× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্র: মেঘনা তীরে সমুদ্রের প্রতিচ্ছবি

মিনি কক্সবাজার

শাহনাজ পারভীন এলিস

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৩৩ এএম । আপডেটঃ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪:২৩ পিএম

বালুকাময় নদী তীরে দাঁড়িয়ে সমুদ্র সৈকতের আবহ, তপ্ত দুপুরে খোলা আকাশের নিচে নদীর সূর্যের ঝলকানি, আর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার অপূর্ব সুযোগ- এসবই উপভোগ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে চাঁদপুরের মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রে। এ যেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের একখণ্ড প্রতিচ্ছবি। চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা নদী তীরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আদলে গড়ে উঠা এই পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিনই ভিড় করছেন ভ্রমণপিয়াসী হাজারো দর্শনার্থী। মোহনপুর গ্রামের লঞ্চঘাট এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মিঠাপানির এই সৈকত এরই মধ্যে ‘মিনি কক্সবাজার’ হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত হয়েছে।  

সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং বিশেষ দিনগুলোতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়ে সরগরম থাকে গোটা এলাকা। সব বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরদের আনাগোনায় তৈরি হয় প্রাণের উচ্ছ্বাস। দর্শনার্থীদের কেউ কেউ বালুময় মেঘনার তীরে শরীর গড়াগড়ি দিচ্ছেন। কেউবা নদীতে নেমে জলকেলি করছেন। সেলফি তুলেও সময় কাটাচ্ছেন অনেকে। পার্কে দোলনায় মনের আনন্দে দোল খাচ্ছে শিশুরা। রাইডে উঠেও হইহুল্লোড় করছে কিছু শিশু। কেউবা আবার বিনোদন কেন্দ্রের পাশে গড়ে উঠা মার্কেটে কেনাকাটায় ব্যস্ত আছেন। বিনোদনের এই অনিন্দ্যসুন্দর কেন্দ্রটিতে এসে ক্লান্ত-শ্রান্ত পর্যটকেরা যেন খুঁজছেন একটু স্বস্তি এবং নির্মল আনন্দ।

কী রয়েছে এই পর্যটন কেন্দ্রে

ভ্রমণপিপাসুদের জন্য পর্যটন কেন্দ্রের মূল ফটকে রয়েছে 'ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর' লেখা বৃহদাকারের ইলিশের প্রতিচ্ছবি। নদী তীরের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় শতাধিক বিচ বেড বসানো হয়েছে। রয়েছে খোলা মাঠ ও বালু প্রান্তর। মাঠের পাশে রয়েছে চটপটি-ফুচকা, আচার, চকোলেট, চা ও মুড়ি বিক্রেতার ছোট-বড় দোকান। নদীতে নৌকাভ্রমণ, রিভার ড্রাইভ স্পিডবোট, সুইমিংপুলসহ খেলার মাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পাঁচ হাজার আসনের উন্মুক্ত মঞ্চ। কেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য রয়েছে সুন্দর রাস্তা; এর দু’পাশে ও মাঝখানে ফুলের বাগান। এছাড়া শিশু-কিশোরদের জন্য বিভিন্ন রাইড সম্বলিত মিনি থিম পার্ক, মিনি চিড়িয়াখানা, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য হাঁটা ও বসার ব্যবস্থা এবং  এলাকাজুড়ে রয়েছে রকমারি গাছপালা ও বনবনানী। পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার সুবিধার্থে সেখানে ‘শিপ ইন’ নামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি ফাইভস্টার রেস্টুরেন্ট ও পাঁচটি ফাইভস্টার মানের কটেজ রয়েছে। 


রেস্টুরেন্টটিতে একসঙ্গে ৫ থেকে ৬শ’ পর্যটক বসে বুফে এবং বারবিকিউ আইটেমের খাবার খেতে পারবেন।রেস্টুরেন্টের মেন্যুতে- বাংলা,চায়নিজ,ভারতীয়, ইউরোপীয় ও কন্টিনেন্টাল প্রায় সব ধরনের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। 

সন্ধ্যার পর পুরো এলাকায় রয়েছে সুদৃশ্য আলোর ব্যবস্থা। পর্যটন কেন্দ্রের ভেতরে রয়েছে অত্যাধুনিক মার্কেট, ওয়াচ টাওয়ার এবং দূরপাল্লার লঞ্চের জন্য পন্টুনের ব্যবস্থা। 

দর্শনার্থীর অনুভূতি

সম্প্রতি মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক আকতারুজ্জামান। তিনি তার এক সহকর্মীর মাধ্যমে এই পর্যটন কেন্দ্রের খবর পান। জানান, ‘স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে মোহনপুরে গিয়ে কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ আমাদের বেশ ভালো লেগেছে। বিশেষ করে নদীর তীরে বসার সুব্যবস্থা, কক্সবাজারের মতোই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ এবং থাকার জায়গা আধুনিক কটেজের সাথেই রয়েছে সুইমিংপুল ভীষণ ভালো লেগেছে। শিপ ইন রেস্টুরেন্টর পরিবেশটাও বেশ গোছালো; বসার এবং খাবারের ব্যবস্থাপনাও ভালো। এছাড়া নদীতে স্পিডবোটে ঘোরার ব্যবস্থা, কেন্দ্রের ভেতরে বাচ্চাদের জন্য বিনোদনের কর্নার, সৌদি আরবের খেজুর বাগান ও বাহারি ফুলের বাগান ভালো লেগেছে। আমার বাচ্চারাও খুব এনজয় করেছে। কেন্দ্রের ভেতর হকার কিংবা ভিক্ষুকদের উৎপাত নেই। ব্যবস্থাপনার মান অনুযায়ী সেখানে খরচটাও আমার মনে হয়েছে মধ্যবিত্তের আওতার মধ্যে।’

টিকিট কাউন্টার ও কার পার্কিং 

মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরের বাঁ’পাশেই রয়েছে টিকিট কাউন্টার রয়েছে। জনপ্রতি প্রবেশ ফি ১০০ টাকা। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে কেন্দ্রের ভেতর প্রবেশ এবং বের হওয়ার হওয়ার জন্য রয়েছে আলাদা গেটের ব্যবস্থা। নদীর পাড় ঘেঁষে ছাতা চেয়ারের জন্যও রয়েছে টিকিট। ২ জন একসাথে বা ১ জন এর জন্য প্রতি ছাতা চেয়ারের ভাড়া ঘণ্টাপ্রতি ৩০ টাকা। অনেকটা কক্সবাজারের মতোই। কার পার্কিংয়ের জন্য কেন্দ্রের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে রয়েছে বিশাল জায়গা। গাড়ি পার্কিং জন্য ফি আগে জমা দিয়ে একটি টোকেন নিতে হবে। আবার, চলে যাওবার সময় সেই টোকেন দেখিয়েই গাড়ি নিতে হবে। এখানে টোকেন ফি আগেই দিতে হয়।

কর্তৃপক্ষের কথা

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. মিজানুর রহমান জানান, ‘প্রায় ১৫ বছর আগে আমার জন্মস্থান চাঁদপুর মতলব উত্তর এলাকার মেঘনা নদীকে ঘিরে এই পর্যটন কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা করি। দীর্ঘদিন আলাপ আলোচনা ও দেশ-বিদেশে ঘুরে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এটি নির্মাণ হয়। প্রায় ৬০ একর জমির ওপর ২০২০ সালে এটি বাস্তবায়ন হয়। পদ্মা মেঘনা, ডাকাতিয়া ও ধনাগোদা নদীবেষ্টিত চাঁদপুর পর্যটকদের জন্য উৎকৃষ্ট জেলা। বিশেষ করে মেঘনা নদীর এই মিঠা পানি বিশ্বের মধ্যে আলোচিত। আর এখানকার ইলিশ- সবচেয়ে সুস্বাদু।’ 

তিনি আরও জানান, প্রথমদিকে চাঁদপুর ও আশপাশের জেলার ভ্রমণপিপাসু লোকজনের নির্বিঘ্ন বিনোদনের কথা ভেবে কক্সবাজার সমুদ সৈকতের আদলে এটি তৈরি করা হয়। মেঘনার পাড়ে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এ বিনোদন কেন্দ্রের সৈকতে উন্নত মানের কৃত্রিম বালু বসানো হয়েছে। পরে এটিকে পরিণত করা হয় মাল্টিপল পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় এই ভ্রমণ কেন্দ্রে রয়েছে সার্বক্ষণিক ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কম খরচে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দিনে এসে দিনেই ফিরে যেতে পারছেন পর্যটকরা। 

আমি মনে করি প্রতিটি মানুষের বিনোদন প্রয়োজন। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ সমৃদ্ধ জাতি গড়তে বিনোদনের বিকল্প নেই। এজন্য দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিনোদনের কথা ভেবে এটা করা হয়েছে। পর্যটকদের জন্য রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিক। পর্যটকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য নেয়া হয়েছে ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নদীতে রাইডের সংখ্যা বাড়ানো, পাবলিক টয়লেট, ড্রেস চেঞ্জের ব্যবস্থা, গাড়ি পার্কিং ইয়ার্ড এবং সেলফি জোনের নির্মাণকাজ চলছে। এছাড়াও বেশকিছু অবকাঠামো ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ এখনো চলমান। এগুলোর কাজ শেষ হলে মোহনপুর হবে দেশের অন্যময় পর্যটন কেন্দ্র। 

কিভাবে যাবেন মোহনপুর 

ঢাকা থেকে চাঁদপুরের মোহনপুরে নৌপথ ও সড়কপথ- দু’ভাবেই ভ্রমণ করা যাবে। নৌপথে যেতে হলে- ঢাকার গুলিস্তান থেকে উৎসব বা বন্ধন বাসে করে যেতে হবে নারায়ণগঞ্জে। ভাড়া নেবে ৩৫ টাকা। নারায়ণগঞ্জ থেকে লঞ্চ টার্মিনালের ভেতরে প্রবেশের জন্য জনপ্রতি ১০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর বা মতলবের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে যায়। যে লঞ্চগুলো মোহনপুর লঞ্চঘাট হয়ে যাবে আপনাকে সেই লঞ্চে উঠতে হবে। লঞ্চে বিলাসের ভাড়া জনপ্রতি ৯০ টাকা। লঞ্চে মোহনপুর পৌঁছাতে ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগবে। 

মোহনপুরে সড়কপথে যেতে হলে- আপনাকে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে কুমিল্লাগামী বাসে দাউদকান্দি যেতে হবে। ভাড়া ৬০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। তাই বাসে ওঠার আগেই ভাড়া নির্ধারণ করে নেয়া ভালো। দাউদকান্দি নেমে সিএনজি করে চলে যাবেন সিরারচর। ভাড়া নেবে মাত্র ৫০ টাকা। সিরারচর থেকে আবার সিএনজিতে উঠে মতলবে যেতে ভাড়া লাগবে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। তারপর মতলব থেকে সিএনজি অথবা মোটরসাইকেলে করে মোহনপুর পর্যন্ত যাওয়া যাবে। ভাড়া নেবে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা ।

একনজরে মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্র

ভ্রমণ স্থান: মোহনপুর পর্যটন লিমিটেড

ধরন: দর্শনীয় স্থান

অবস্থান: মোহনপুর, মতলব উত্তর, চাঁদপুর, বাংলাদেশ

স্থাপিত: ২০২০ সাল

প্রবেশ মূল্য: ১০০ টাকা (আপডেট)

ঢাকা থেকে দূরত্ব: ১০৮ কিলোমিটার (সড়কপথ)

ড্রোন উড়ানো যাবে: হ্যাঁ

ব্যবস্থাপনা পরিচালক: কাজী মো. মিজানুর রহমান

খোলা থাকার সময়: সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত

হটলাইন: ০১৮৯৩৪৪৮০৮০

ফুড ম্যানেজার:০১৮৯৩৪৪৮০৮০, ০১৬১৫০১২৮০২

এছাড়া মতলব উপজেলায় এই পর্যটন কেন্দ্রটি ছাড়া আর একটি কৃত্রিম পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে জজ নগর পার্ক ও মিনি জো। আরও রয়েছে- হামিদ মিয়া জমিদার বাড়ি, নেদায়ে ইসলাম, কলাকান্দা মসজিদ ও মাদ্রাসা, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ও ধনাগোদা নদী, লুধুয়া জমিদার বাড়ি, একগম্বুজ মসজিদ, নাউরী মন্দির ও রথ, আইসিডিডিআরবি, খোদাই পুকুর রহস্যসহ বেশকিছু দর্শনীয় স্থান।


Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.