× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

চীনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি নিরাপদ থাকছে না মার্কিন ভূখণ্ড

সিরাজুল ইসলাম

০৯ জানুয়ারি ২০২২, ০২:৫১ এএম

দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকা তার নিজ ভূখণ্ড থেকে যুদ্ধটাকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, সাগরে-বন্দরে, দ্বীপে-অন্তরীক্ষে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে, সাবমেরিন আর যুদ্ধজাহাজকেন্দ্রিক  রণকৌশল তৈরি করে এবং সময়ে সময়ে বিভিন্ন জনপদে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে সারাবিশ্বকে সেখানে ব্যস্ত রেখে আমেরিকা তার নিজের নিরাপত্তা ঠিক রেখে চলেছিল। যুগের পর যুগ আমেরিকার সরকারগুলোর এই একই সামরিক নীতি অনুসরণের ফলে মার্কিন ভূখণ্ড এবং সেখানকার জনগণ একদম নিরাপদেই ছিল। কিন্তু তাদের সে নিরাপত্তা আর মনে হয় অতটা অটুট থাকছে না। নির্বিঘ্নে মার্কিন মুল্লুকে ঘুম দেয়ার দিন শেষ হতে চলেছে! যাদের কারণে আমেরিকার এ ঘুম হারাম হতে চলেছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এশিয়ার প্রধান সামরিক শক্তি চীন। দেশটি এরইমধ্যে অর্থনৈতিক শক্তিতে আমেরিকাকে টপকে বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। এখন সম্ভবত সময় এসেছে তাদের সামনে- আমেরিকার সামরিক শক্তি মোকাবিলার। সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে- এরইমধ্যে বেইজিং এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে এবং সে লক্ষ্য সামনে রেখে নানা কর্ম-পরিকল্পনা ও তৎপরতা শুরু করেছে।

সামরিক তৎপরতা দেখে যদিও খুশি হওয়ার কিছু থাকে না কারণ সামরিক তৎপরতার চূড়ান্ত পরিণতি হয়ে ওঠে যুদ্ধ-বিগ্রহ আর বহু মানুষের জীবনহানি। কিন্তু যখন এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে আমেরিকা খেয়াল-খুশি মতো অন্যায় অবিচারকে নিয়মে পরিণত করে, দেশে দেশে একের পর এক যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, মানবতাকে পদদলিত করে তখন তার সেই বলদর্পিতা মোকাবিলায় যদি কেউ এগিয়ে আসে তখন শুধু খুশি হওয়া নয় বরং স্বস্তির নিশ্বাঃস ফেলা যায়। চীনের সামরিক তৎপরতা এবং সমর শক্তি বাড়ানোর জোরদার প্রচেষ্টাকে সে কারণে স্বাগত জানানোর সুযোগ রয়েছে। এছাড়া, চীনের এই সামরিক শক্তি বাড়ানো এবং দেশটির তৎপর হয়ে ওঠার কারণে বিশ্বে নানা ক্ষেত্রে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সহজ হবে।

চীন সামরিক খাতে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে, নিজ বাহিনীকে আধুনিকায়ন করছে এবং এরইমধ্যে আঞ্চলিক বড় শক্তিতে পরিণত হয়েছে। তবে বেইজিংয়ের সামরিক তৎপরতা নিয়ে আলোচনার আগে চীনকে ঘিরে আমেরিকার কর্মকা- তুলে ধরাটা জরুরি; তাতে চীনের নেয়া পদক্ষেপগুলোর যৌক্তিকতা বোঝা সহজ হবে।

চীনকে ঘিরে ফেলছে আমেরিকা: চীন এশিয়ার বড় সামরিক শক্তি এবং দিন দিন দেশটি এ অঞ্চলে মার্কিন সামরিক শক্তি ও অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিনীদের বিনা চ্যালেঞ্জে দাপিয়ে বেড়ানোর দিন শেষ হয়ে আসছে। সে কারণে আমেরিকাও তৎপর হয়ে উঠছে। চীনকে মোকাবিলার জন্য বহুদিন আগে থেকে তাদের নানা পরিকল্পনা ও কর্মতৎপরতা ছিল। এখন নতুন করে চীনকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে।

