সাংবাদিকরা এক অনিশ্চিত জীবনে বাস করেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
শনিবার (২৩ আগস্ট) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্ট এ কথা বলেন তিনি।
হাসনাত লিখেছেন, ‘অনেক পরিশ্রমী সংবাদকর্মীর সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, এর পেছনে রয়েছে গভীর কাঠামোগত সংকট। দেশে টেলিভিশনের জন্য আলাদা কোনো আইন না থাকায় সরকার চাইলে যে কোনো সময় চ্যানেল বন্ধ করে দিতে পারে। অনলাইন ও টিভি মাধ্যমে কোনো নির্ধারিত বেতন কাঠামো নেই। ঢাকায় অনেক সাংবাদিক মাসে মাত্র ৮-১০ হাজার টাকা পান। আর মফস্বলের অধিকাংশ সাংবাদিক কোনো বেতনই পান না, বরং অনেক সময় আইডি কার্ড পাওয়ার জন্য উল্টো টাকা দিতে হয়।
তিনি বলেন, ‘পত্রিকাগুলো এখনো ২০১৩ সালের অষ্টম ওয়েজবোর্ড অনুসরণ করে, সেটিও বাধ্যতামূলক নয়। ফলে অধিকাংশ মালিক তা মানেন না। যেখানে বেতন দেওয়া হয়, সেখানেও ৪-৫ মাস বকেয়া থাকা অস্বাভাবিক নয়। চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। মালিক চাইলে যে কোনো সময় ছাঁটাই করতে পারেন। সাংবাদিকদের ওপর হামলা বা হত্যার বিচার হয় না, ফলে তারা এক অনিশ্চিত জীবনে বাস করেন।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে সবচেয়ে বড় বাধা রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপ। বিশেষ করে ডিজিএফআইয়ের প্রভাব স্পষ্ট। তাদের নির্দেশ না মানলে বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যায়, মালিকদের অন্যান্য ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হয়, নানান ধরনের হয়রানির মুখে পড়তে হয়। তাই মালিকরা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে বাধ্য হন।’
‘আর সাংবাদিকদের দিয়ে সরাসরি রাজনৈতিক দালালি করানো হয়। এর সঙ্গে রয়েছে করপোরেট নেক্সাস। বিশেষ করে বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া সন্ত্রাস অনেককেই আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। (এই মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কথা বলায় রিপোর্ট করিয়ে এই আইডিও রেসট্রিক্টেড করে দেয়।)’ যোগ করেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার করা হয় সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট বিভুরঞ্জন সরকারের মরদেহ।
৭১ বছর বয়সী বিভুরঞ্জন সরকার দৈনিক আজকের পত্রিকায় জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরোনোর পর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
নিখোঁজের আগে বৃহস্পতিবার (২১ অগাস্ট) সকাল সোয়া ৯টায় খোলা চিঠি শিরোনামে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বিভুরঞ্জন সরকার একটি লেখা মেইল করেন। ফুটনোটে তিনি লেখেন, জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন। এই ফুটনোটে তিনি তার জীবনের নানান অপ্রাপ্তির কথা লিখে যান। বিভুরঞ্জন সরকারের মর্মান্তিক মৃত্যুতে দেশের গণমাধ্যমে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একই সঙ্গে তার শেষ লেখায় উঠে আসা বিষয় নিয়ে নানান ধরনের আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।