গণসংহতি
আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি ঐক্যের ভিত্তি, যা পরবর্তীতে ১৯৭২
সালের সংবিধানে অস্বীকার করা হয়েছে। আজ (২৭ এপ্রিল) জাতীয়
সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জোনায়েদ
সাকির নেতৃত্বে গণসংহতি আন্দোলনের ১০ সদস্যের একটি
প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ
নেয়। সংলাপের শুরুতে তিনি মুজিবনগর সরকারের ঘোষিত অঙ্গীকার— সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার তুলে ধরেন এবং বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব প্রতিশ্রুতি ও আদর্শ ছিল,
তার ভিত্তিতে দেশ গঠিত হয়নি।
তিনি
বলেন, সংবিধান রাষ্ট্র পুনর্গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, কিন্তু সেই সংবিধানেই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন জাতীয় ঐক্য উপেক্ষিত হয়েছে। তার মতে, জনগণের হাতে ক্ষমতা না থাকলে রাষ্ট্রে
কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী শাসন
গড়ে ওঠে, যা বর্তমানে বাংলাদেশের
বাস্তবতায় প্রতিফলিত হয়েছে।
সাকি
অভিযোগ করেন, স্বাধীনতার পর থেকে রাষ্ট্র
একদল লুটেরার হাতে বন্দি থেকেছে, যারা শাসন টিকিয়ে রাখতে জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার পেছনে জনগণের সম্মতি ছাড়াই রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি
বলেন, বর্তমান রাষ্ট্র কাঠামো স্বৈরতান্ত্রিক। এর ফলে শেখ
হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ একটি ফ্যাসিবাদি
রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি কীভাবে জনগণকে বিভক্ত করে সামাজিক সংকট তৈরি করা হয়েছে এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে গুম, খুন ও নির্যাতনের আশ্রয়
নেওয়া হয়েছে।
জোনায়েদ
সাকি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে লাখো মানুষের আত্মত্যাগের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, সেই ত্যাগের ভিত্তিতেই রাষ্ট্র গঠিত হলেও বর্তমানে আগস্ট মাসে গুম-খুনের মাধ্যমে সেই ঐতিহাসিক সত্যকে আবারও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জুলাইয়ের
গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তা একটি নতুন
রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করেছে, যেখানে সংস্কারের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্যের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। তার মতে, এই ঐকমত্যের মাধ্যমেই
রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও নতুন রাজনৈতিক
বন্দোবস্তে পৌঁছানো সম্ভব।
সংলাপে
আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম
মজুমদার, এবং ড. ইফতেখারুজ্জামান।