রোববার (১ জুন) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার বিচারপতির একটি বেঞ্চ এই রায় দেন। এর ফলে এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা আইনি লড়াইয়ের অবসান ঘটলো। আদালতের এ রায়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন আবারও বৈধতা পেল।

রায় ঘোষণার পর জামায়াতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির জানান, আদালতের রায়ের মাধ্যমে হাইকোর্টের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায় বাতিল হয়েছে এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, "এক যুগের আইনি লড়াইয়ের অবসান হলো। বহুদলীয় গণতন্ত্র ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমরা আশা করি, এই রায়ের মাধ্যমে একটি প্রাণবন্ত সংসদ গঠনের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যেখানে সবাই তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।"

তিনি আরও বলেন, আপিল বিভাগের রায়ের শর্ট অর্ডার তারা আগামীকালের মধ্যে পাওয়ার আশা করছেন। সেই আদেশ নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়ে পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে। নিবন্ধনের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রতীকের বিষয়টিও কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।

এর আগে, ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট এক রায়ে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে। এরপর ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত আপিল করলেও মূল আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় ২০২৩ সালের নভেম্বরে আপিল বিভাগ ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ বলে আপিল খারিজ করে দেয়। ফলে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে এবং দলটির নিবন্ধন বাতিল থাকে।

পরবর্তীতে দলটি পুনরায় আপিল পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করে। সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর সেই আবেদন গ্রহণ করে এবং দলটিকে আইনগতভাবে লড়াইয়ের সুযোগ দেয়। ২০২৫ সালের ১২ মার্চ থেকে আপিল শুনানি শুরু হয় এবং ১৪ মে শুনানি শেষ হয়। ১ জুন দিনটি রায় ঘোষণার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।

রায়ের সময় আদালতে জামায়াতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট শিশির মনির এবং ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, মোবারক হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল এবং উত্তর সিটি আমির মো. সেলিম উদ্দিন।