বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির আপ্রাণ চেষ্টা করেও তেমন সাড়া পায়নি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। তবে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকার উভয়েরই শীর্ষ মহল মনে করছেন বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেই দলটির ওপরেই ভারতকে এখন আস্থা রাখতে হবে।
দিল্লিতে বিজেপির একজন এমপি তথা জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাজনীতির মতোই কূটনীতিতে স্থায়ী বন্ধু বা স্থায়ী শত্রু বলে কিছু হয় না। বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতাই এই দুপক্ষকে কাছাকাছি আনতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
তিনি আরও বলছেন, প্রধানত দুটো কারণে এতদিনকার শীতল সম্পর্ক পেরিয়ে এসে বিএনপি ও ভারতের মধ্যে এখন একটা কার্যকরী ‘ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ’ গড়ে তোলা সম্ভব বলে ভারতের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। প্রথম কারণটা হলো— বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচন যখনই হোক, তাতে বিএনপির জয়ের ভালো সম্ভাবনা আছে। আর বিএনপি এটা খুব ভালো করেই জানে, বিরোধী দলে থাকাকালীন যেভাবে ভারত-বিরোধিতার রাজনীতি করা যায়, বাংলাদেশের ক্ষমতায় এলে ভারতের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক নিয়ে দৈনন্দিন কাজকর্মও চালানো মুশকিল। সেই বাস্তবতা থেকেই বিএনপিরও ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করার তাগিদ থাকবে।
তবে দ্বিতীয় কারণটাই ভারতের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর সেটা হলো—বিশেষ করে গত এক মাসে যেভাবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির নানা ক্ষেত্রে গুরুতর মতপার্থক্য ও বিরোধ দেখা যাচ্ছে, তার জেরে ওই দুই দলের মধ্যে পাকাপাকিভাবে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়াটা ‘নেহাত সময়ের অপেক্ষা’ বলেই মনে করছে দিল্লি। আর জামায়াত ও বিএনপির এই বিচ্ছেদই ভারতের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগের পথ প্রশস্ত করবে বলে তারা ধারণা করছেন।
বিজেপির ওই শীর্ষস্থানীয় নেতা বলছিলেন, ‘জামায়াতের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতাদর্শ আমাদের কাছে এতটাই অগ্রহণযোগ্য যে তাদের সঙ্গে যারা রাজনৈতিকভাবে আছে, তাদের সঙ্গেও ভারতের বন্ধুত্ব স্থাপন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ দেখে এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে বিএনপি ও জামায়াত আর কিছুতেই একসঙ্গে থাকতে পারবে না।’