“শপথ শপথ শপথ চাই, ইশরাক ভাইয়ের শপথ চাই”, “মেয়র নিয়ে টালবাহানা, সহ্য করা হবে না”, “চলছে লড়াই চলবে, ইশরাক ভাই লড়বে”—এমন স্লোগানে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দিনভর উত্তাল ছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) নগরভবন।

সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমর্থক ও নগর ভবনের কর্মচারীরা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা ১৫তম দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পুরো নগর ভবনের কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়ে।

দুপুর সোয়া ২টার দিকে ইশরাক হোসেন নিজেই নগরভবনে উপস্থিত হন। তাকে কাছে পেয়ে আরও উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন আন্দোলনরত কর্মচারী ও সমর্থকরা। তখন পুরো এলাকা তাদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।

এদিন ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ছোট ছোট মিছিল এসে জমা হয় নগরভবনে। আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে নগর ভবনের সর্বস্তরের কর্মচারীরা সকাল থেকেই সব ধরনের কাজ বন্ধ রাখেন। ভবনের প্রতিটি ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে তারা জানান, “ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত কোনো কাজই হবে না।”

শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্য মোহন বলেন, “আমাদের একটাই দাবি—ইশরাক ভাইকে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব দিন। না হলে নগর ভবনের কোনো কাজ চলবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব না পান, ততক্ষণ আমরা কোনো দাফতরিক কার্যক্রমে অংশ নেবো না।”

ঢাকাবাসীর সমন্বয়ক ও সাবেক সচিব মশিউর রহমান বলেন, “এই আন্দোলন পুরোপুরি যৌক্তিক। অন্তর্বর্তী সরকার নাটক করছে। আমরা কোনো নাটকের ধার ধারি না। ইশরাকের প্রাপ্য দায়িত্ব তাকে বুঝিয়ে দিতেই হবে।”

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেন ফল বাতিল চেয়ে একই বছরের ৩ মার্চ মামলা করেন।

গেল মার্চে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল ২৭ মার্চ সেই ফল বাতিল করে এবং ইশরাককে বৈধ মেয়র ঘোষণা করে। ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে গেজেট প্রকাশ করে।

তবে ১৪ মে হাইকোর্টে রিট করে দাবি ওঠে, ইশরাককে যেন শপথ না পড়ানো হয়। এ রিটের জেরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আইনগত জটিলতার কথা বলে শপথ অনুষ্ঠান স্থগিত রাখে।

এ অবস্থায় ১৫ মে থেকে শুরু হয় ইশরাক সমর্থকদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি, যা নগর ভবনের কার্যক্রম কার্যত স্থবির করে দেয়।

পরবর্তী শুনানি শেষে হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার রিট খারিজ করে দেয়। আদালতের এই আদেশের পর বিকেলে ইশরাক হোসেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাকে শপথ পড়ানোর দাবি জানিয়ে আন্দোলন সাময়িক স্থগিতের ঘোষণা দেন।