হলুদ রঙের ফুল সূর্যমুখী। অবয়বে দেখতে সূর্যের মতো। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে, তাই এর নাম সূর্যমুখী। সূর্যমুখী থেকে তৈরি হয় পুষ্টি গুণসম্পন্ন তেল। এখন গ্রামবাংলার মাঠজুড়ে প্রকৃতিতে অসাধারণ এক রূপ মেলেছে সূর্যমুখী। মনকাড়া সুন্দর ফুল। দূর থেকে দেখলে মনে হবে বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। হলুদ রঙের হাজারো ফুল মুখ করে আছে সূর্যের দিকে।
এই সবুজ মাঠজুড়ে সূর্যের হাসিতে হাসছে কৃষকরা। এই হাসি যেন কৃষকের হূদয় উৎসারিত বাঁধভাঙা হাসি, প্রাণের উচ্ছ্বাস। সূর্যমুখী ফুল শুধু দেখতে রূপময় নয়, গুণেও অনন্য। বান্দরবানে বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী চাষ হলেও লাভের মুখ দেখচ্ছেন চাষীরা। পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুল চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।
জানা গেছে, দেশের সঙ্গে তাল মিলাতে বিভিন্ন জেলায় দিন দিন বেড়ে চলেছে সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ । শুধু জেলায় নয় এবার পৌছে দেওয়া হয়েছে প্রান্তিক পর্যায়েও। তবে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে জেলা বান্দরবানের এই প্রথমবার চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুল। এই জেলায় প্রথম হওয়াতেই প্রতিদিন ছুটছেন সুর্যমুখী ফুল দেখতে। এই ফুলে চাষ জেলায় হলেও সেই ছয় থেকে সাত ফুট লম্বা এই ফুলে দেখা মিলছে লামা ও আলীকদম উপজেলায়।
এদিকে দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি মেটাতে প্রতিটি জেলায় চাষ করা হচ্ছে সূর্যমুখীর ফুলের। তেলের উৎপাদন বাড়াতে চাষিদের মাঝে দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষন। আগ্রহ বাড়াতে প্রত্যেক উপজেলায় প্রায় ২০০ জন চাষিদের মাঝে প্রণোদনা দেওয়া হয়। কৃষি বিভাগ হতে প্রত্যেক জনকে ১-৩ বিঘা জমিতে চাষের জন্য বিজ, রাসায়নিক সার ও নানা পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়াও কম খরচে লাভজনক হওয়ায় র্সূযমুখী চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অনেক চাষি।
সরেজমিতে দেখা গেছে, বান্দরবানে ৭টি উপজেলায় এই প্রথম সুর্যমূখী চাষ হলেও সেসব ফুল দেখা মিলছে দুই উপজেলার লামা ও আলীকদমে। সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে ছয় থেকে সাত ফুট লম্বা সুর্যমুখী গাছে ফুল ফুটে আছে সড়কের পাশে। পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ততা পার করছেন অনেক কৃষক। হাওয়ার দোলন্তের এপাশ হতে ওপাশ সূর্যমূখী ফুলের নজর যেন কেড়ে নিয়েছে স্থানীয় ও দর্শনার্থীদের মনে। নিজেকে প্রাকৃতিক সাথে মানিয়ে নিতে ক্যামেরা ফ্রেমে বন্দি করেছেন দর্শনার্থীরা। এদিকে সুর্যমূখী নাম শুনলেও জেলায় এই প্রথম সেই ফুল দেখতে পাওয়াতেই আনন্দ আত্বপেকাশ করেছেন অনেকে। তবে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে সূর্যমুখী ফুল চাষের ব্যাপক ভাল ফলন হবে বলে আশা করছেন চাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্য মতে, বান্দরবানের ৭টি উপজেলায় এই প্রথম সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে ৬৬ একর জুড়ে। ২০০ জন চাষিদের মাঝে প্রশিক্ষণ শেষে দেওয়া হয়েছে কৃষি প্রনোদনা। প্রতি কেজি সূর্যমুখী বীজ থেকে ৩০০ গ্রাম করে ৩ হাজার ২০৬ কেজি তেল উৎপাদন হতে পারে। এতে করে প্রতিজন কৃষক ৩২ হাজার টাকার তেল বিক্রয় করতে পারবে আশা কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
বান্দরবান- লামা সড়কে গতিরাম ত্রিপুরা গ্রামের প্রিতমা ত্রিপুরা নামে এই কিষানী এই প্রথম ৩ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন সূর্যমুখী ফুল। তিনি জানান, কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন মাঠে মাঠে পরিদর্শন ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তার এই চাষ দেখে অনেক চাষিরা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যদি ভালো ফলন হয় তাহলে আগামীতে আরো বেশী করে সুর্যমূখী ফুলের চাষ করবেন বলে জানান।
লামা-আলীকদম সড়কে চাষি জুহুর আলম বলেন, আমিও এই প্রথম আলীকদম উপজেলায় অর্ধেক বিঘা জমিতে সুর্যমূখী ফুলের চাষ করেছি। কৃষি পরামর্শ অনুযায়ী চাষ করে ভালো ফলনের আশা করছি। তবে পানি সংকট হওয়াতেই কিছু মারা গেছে।
প্রথমবার সুর্যমুখী ফুল দেখতে এসেছেন সোহাগ,মিজানসহ দর্শণার্থীরা। তারা জানান, সুর্যমুখী নাম শুনলেও বাস্তবের কখনো দেখেননি। ৬ হতে ৭ ফুটে গাছ এই ফুলকে দেখতে পেয়ে খুব আনন্দিত তারা। এখানকার সুর্যমুখী ফুলে ভরা প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন তারা।
বান্দরবান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার বর্মন বলেন, গত ডিসেম্বরের শুরুতে ক্ষেতে সূর্যমুখীর বীজ বপন করা হয়েছিল। ফসল ঘরে তোলা যাবে এপ্রিলে। চাষীদের চাষ করতে বিশেষ সমস্যা বা তেমন খরচ নেই। একজন চাষি বিঘা প্রতি চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ করে তৈলবীজ পেতে পারেন। এছাড়াও দেশে তেলের ঘাটতি মেটাতে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বারি-৩ জাতের নতুন সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে ব্যাপক আবাদের মাধ্যমে একদিন দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি মেটাবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh