প্রথম বাঙালি নারীবাদী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার মৃত্যুর ৮৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তাঁর বসতভিটার সাড়ে ৩শ বিঘা জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ওই জমি কারা দখলে রেখেছে তার কোন তালিকা নেই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর এলে কলকাতা সোদপুর থেকে রোকেয়ার দেহাবশেষ পায়রাবন্দের মাটিতে সমাহিত করার দাবি জোরালো হয়। এরপর আবার সবাই এক বছর নিশ্চুপ থাকে।
৯ ডিসেম্বর নারী,বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং প্রথম বাঙালি নারীবাদী রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্য দিবস। দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও স্মৃতিকেন্দ্র পৃথকভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১৯৯৭ সালে রোকেয়ার জন্মভিটায় একটি স্মৃতি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। স্মৃতি কেন্দ্রে রয়েছে একটি অফিস ভবন, গেস্ট হাউজ, মিলনায়তন, ডরমেটরি,গবেষণা কক্ষ, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গ্রন্থাগার, আবাসিক সুবিধাসহ বিশাল অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়। স্মৃতি কেন্দ্রের ভেতর মনোরম পুকুরপাড়ে তৈরি করা হয় বেগম রোকেয়ার একটি ভাস্কর্য।
ভাস্কর্যটি ২০০১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। স্মৃতিকেন্দ্রটি বাংলা একাডেমি দেখাশোনা করে ৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারি থাকলেও রাজস্বখাতে বেতন পাচ্ছেন মাত্র দুজন। দুজন রয়েছে চুক্তিভিক্তিক। বাকি ৪ জন বেতনভাতা ছাড়াই কাজ করছেন।
রংপুরের পায়রাবন্দের খোর্দমুরাদপুর গ্রামে বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জহির উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের। খান বাহাদুর সাখাওয়াত হোসেন সাহেবের সাথে বেগম রোকেয়ার বিয়ে হয়। ২৮ বছর বয়সে স্বামী হারান তিনি। ১৯১০ সালের শেষ দিকে তিনি কোলকাতায় যান। তাঁর লেখা অবরোধবাসিনী,সুলাতানার স্বপ্ন,অর্ধাঙ্গী,মতিচুর ছাড়াও অসংখ্য বই লিখে তিনি সারা বিশ্বে সমাদৃত হন। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি কোলাকাতায় মারা গেলে তাকে কলকাতা শোদপুরে সমাহিত করা হয়।
স্থানীয় বেশ ক’জন জানান ‘রোকেয়া দিবস এলে কোনমতে ধোয়া মোছার কাজ হয় এখানে। রোকেয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে জমি উদ্ধারের দাবি জানানো হলেও কোন কাজই হয়নি। বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল জানান , বেগম রোকেয়ার ৩শ বিঘার উপরে লাখেরাজ সম্পত্তি ছিল। কিন্তু তার নামে এখন এক শতক জমিও নেই। স্মৃতিকেন্দ্রটি রয়েছে মাত্র ৩ একর ২৫ শতকের মধ্যে এবং বসতভিটার ধ্বংসস্তুপটি কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে মাত্র ৩০ শতকের উপর। সেটি প্রতœত্ত¡ত্ত অধিদপ্তরের সাইনবোর্ড ধাকলেও ওই সম্পত্তি এখনো অধিগ্রহণ করা হয়নি।
বিগত ২০০৭ তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে স্মৃতি কেন্দ্রকে বিকেএমই গার্মেন্টস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা হয়। সেনাসমর্থিত সরকার চলে যাওয়ার পর এটি দখলমুক্ত করে রোকেয়া চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত করার দাবি থাকলেও বাস্তবে তেমন কিছু হয়নি।
বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রের উপ-পরিচালক আব্দুল্যাহ আল-ফারুক বলেন, আমরা রোকেয়া গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য নানাবিদ পদক্ষেপ নিয়েছি, আশা করছি অচিরে বাস্তবায়ন হবে।
আর পড়ুন