চীনকে ঘিরে ফেলার বিষয়ে মূল পরিকল্পনার মধ্যে ছিল ২০২০ সালের মধ্যে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর উপস্থিতি শতকরা ৫০ থেকে ৬০ ভাগে বাড়ানো। বর্তমানে সারাবিশ্বে ২৯০টি যুদ্ধাজাহাজের মধ্যে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে ৫০টি। সামরিক শক্তি বাড়িয়ে ২০২০ সালের মধ্যে এ অঞ্চলে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা ৬৭টিতে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল আমেরিকা। আমরা সবাই জানি, চীনের সঙ্গে এ মুহূর্তে আমেরিকার সামরিক উত্তেজনা আগের যেকোনো সময়র চেয়ে বেশি। মার্কিন সরকার তার পরিকল্পনা মতো এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এরইমধ্যে যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি বাড়িয়েছে। এতে রয়েছে বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, ক্রুজার, ডেস্ট্রয়ার, সাবমেরিন এবং লিটোরাল কম্ব্যাট শিপ যা বিশেষত উপকূলীয় যুদ্ধের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে সিঙ্গাপুরে লিটোরাল কম্ব্যাট শিপের একটি স্টেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরইমধ্যে সিঙ্গাপুরের চ্যাঙ্গাই নৌঘাঁটিতে পালা করে এ শিপ মোতায়েন করা হয়।

মার্কিন নৌবাহিনীর মতো বিমান বাহিনীও ঘোষণা দিয়েছে যে, বহির্বিশ্বে তাদের যে উপস্থিতি রয়েছে তার শতকরা ৬০ ভাগ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মোতায়েন করা হবে। চীন মোকাবিলার উদ্দশ্যে ওই এলাকায় অস্ট্রেলিয়ার মেরিন সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এর সঙ্গে মোতায়েন করা হয়- জঙ্গিবিমান, ট্যাংকার এবং কিছু পয়েন্টে বোমারু বিমান। সিঙ্গাপুরের চ্যাঙ্গাই বিমানঘাঁটি, থাইল্যান্ডের কোরাত ঘাঁটি, ভারতের ত্রিভান্দ্রুম ঘাঁটি এবং ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার কুবি পয়েন্ট এবং পুয়েত্রা প্রিন্সেসা ঘাঁটিতে জঙ্গিবিমান মোতায়েন করার পরিকল্পনা নেয় আমেরিকা।

জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক জোরদার: ২০১৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এশিয়ার চারটি দেশ সফরের সময় ফিলিপাইনের সঙ্গে ১০ বছরের জন্য একটি চুক্তি করেন যার আওতায় আমেরিকা অজ্ঞাতসংখ্যক ক্যাম্প ও ঘাঁটি ব্যবহারের সুযোগ পায় যেখানে তারা নতুন করে জঙ্গিবিমান ও যুদ্ধাজাহাজ মোতায়েন করে। এদিকে, পূর্ব চীন সাগর নিয়ে চীন ও জাপানের মাঝে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই টোকিওকে কিছু উভচর সামরিক যান দিয়েছে আমেরিকা। জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আমেরিকা থেকে ৫২টি উভচর যান কেনার কথা জানিয়েছিল। কয়েক দশক ধরে জাপান ও চীনের মধ্যে পূর্ব চীন সাগরের দিয়াউয়ু বা সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে চলমান বিরোধে জাপানের পক্ষে প্রকাশ্য সমর্থন ঘোষণা করেছে আমেরিকা। একইভাবে তাইওয়ান নিয়েও আমেরিকা সরাসরি চীনের স্বার্থের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে এবং বেইজিং যদি তাইওয়ানের ওপর হামলা চালায় তাহলে আমেরিকা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে বলে হুমকি দিয়েছে। এছাড়া, অস্ট্রেলিয়াকে ফ্রান্স অন্তত আটটি সাবমেরিন সরবরাহ করার চুক্তি করেছিল। কিন্তু আমেরিকা ও ব্রিটেন সম্প্রতি সেই চুক্তি থেকে অস্ট্রেলিয়াকে অনেকটা জোর করে বের করে এনেছে এবং ব্রিটিশ ও মার্কিন সরকার অস্ট্রেলিয়াকে পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন নির্মোণে প্রযুক্তি হস্তান্তরের চুক্তি করেছে। এ নিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে ওই তিন দেশের সম্পর্কে মাাত্মক অবনতি হয়েছে। সেটি অবশ্য ভিন্ন বিষয়, তবে অস্ট্রেলিয়া সামরিক দিক দিয়ে আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং চীনকে মোকাবিলার ক্ষেত্রে আরো একটি পরমাণু শক্তিধর দেশকে আমেরিকা সঙ্গে পাবে। এভাবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসারীয় অঞ্চলে আমেরিকা দিন দিন চীনের সঙ্গে বিপজ্জনক সামরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে।
গুয়াম ঘাঁটির উন্নয়ন: চীনকে লক্ষ্য করেই দেশটির অনেকটা দোরগোড়ায় প্রশান্ত মহাসাগরে কৌশলগত গুয়াম ঘাঁটির উন্নয়ন ঘটাচ্ছে আমেরিকা। সেখানে আনুষ্ঠানিক নতুন একটি মেরিন কোর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জাপানের ওকিনাওয়া থেকে ৫,০০০ মেরিন সেনাকে সেখানে নেয়ার কথা।

উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এখনো আমেরিকা ও চীনের সামরিক ব্যয়ের মধ্যে বিরাট ব্যবধান রয়েছে। সামরিক খাতে চীনের চেয়ে অন্তত পাঁচগুণ বেশি ব্যয় করে আমেরিকা। মার্কিন সামরিক খাতে ব্যয় শীর্ষ পর্যায়ের সামরিক ব্যয়ের ১৪টি দেশের সম্মিলিত সামরিক ব্যয়ের চেয়েও বেশি। এছাড়া, আমেরিকার শক্তি আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায় যখন চীনের প্রতিবেশি দেশগুলো যেমন- জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও ফিলিপাইনের মতো দেশ পেন্টাগনের সঙ্গে মিত্র হিসেবে যুক্ত হয়। এ পরিস্থিতিতে আমেরিকা অনেক বেশি আগ্রাসী অবস্থান নিয়েছে চীনকে কেন্দ্র করে। উস্কানিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে চীনা উপকূল এবং তাইওয়ান প্রণালীতে মাঝেমধ্যেই বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ও নজরদারি বিমানের ফ্লাইট পাঠাচ্ছে আমেরিকা। মার্কিন নৌবাহিনী নিয়মিতভাবেই তাইওয়ান প্রণালীতে ডেস্ট্রয়ার পাঠিয়ে থাকে।    
আমেরিকার মোকাবিলায় কি করছে চীন?: চীন দীর্ঘদিন ধরে তার সামরিক ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নিতান্তই আত্মরক্ষামূলক রেখেছিল। কিন্তু শুধুমাত্র আত্মরক্ষামূলক পরিকল্পনা নিয়ে বড় শক্তি বিশেষ করে আমেরিকাকে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। কারণ চীন যতই শান্তিপূর্ণ পরিকল্পনা নিয়ে তার সামরিক নীতি অনুসরণ করুক না কেন- বিপরীতে আমেরিকা তার আগ্রাসী নীতি ঠিকই এগিয়ে নিয়েছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে চীনকে ঘিরে ফেলার জন্য সাগরে-মহাসাগরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন বাড়িয়েছে। এ অবস্থা মোকাবিলার জন্য দৃশ্যত চীন তার আগের সামরিক নীতি থেকে সরে এসেছে এবং চীন এখন যে সামরিক নীতি নিয়েছে সেটাই অনেক বেশি বাস্তবসম্মত বলে সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

সাবমেরিনে বসানো হচ্ছে পরমাণু ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র: চীন এখন তার সাবমেরিনগুলোতে দীর্ঘ পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বসাচ্ছে বলে মার্কিন কংগ্রেশনাল রিপোর্টে বলা হয়েছে। এর ফলে শিগগিরই চীনের সমুদ্রভিত্তিক পরমাণু অস্ত্রআমেরিকাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারবে। চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক সিনেটের পর্যালোচনা কমিশনের পেশ করা রিপোর্ট মতে- চীনের জিন ক্লাস সাবমেরিনে অন্তত এক ডজন জেএল-২ ক্ষেপণাস্ত্র বসানোর কথা। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৭,৩৫০ কিলোমিটার এবং এগুলোকে যদি হাওয়াই দ্বীপের পশ্চিম অথবা পূর্ব পাশ থেকে ছোঁড়া হয় তাহলে আমেরিকার ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতেই আঘাত হানতে পারবে চীন। বর্তমানে চীন শুধু ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আমরিকায় হামলা চালাতে সক্ষম। তবে, জিন ক্লাস সাবমেরিনে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র বসানো হলে তা হবে চীনের জন্য বাড়িত সুবিধা। এছাড়া, চীন ভূমি থেকে হামলার জন্য সিজে-১০ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, সাবমেরিনভিত্তিক পরমাণু অস্ত্রের মজুত গড়ে তোলার কারণে আমেরিকা চীনকে পরমাণু হামলার সাহস পাবে না; উল্টো চীনের এ পদক্ষেপের কারণে মার্কিন ভূখ- তার নিরাপত্তা হারাতে বসেছে। ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবগুলোই এখন মোটামুটি চীনা ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায়।

আছে ১৪ হাজার কি.মি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র: সম্প্রতি এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, ১৪ হাজার কিলোমিটার পাল্লার নতুন প্রজন্মের আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে চীন। এ ক্ষেপণাস্ত্র একসঙ্গে ১০টি পরমাণু ওয়ারহেড বহন করতে এবং আলাদা আলাদা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে। এর ফলে আমেরিকাকে ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় আনার কাজে অনেক দূর এগিয়ে গেছে চীন। একই সঙ্গে বেইজিংয়ের সামনে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়ানোর সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছে। মার্কিন সেনা এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ থেকে উতক্ষেপণের ব্যবস্থা রেখে চীন ডংফেং-৪১ আইসিবিএম বা আন্তঃমহাদেশীয় দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ থেকে উৎক্ষেপণের ব্যব¯’া থাকায় এসব ক্ষেপণাস্ত্রকে উৎক্ষেপণের আগে খুঁজে বের করা ও ধ্বংস করা কঠিন হবে বলেও তারা জানান। ২০১২ সালে জুলাই মাসে ডংফেং-৪১ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় চীন। দেশটিতে বর্তমানে ৫৫ থেকে ৬৫টি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র আছে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে, কোনো কোনো পরমাণু ওয়ারহেড বহনকারী ক্ষেপণাস্ত্র 'ডামি ওয়ারহেড' বসানোর পদ্ধতিও বের করেছে চীন। এ সব ডামি ওয়ারহেড মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত বা ফাঁকি দেয়ার কাজে ব্যবহৃত হবে।

যুদ্ধজাহাজে আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে চীন: কিছুদিন আগে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছিল, আগামী ছয় বছরের মধ্যে চীনা যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা হবে ৩৫১টি। বর্তমানে আমেরিকার কাছে সমুদ্রে মোতায়েনযোগ্য ২৯০টি যুদ্ধাজাহাজ রয়েছে। এ কমিশন তাদের রিপোর্টে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ৬৭টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর কংগ্রেসকে জানিয়েছিল, আগামী এক দশকে চীন বেশ কিছু বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ তৈরি করবে এবং চীনের তৈরি প্রথম বিমানবাহী জাহাজ সম্ভবত এ দশকের দ্বিতীয়ার্ধে সমুদ্রে নামবে। কিš‘ তার আগেই ২০১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর চীনের প্রথম বিমানবাহী রণতরী 'লিয়াওনিং' আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না- চীনা নৌবাহিনীতে বিমানবাহী রণতরী আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয়ায় বেইজিংয়ের যুদ্ধ-ক্ষমতা সর্বাধুনিক পর্যায়ে চলে এসেছে।

মার্কিন এফ-৩৫ বনাম চীনা জে-৩১: আমেরিকা তার আকাশ প্রতিরক্ষা কর্মসূচির আওতায় সর্বাধুনিক এফ-৩৫ জঙ্গিবিমান তৈরি করেছে। এর বিপরীতে চীন তৈরি করেছে স্টিলথ জঙ্গিবিমান জে-৩১। এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন অব চায়না বা এভিআইসি জানিয়েছে, এ বিমানের বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মার্কিন এফ-৩৫ বিমানকে আকাশ থেকেই গুলি করে ভূপাতিত করতে পারবে।  এর পাশাপাশি স্টিলথ জে-টুয়েন্টি জঙ্গিবিমানের সফল পরীক্ষাও করেছে চীন। জে-৩১ হ”েছ চীনে তৈরি দ্বিতীয় স্টিলথ জঙ্গিবিমান। এ সম্পর্কে মার্কিন সেনা সদরদপ্তর পেন্টাগন বলেছে, এসব জঙ্গিবিমান চীনের হামলা এবং আত্মরক্ষার ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ সাহায্য করছে।

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র: শব্দের চেয়ে আটগুণ বেশি গতির ক্ষেপণাস্ত্রের দফায় দফায় পরীক্ষা চালিয়েছে চীন। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, দেশটির কৌশলগত পরমাণু কর্মসূচির অংশ হিসেবে ডাব্লিউইউ-১৪ নামের নতুন এ ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে।

শব্দের চেয়ে দ্রুত গতি বা হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নতুন কিছু নয়। কিন্তু “বুস্ট-গ্লাইড” নামের একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডাব্লিউইউ-১৪’র মতো ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাহায্যে একে প্রতিহত করা প্রায় দুঃসাধ্য ব্যাপার। এ মুহূর্তে হাইপারসনিক অস্ত্রপ্রতিযোগিতায় চীন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে চীনকে নিয়ে আমেরিকা দুশ্চিন্তায়।  

উপরোক্ত সামরিক তৎপরতার আলোকে অনেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে, খুব শিগগিরই চীন বিশ্বে সামরিক শক্তির দিক দিয়ে অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থান চলে যাবে। বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তির দেশ এবং সম্ভাবনাময় সামরিক শক্তি হিসেবে চীন বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে এমন আশাও করে মার্কিন বিরোধী শিবির। চীনা নেতৃত্বের কাছেও বিষয়টি নিশ্চয় পরিষ্কার।

(লেখক- সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক) 

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.