুন্যতম বেতন ও কর্মঘন্টা উল্লেখ করে আইন করতে হবে। তিনি বলেন, শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় যে আইন আছে তা বাস্তবায়ন করলেও শ্রমিকদের দুরাবস্থা অনেকটা দূর হবে।
জাতীয় শ্রমিক পার্টির সভাপতি একেএম আশরাফুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেনের পরিচালনায় মহান মে দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু। জাতীয় শ্রমিক পার্টির মধ্যে বক্তব্য রাখেন আব্বাস আলী মন্ডল, মোয়াজ্জেম হোসেন, আব্দুস সাত্তার, তোফাজ্জেল হোসেন তোফা, মিনহাজ আবেদীন বিশাল, আব্দুল মান্নান মিলন, ফজর আলী জাকির, শামীম শেখ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, এডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ উদ্দিন, মোঃ খলিলুর রহমান খলিল, মো. মাশরেকুল আজম রবি, ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব মো. বেলাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন খান, এডভোকেট ইউসুফ আজগর, দফতর সম্পাদক-২ এমএ রাজ্জাক খান, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সাত্তার গালিব, এমএ সুবহান, মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, কেন্দ্রীয় নেতা শেখ মো. সরোয়ার হোসেন, প্রিন্সিপাল মোস্তফা চৌধুরী, খুররুম ভূঁইয়া, ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল ইসলাম, এডভোকেট আব্দুল ওয়াহাব, শাহীন আরা সুলতানা রীমা, জানে আলম শ্রমিক পার্টির আব্দুল আজিজ, আনজু আক্তার, মো. খোরশেদ আলম, আবু তাহের, তসলিম উদ্দিন সাগর, রফিকুল ইসলাম রাজন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh