পলাশ। পলাশ ফুলের আরেক নাম ‘অরণ্যের অগ্নিশিখা’। যার বৈজ্ঞানিক নাম Butea monosperma। এই বৃক্ষটি Fabaceae পরিবারের সদস্য। পলাশ ফুলের রং হলুদ, লাল ও লালচে কমলা রঙ এই তিন রকম হয়। পলাশ গাছ তার ফুলের জন্যই সবচেয়ে বেশি পরিচিত লাভ করেছে। ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির আজ বর্ণিল সাজে সেজেছে।
পলাশ ফুল বসন্ত ঋতুতে অর্থাৎ ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে দেখতে পাওয়া যায়। এটি মাঝারি আকারের পর্ণমোচী বৃক্ষ। গাছটি সর্বোচ্চ ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। এটি থোকায় ফুল ফোটে। পলাশ ফুল ২ থেকে ৪ সেঃ মিঃ লম্বা হয়। কুঁড়িগুলো দেখতে অনেকটা বাঘের নখের মতো। শাখা-প্রশাখাগুলো আঁকাবাঁকা। নতুন পাতা রেশমের মতো সূক্ষ্ম। শীত মৌসুমে গাছের সব পাতা ঝরে যায় এবং গ্রীষ্মের ছোয়ায় নতুন পাতা গজাতে শুরু করে। ফুল ফোটার সময় গাছ থাকে পাতাশূন্য। দূর থেকে দেখে মনে হয় গাছে আগুন লেগেছে। গাছের আগুনরাঙা পলাশের রূপ কার না ভালো লাগে! দূর থেকেও মানুষের নজর কাড়ে।
পলাশের নেশা তীব্র, পলাশ ফুল সবার মনে একবার হলেও দোলা দিয়েছে। তার ফুলের প্রেমের জালে জড়ায়নি হয়তো এমন কেউ খুজে পাওয়া দুস্কর। বসন্তে ফোটা পলাশ বনে ঘোর লাগে। তবে বড় ক্ষণস্থায়ী পলাশের মৌসুম। মাত্র ২০-২৫ দিন। তার নেশা লাগতে লাগতে, চিনে নিতে নিতে সে উধাও হয়ে যায়। যৌবনের উন্মাদনার মতো ক্ষণস্থায়ী। তবে এই ক্ষণস্থায়ী সুখ চলে গেলেও স্মৃতি থেকে যায় পুরো বছর। সেই স্মৃতি নিয়ে আমরা অপেক্ষায় থাকি অন্য বসন্তের...।
বসন্ত মানেই ফুলের সমারোহ আর ফুল মানেই রঙের মিলন মেলা। এইতো প্রকৃতি এখন পেয়েছে বসন্তের ছোঁয়া। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সবাই সাদরে বরণ করেছে ঋতুরাজ বসন্তকে। আর প্রকৃতিতে আগুন ঝরা পলাশ ফুল জানান দিচ্ছে বসন্ত চলছে। এই সময় পলাশ ফুলের সুন্দর্য দূর থেকেই আগুনের মতো জলতে দেখা যায়। ফুলের মেলায় পাখির কলতানে মুখরিত চারিদিক। বসন্ত এলেই সবার মনের মাঝে দোলা দেয় বসন্ত ফুল। এ যেন বসন্তে পলাশের রাজত্ব।
কবিরা পলাশের বর্ণনা নানানভাবে দিয়েছেন, কেউ তার কবিতায় কেউবা গানে গানে। সংস্কৃত কবি রবীন্দ্রনাথ গানে লিখেছেন-
"কুঞ্জবনের অঞ্জলি যে ছড়িয়ে পড়ে,
পলাশ কানন ধৈর্য হারায় রঙের ঝড়ে,
বেণুর শাখা তালে মাতাল পাতার নাচে।"
বাংলার গ্রামে ও শহরে প্রায় সব জায়গায় কম-বেশি পলাশ ফুল দেখতে পাওয়া যায়। গ্রামে পলাশ গাছের নিচে শিশুরা ফুল দিয়ে খেলা করে থাকে। শিশুরা একে অপরের কানে ফুল দিয়ে দেয়। গ্রামবাংলার এই দৃশ্য চোখে পড়ার মতো।
তিন প্রকার রঙের পলাশের মধ্যে হলুদ পলাশের জন্ম ভারতবর্ষে। গাছটি খুব কষ্ট সইতে পারে। রুক্ষ ও শুষ্ক মাটিতেও পলাশ বিনা যত্নে ফুল দেয়। গাছের বীজ দিয়ে নতুন চারা তৈরি করা যায়। তাই গাছটি থেকে বীজ সংগ্রহ করে দেশের সব উদ্যানে, পর্যটন কেন্দ্রে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ।
স্থানীয় সাংবাদিক কামরান আহমদ বলেন, রক্তঝরা পলাশ জানান দেয় বসন্ত এসে গেছে। বিলুপ্তি প্রায় পলাশকে টিকিয়ে রাখতে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh