ছবিঃ সংগৃহীত।
গতকাল (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রীতি ও মতবিনিময় সভায় দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা জামায়াতের কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ
জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে এখনও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এই পরিস্থিতি কেন?
তার মতে, হিন্দু সম্প্রদায়ের ভেতরে কিছুটা হীনমন্যতা কাজ করে এবং নেতৃত্বের অভাবও রয়েছে। কিন্তু সেই শূন্যতা পূরণ করছে জামায়াতে ইসলামী। তিনি বলেন, যে কাজ হিন্দু
সম্প্রদায়ের নেতারা করতে পারেনি, সেটি আজ জামায়াতে ইসলামী
করছে। তারা ভোট বা ক্ষমতার প্রত্যাশায়
নয়, নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
তিনি
আরও বলেন, জামায়াতের দুইজন সাবেক মন্ত্রী ছিলেন, যারা যে সততা ও
আদর্শের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা নজিরবিহীন। হিন্দু
সম্প্রদায়ের অনেকেই নিজেকে আজ জিম্মিদশা থেকে
মুক্ত মনে করছে। তার মতে, সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সংরক্ষিত আসন এবং পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা হওয়া জরুরি।
সভায়
আরও বক্তব্য রাখেন হিন্দু মহাজোটের সভাপতি দীনবন্ধু রায়। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী কখনো কোনো বাড়ি দখল করেনি, বরং যারা নিজেদের হিন্দুদের পক্ষের দাবি করে, তারা অনেক বাড়ি দখল করেছে। এই দ্বিচারিতা বন্ধ
হওয়া দরকার। সংসদে সংখ্যানুপাতিক আসন বরাদ্দের প্রস্তাবও তিনি দেন।
বাংলাদেশ
পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের
পরে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের পাশে দাঁড়িয়েছিল, যা হিন্দু সম্প্রদায়কে
সাহস জুগিয়েছে। জামায়াতের আমির ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন,
তা অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল। তিনি বলেন, আমরা চাই, ভবিষ্যতেও জামায়াত আমাদের সঙ্গে থাকুক। তবে তিনি মনে করিয়ে দেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের আটটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি রয়েছে, যেগুলোকে নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি
আরও বলেন, ২০১৮ সালে যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তাদের ইশতেহারে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাঁচটি দাবি অন্তর্ভুক্ত ছিল, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। ২০২৪ সালের নির্বাচনেও একই দাবি ছিল, কিন্তু সেগুলোরও কোনো বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। গত ৫৩ বছরে
যত হামলা হয়েছে, তার কোনো বিচার হয়নি। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির
কারণেই হিন্দুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
তিনি
একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে বলেন, মন্দিরে কোনো মুসলমান হামলা করেনি। ৫ আগস্টের পর
অনেক মন্দিরে এবং বাড়িতে হামলা হয়েছে, কিন্তু হামলাকারীরা মুসলমান নয়, মাদ্রাসার প্রিন্সিপালও নয়। কারা হামলা করেছে সবাই জানে।
বৌদ্ধ
সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের অনুপম বড়ুয়া। তিনি বলেন, জামায়াতের আমির যেসব বক্তব্য দেন, তা এই দেশের
মানুষকে জাগিয়ে তোলে, নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখায়।
সভায়
পুলিশের সাবেক ডিআইজি এবং সিদ্ধেশ্বরী সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি নির্বাক চন্দ্র মাঝি বলেন, ৫ আগস্টের পর
আমরা যেন এক নতুন বাংলাদেশ
পেয়েছি। জামায়াত নেতা-কর্মীরা অভয় দেওয়ার কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ আবারও স্বস্তিতে বসবাস করতে পারছে। তিনি বলেন, জামায়াত-শিবিরের কেউ চাঁদাবাজি করে না, মাদকসেবী নয়—এই কথা
বলার কারণেই হয়তো তার পদোন্নতি হয়নি, এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সে সম্পর্কে রিপোর্ট
করেছিল।
অনুষ্ঠানে
আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া,
বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের নেতা লিটন কুমার বড়ুয়া, ব্যাপ্টিস্ট চার্চের বাস্তুর তপন রায়, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের স্বরুপানন্দ ভিক্ষু, শুভাশিস ও পল্টন দাস
প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে
উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এবং মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
সভার সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
অনুষ্ঠানে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জামায়াতের ভূমিকা ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশে তাদের অবস্থান নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh