× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

আফগানিস্তান-পাকিস্তান ও ভারতে ভূমিকম্প, ভয়ঙ্কর ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

হালিম মোহাম্মদ

২২ মার্চ ২০২৩, ০৩:৪০ এএম

আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বাকি রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ভূমিকম্পের জন্য ভয়ঙ্কর ঝুঁকিতে রয়েছে। যেকোনো সময়ে ভুমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যয়ি ক্রমে সব এলাকাই ঢাকা থেকে কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু সেখানে সাত থেকে আট মাত্রার ভূমিকম্প হলে তা ঢাকায় বড় ধরনের বিপর্যয় তৈরি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষকের গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এছাড়া ভারতের দিল্লিতে ভূমিকম্পে ভবনগুলি কাঁপতে থাকার পর সেখানকার মানুষজন দ্রুত বাসা ছেড়ে নিচে নামেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, কাবুল, ইসলামাবাদ এবং নয়াদিল্লিতে অনুভূত কম্পনের ফলে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। খবর- আল জাজিরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়. গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০.১৭ মিনিটে আফগানিস্তানে ৬.৬ মাত্রার এই ভূমিকম্প অনুভত হয়। যা কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিল। ভূমিকম্প উৎপত্তির স্থল কাবুল থেকে ৪০০ কিলোমিটার উত্তরে জুর্মের কাছে।  আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পাশাপাশি ইসলামাবাদ ও লাহোরসহ পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি শহরে কম্পন অনুভূত হয়েছে । 

এদিকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে একের পর এক ভুমিকম্প হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষের ভেতেরে আতঙ্ক কাজ করছে। দেশের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে সাত থেকে আট মাত্রার ভূমিকম্প হলে তীব্র কম্পন অনুভূত হতে পারে, যা এই শহরের দুর্বল ভবনগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ঢাকার সম্প্রসারিত বা নতুন নতুন আবাসিক এলাকার মাটি নরম ও দুর্বল। এ ধরনের মাটিতে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা না মেনে বহুতল ভবন হলে তা মাঝারি মাত্রার কম্পনেই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। লালমাটির এলাকায় যেসব এক থেকে তিনতলা ভবন নির্মিত হয়েছে, সেগুলোর ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পাশাপাশি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতেও কম্পন অনুভব করার কথা জানিয়েছেন। এছাড়াও তুর্কমেনিস্তান, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, চীন, কিরগিজস্তানে কম্পন অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ১৮৭.৬ কিলোমিটার গভীরে।

অপরদিকে ভূমিকম্পে মানুষের মৃত্যুর ৯০ শতাংশই হয় ভবনধসে। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ভূমিকম্পগবেষক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, বাংলাদেশের ভেতরে ১৩টি ভূগর্ভস্থ চ্যুতি রয়েছে। তবে তার সব কটি ঢাকা থেকে বেশ দূরে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটে মাঝারি থেকে তীব্র ভূমিকম্প হলে ঢাকায় অনেক ভবন ভেঙে পড়তে পারে। তিনি বলেন, ভূমিকম্প ছাড়াও যে ভবন ভেঙে পড়ে যায়।  

অপরদিকে সৈয়দ হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ঢাকার ভবনগুলোর বেশির ভাগই ইমারত নির্মাণ বিধিমালা এবং ভূমিরূপ মেনে নির্মাণ করা হয়নি। এ কারণে তুরস্কে গতকাল হয়ে যাওয়া ভূমিকম্পের চেয়ে কম মাত্রার ভূমিকম্প আরও বড় ক্ষতি হতে পারে। 

বুয়েটের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের হিসাবে, ঢাকা শহরে মোট ভবন আছে ২১ লাখ। এর মধ্যে ৬ লাখ ভবন ছয়তলা বা তার চেয়ে উঁচু। রানা প্লাজা ধসের পর বুয়েটের পক্ষ থেকে ঢাকার কোন ভবন কতটা ভূমিকম্পসহনশীল, তা নির্ধারণ করে তালিকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলোকে লাল, মাঝারি ঝুঁকিতে থাকা ভবন হলুদ এবং ভূমিকম্প সহনশীল হলে তা সবুজ রং দিয়ে চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বুয়েট সূত্র বলছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে দেওয়া সেই সুপারিশ মানা হয়নি।

সাভারে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তৈরি পোশাক কারখানাগুলোকে রেট্রোফিটিং বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে ঝুঁকি কমানো হয়। কাজটি করা হয়ে থাকে বিদেশি ক্রেতাদের চাপে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবন নিরাপদ করতে আবাসিক ও অন্যান্য ভবনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেও ঢাকার কিছু ভবনের দেয়ালে ফাটল ও হেলে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।

বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের এক যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, ভারতের আসামে ১৮৯৭ সালে রিখটার স্কেলে ৮ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল ঢাকা থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে। ওই সময় ঢাকায় মাত্র ১০০টি পাকা দালান ছিল, অধিবাসী ছিল ৯০ হাজার। ওই ভূমিকম্পে আহসান মঞ্জিলসহ ১০টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ মেহেদী হাসান আনসারী বলেন, ঢাকায় আইন না মেনে এবং নরম মাটিতে ভবন নির্মাণ বন্ধ করা না হলে বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এবং সহ–উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামালের গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের ৩০৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার ৩৫ শতাংশ মূলত লাল মাটির ওপরে গড়ে ওঠা। এই মাটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য উপযুক্ত। বাকি ৬৫ শতাংশ এলাকা মূলত নদীর তীরবর্তী কাদামাটি ও বালুমাটির এলাকা। মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও পূর্বাচল নতুন শহর এ ধরনের মাটির। বেশির ভাগ বেসরকারি আবাসন প্রকল্প মূলত নরম মাটিতে গড়ে উঠেছে। 

গবেষণাটিতে আরও বলা হয়, ঢাকায় ৫ থেকে ৬ মাত্রার ভূকম্পন হলে নরম মাটির ভবনগুলো ভেঙে যাওয়া বা হেলে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, তুরস্কের ভূমিকম্প থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.