বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সম্প্রতি এক টকশোতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন প্রসঙ্গে একগুচ্ছ তীব্র ও স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, “নির্বাচিত একটি খুব খারাপ সরকারও অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো।” তার মতে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার জবাবদিহির আওতায় থাকে, অথচ অনির্বাচিত সরকারে সেই দায়বদ্ধতা থাকে না। তিনি দাবি করেন, দেশের সাধারণ মানুষ, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল এমনকি আন্তর্জাতিক মহলও একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, কেবলমাত্র সরকারই তা চায় না।
তিনি কটাক্ষ করে বলেন, “ড. ইউনূস এবং তার কিছু পোষা স্টুডেন্ট ছাড়া সবাই নির্বাচন চায়।” তার মতে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তিনি মনে করেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে একটি বিকৃত রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি করতে চায়, যাতে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার বাধাগ্রস্ত হয়।
টকশোতে তিনি ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সময়ের প্রসঙ্গ টেনে আনেন এবং বলেন, রাজনীতিবিদদের হেয় করার যে প্রবণতা তখন দেখা গিয়েছিল, বর্তমানে তা আবার নতুনভাবে ফিরে এসেছে। তার ভাষায়, “ওয়ান-ইলেভেনের সময় যেমন রাজনীতিবিদদের চরিত্র হননের চেষ্টা হয়েছিল, এখনো সেভাবেই রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।” এতে রাজনৈতিক পরিবেশ ক্রমেই বিষাক্ত হয়ে উঠছে বলে তিনি মনে করেন।
আন্দোলনের সময় নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে রুমিন বলেন, “যখন আমরা আন্দোলন করেছি, তখন অনেকেই ছাত্রলীগ হয়ে লুকিয়ে ছিল। সেই সময় নুরুল হক নুর মার খেয়েছে, আমি সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, সাকি ভাই আন্দোলন করেছে—আমরা এসব দিন পার করে এসেছি।” তিনি অভিযোগ করেন, সেই সময় যারা পিছনে ছিল, আজ তারাই উল্টো তাদের ভারতের দালাল কিংবা ‘র’-এর এজেন্ট বলে আখ্যায়িত করছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তার ভাষ্য, সরকার চিত্রটি সাজিয়ে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে। “আশিক চৌধুরীর মতো ব্যক্তিকে দিয়ে সুন্দর প্রেজেন্টেশন করানো হচ্ছে,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাস্তবতা একেবারে ভিন্ন। প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনের বরাতে তিনি উল্লেখ করেন যে, গত বছরের তুলনায় বিনিয়োগ ২৬ শতাংশ কমেছে। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে, দেশের অর্থনীতির ভেতরে গভীর সংকট চলছে।
সবশেষে রুমিন ফারহানা জোর দিয়ে বলেন, “নির্বাচনহীনতা কখনোই স্থায়ী সমাধান হতে পারে না।” একটি অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই বর্তমানে দেশের স্থিতিশীলতা এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের একমাত্র পথ বলে তিনি মনে করেন।