× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ইতিহাসের ভয়ংকরতম সুনামি আঘাত হানার ১২ বছর আজ

মশিউর অর্ণব

১০ মার্চ ২০২৩, ১৫:১৪ পিএম । আপডেটঃ ১১ মার্চ ২০২৩, ০২:২২ এএম

১১ মার্চ ২০১১, ঘড়ির কাটায় তখন দুপুর দুইটা ৪৬ মিনিট। জাপানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ৯ মাত্রার শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে রেকর্ডকৃত সর্বোচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে চতুর্থ।

রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার প্রলয়ংকরী এই ভূমিকম্পটি ‘গ্রেট সেন্দাই ভূমিকম্প’ অথবা ‘গ্রেট টোহুকু ভূমিকম্প’ হিসেবেও পরিচিত। 
ভূমিকম্প থেকে সৃষ্ট সুনামি টোহুকু অঞ্চলের প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলবর্তী এলাকা ভাসিয়ে নিয়ে যায়। প্রবল বেগে ছুটে চলা পানির উচ্চতা ৪০ মিটার পর্যন্ত উঠে যায়। 
একটানা ছয় মিনিট ধরে স্থায়ী ওই ভূমিকম্প পরবর্তী সুনামিতে প্রাণ হারান ২০ হাজারের অধিক মানুষ। আজও পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন আরও দুই হাজার ৫২৫ জন। আর, গত বারো বছরে সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত ৩ হাজার ৭৭৫ জন বিভিন্ন রোগে ভুগে মারা গেছেন। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছিলেন, যারা আর আগের অবস্থায় ফিরতে পারেননি। 
বলা হয়ে থাকে, ভয়াবহ ওই সুনামির পানির গতি ছিল একটি জেট প্লেনের গতির সমান। তীব্র ৯ মাত্রার ওই ভূমিকম্পের পরবর্তী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫ মাত্রার এবং তারও অধিক আরও ২০০টি শক্তিশালী কম্পন বা ‘আফটার শক’ অনুভূত হয়। 
বাড়িঘর ও অফিস আদালতসহ মোট ৪ লাখ ২৪৩টি কাঠামো সম্পূর্ণরুপে বিধ্বস্ত হয়। জাপানের ৩টি শহরের সর্বমোট ২ লাখ ৩৬ হাজার গাড়ি সুনামির তোড়ে সাগরে নিমজ্জিত হয়। 
ফুকুশিমার দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সহ সেদিন মোট ৩টি পারমাণবিক প্ল্যান্ট প্লাবিত হয়। দাইচি পরমাণু কেন্দ্রের ছয়টি চুল্লীর দু’টিতে বিস্ফোরণ ঘটে, এরপর আরও তিনটি রিয়্যাক্টরে আংশিক গলন ও অগ্নিকাণ্ড ঘটে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির আশেপাশে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা প্রতি ঘন্টায় ৪০০ মিলিসিভার্টে পৌঁছায়। ১৯৮৬ সালের চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর এটিই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ তেজস্ক্রিয় দুর্ঘটনা। 
১২ বছর আগে আজকের এই দিনে নজিরবিহীন এক দুর্যোগে ভীষণভাবে ধাক্কা খেয়েছিল জাপান। প্রচণ্ড শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর ধেয়ে আসা সুনামি দেশটির বিস্তৃত এলাকাই শুধু প্লাবিত করেনি, ক্ষতিগ্রস্ত করে ফুকুশিমা জেলায় অবস্থিত একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকেও।
সুনামির আঘাতে পারমাণবিক চুল্লি শীতলীকরণে ব্যবহৃত পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে বিস্ফোরণ ঘটে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এতে ছড়িয়ে পড়ে তেজস্ক্রিয়তা। ভূমিকম্পের এক যুগ পর এসে জাপান সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠান ফুকুশিমা বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেজস্ক্রিয়তা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও কিছু সমস্যার সমাধান এখনো করতে পারেনি। জাপানের মোট সক্রিয় ৫৪টি পরমাণু চুল্লির অধিকাংশ দুর্ঘটনার পর থেকে বন্ধ রয়েছে।
নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। জাপানের ইতিহাসে যা ছিল সত্যিকার অর্থে বড় একটি বিপর্যয়। এক দশকে দেশটির পক্ষে এই দুর্যোগের আঘাত কাটিয়ে ওঠা অনেকাংশে সম্ভব হলেও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজনকে এখনো বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। 
সরকারের পক্ষ থেকে নানা রকম সহায়ক কর্মসূচি হাতে নেওয়ার পরও ক্ষতিগ্রস্ত অনেক এলাকার অর্থনীতি এখনো আগের অবস্থায় ফিরতে পারছে না। কিছু ক্ষেত্রে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে আবার যাত্রা শুরু করলেও সার্বিকভাবে তা ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। 
অপরদিকে, শোক থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় এগিয়ে গেছে জাপান। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় ভূমিকম্প ও সুনামি মোকাবেলায় প্রশিক্ষণের পাশাপাশি জনগণের জন্য সর্তকতামূলক মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার চালু করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালতে নিয়মিত দুর্যোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

দূষণ এড়াতে ১২ লাখ টন তেজস্ক্রিয় পানি, ফসলি জমির মাটিসহ অন্যন্য আবর্জনা সংগ্রহ করেছে দেশটি। ফুকুশিমা প্ল্যান্ট থেকে উচ্চমাত্রায় তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর পর দেশটিতে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের জন্য শক্তিশালী আইন তৈরি হয়েছে। সেই সাথে তেজস্ক্রিয়তা পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে গবেষণায় জোর দিয়েছে দেশটি।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.