সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে বিএনপির ডাকে টানা ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া অবরোধ কর্মসূচি কঠোরভাবে পালন করা হবে বলে জানিয়েছে দলটি।
গত ২৮ অক্টোবরে বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা, নেতাকর্মীদের হত্যা, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, হয়রানি ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সোমবার (৩০ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার (২নভেম্বর) রাত ১২টা পর্যন্ত সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় বিএনপি।
একই সময়ে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে ৭২ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামীও।
এদিকে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির হাইকমান্ড। সারাদেশে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ভিডিওবার্তা দিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতা। একই সঙ্গে দায়িত্বশীল নেতাদের মাঠে থাকার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
এর আগে রোববার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আন্দোলন কর্মসূচি প্রণয়ন ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিএনপির নীতি-নির্ধারণী ফোরামের এক নেতা জানিয়েছেন, পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই। দাবির পক্ষে জনগণের সমর্থন রয়েছে। ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে মানুষের ঢল দেখে পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশ দিয়ে হামলা চালিয়ে পণ্ড করেছে। ২৯ অক্টোবর হরতাল কর্মসূচি সারাদেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করেছে।
অন্যদিকে আজ (মঙ্গলবার) থেকে শুরু হওয়া ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচিও কঠোরভাবে পালন করা হবে বলে জানিয়েছে দলটি। এজন্য দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, মহাসমাবেশের পরদিনই সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচির কারণে সারাদেশ থেকে আসা নেতাকর্মীরা ঢাকায় আটকা পড়েছিল। একদিন বিরতি দেয়ায় জেলার নেতাকর্মীরা এলাকায় ফিরে গেছেন। তাই ঢাকার পাশাপাশি জেলায় জেলায় অবরোধ কর্মসূচি পালন হবে। সারাদেশে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাদের মাঠে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অবরোধ কর্মসূচি সফল হলে আগামী সপ্তাহ থেকে ফের কর্মসূচি দেয়া হতে পারে।
বিএনপির ওই নেতা আরও জানান, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দিন থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে মহাসমাবেশে সংঘর্ষের পর বিএনপির সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার ও বাসায় বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। গতকালও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকের বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তবে দলটির নেতারা গ্রেপ্তার এড়াতে সতর্ক হয়ে চলছেন।
সোমবার এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, সংবাদপত্রের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন সিলিন্ডার গাড়ি ও জরুরি ওষুধ পরিবহন অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে।
বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধে সারাদেশে পণ্যবাহী গাড়ি ও বাস চালানোর ঘোষণা দিয়ে নিরাপত্তা চেয়েছে পরিবহন মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। একই সঙ্গে যেসব গাড়ি ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, সেগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণের দাবিও জানানো হয়েছে। সোমবার সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মালিক-শ্রমিকদের যৌথসভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে সংগঠনের মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।