বিগত এক যুগ ধরে রাজনীতি ছিলো না গণমুখি মানুষের রাজনীতি। টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন কেনা, দিনের ভোট রাতে করা, অনির্বাচিত হয়েও সংসদে যাওয়া—এমন ধরনের রাজনীতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপি'র উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

শুক্রবার (৪ এপ্রিল) রংপুর নগরীর কেরামতিয়া মসজিদে জুমার নামাজের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

সারজিস আলম বলেন, "আমরা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জনগণের কাছে ফিরে যেতে চাই। সরাসরি জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে সংসদে যেতে চাই। আজ থেকে আমরা সেই সাংগঠনিক সফর শুরু করেছি। এই সফরের মাধ্যমে মাঠে, অলিগলিতে মানুষের কাছে গিয়ে তাদের চাওয়া-পাওয়া শুনতে চাই। আমরা জনগণের কাছ থেকে জানতে চাই, তারা কী চায়। জনগণের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে, তাদের ভোটের মাধ্যমে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করাই আমাদের লক্ষ্য।"

বাজেট নিয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে সারজিস আলম বলেন, "বিগত ১৬ বছরে সকল বাজেট ছিলো অঞ্চলভিত্তিক। বেশিরভাগ বাজেট দক্ষিণবঙ্গে গেছে। উত্তরবঙ্গ শুধুমাত্র দিয়েই গেছে। এই অঞ্চলে ফসল থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদিত হয়, তবে সঠিকভাবে পাওয়ার পরিমাণ খুবই কম। তাই আমরা আশা করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উত্তরবঙ্গের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করবে। আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই, কারণ বৈষম্য করে, অন্যায় করে যে বেশিদিন টিকে থাকা যায় না, তার উদাহরণ হলো খুনি হাসিনা।"

প্রার্থী মনোনয়নের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সাংবাদিকের প্রশ্নে সারজিস আলম বলেন, "রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপি মাত্র এক মাসের পুরনো। তাই সারাদেশে প্রার্থী মনোনয়নে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া। আমরা সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। যারা নতুন বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে, তরুণদের নেতৃত্ব পছন্দ করে, সৎ ও যোগ্য মানুষকে আমরা মনোনয়ন দিতে চাই। সেই লক্ষ্য নিয়ে ঈদের পর সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হবে। আমরা সব ধরনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণে প্রস্তুত।"

সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিষয়ে সারজিস আলম বলেন, "প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় আমাদের দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম এক মাসের মধ্যে শুরু হবে। আমাদের সারাদেশে অনেক সমর্থক এবং শুভাকাঙ্খী রয়েছেন। আমরা ২৪ সালের স্পিরিটকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।"

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সারজিস আলম বলেন, "প্রতিটি রাষ্ট্রের মধ্যে আন্তঃদেশীয় সম্পর্ক ও আদান-প্রদান রয়েছে। বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করে অনেক দেশ ব্যবসা-বাণিজ্য করছে, যা প্রাচীন ঐতিহ্য হিসেবে চলে আসছে। তবে এটি সমতার ভিত্তিতে হতে হবে, একক নিয়ন্ত্রণে নয়। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক থাকবে, তবে তা হবে শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক সম্পর্কের মাধ্যমে। যদি কেউ ডমিনেট করার চেষ্টা করে, তবে আমরা তা প্রতিরোধ করবো। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, আমেরিকা—এই সম্পর্কগুলো সমান সম্মান ও সহযোগিতার ভিত্তিতে হবে, যা বাংলাদেশের ও বিশ্বব্যাপী অগ্রগতি নিশ্চিত করবে।"

এ সময় সারজিস আলম উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী কেরামতিয়া মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন এবং মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। তাঁর সঙ্গে এনসিপির অন্যান্য নেতাকর্মী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।