গোলাপকে বলা হয় ফুলের রানি, সৌন্দর্যের প্রতীক। ভালোবাসার নির্দশনের দিক থেকে গোলাপ অন্যতম। সে হিসেবে দামের দিক দিয়ে গোলাপের চেয়ে রয়েছে অমূল্য আরও কিছু ফুল। তবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুনে এ গোলাপ যেন হয়ে উঠেছে সোনার হরিণ। ভালোবাসার উষ্ণতায় বেড়েছে গোলাপসহ সকল ফুলের দাম। যে গোলাপ কয়েকদিন আগেও বিক্রি হতো ১০ থেকে ১৫ টাকায়, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়, তাও পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে শাহবাগ ফুল মার্কেটের ব্যবসায়ী মজনু মিয়া বলেন, এ দিবসকে ঘিরে প্রতি বছরই ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। বিশেষ করে এ দিবসে লাল গোলাপের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। আজ আমরা প্রতিটি লাল গোলাপ বিক্রি করছি ৩০ থেকে ৬০ টাকায়। সকালে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও বাড়তে শুরু করেছে।
ফুল বিক্রেতা সোহেল বলেন, গত কয়েক দিনের তুলনায় বেশ বিক্রি বেড়েছে, বিশেষ করে লাল গোলাপের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। দাম বেশির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, কিনেছি বেশি দিয়ে। তাই বিক্রিও বেশি দামে করছি।
রাজধানী শাহবাগের ফুলের দোকানগুলো দেখা যায়, অনান্য ফুলের তুলনায় গোলাপের চাহিদা বেশি। তবে বিক্রেতারা দাম হাঁকছেন বেশি। সাধারণ খোলা গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা পিস, চায়না গোলাপের দাম উঠেছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ফুলের রিংগুলোর দাম বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা। গোলাপ ছাড়াও গ্লাডিওলাস, , রজনীগন্ধা, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, লিলিয়াম ফুলের দামও বেড়েছে। কয়েক শ’ টাকা ছাড়া হাতে ফুলের গোছা চিন্তাই করা যাচ্ছে না।
এদিকে ফুলের দাম বৃদ্ধিতে হতাশ মৌসুম ফুল ব্যবসায়ীরা। ধানমন্ডির আবাসিক এলাকার মৌসুম ফুল ব্যবসায়ী মহসীন বলেন, ভ্যালেন্টাইন এলেই এলাকায় বিক্রির জন্য দুই-তিনশ পিস গোলাপ নিয়ে যেতাম। কিন্তু এবার দাম অনেক বেশি। এই দামে এলাকায় কতটুকু ফুল বিক্রি হবে বলতে পারছি না।
আনিকা পুষ্প বিতানের মালিক বলেন, গত ৩০-৪০ বছরে ফুলের দাম কখনও এত বাড়েনি। আগে যে ফুল ২০ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি করতাম, সেই ফুল এখন ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি করছি। ক্রেতাদের কাছে এতো দামে বিক্রি করতে আমাদেরও ভালো লাগছে না। কিন্তু উপায় নাই, ফুলের সঙ্কট রয়েছে।
ঋালোবাসা দিবস উপলক্ষে শুধু রাজধানী বা বন্দর নগরী চট্টগ্রামেই নয়। বিভাগীয় শহরেও ফুলের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক ভাবে। উদারহন স্বরুপ বলা যায়, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে ফরিদপুরে হঠাৎ বেড়েছে ফুলের দাম। বাজারে ফুলের সরবরাহ কম থাকায় গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা এমনই অভিযোগ ফুল ব্যবসায়ীদের।
ফরিদপুর নিউ মার্কেটের সামনের ফুটপাতের ফুল ব্যবসায়ী শাহ আলম মোল্লাসহ একাধিক ফুল বিক্রেতা বলেন, গত বছর যে ফুল আমরা কিনেছি ১০০ পিস ১২'শ টাকা কওে, এবার তার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬'শ টাকা। তাছাড়া লকডাউন মহামারী করোনা ও ঘন কুয়াশার কারণে এবার ফুলের উদপাদন কম হয়েছে। তাই দাম বেশি।
একাধিক ফুল ব্যবসায়ী জানান,এবছর মহামারী করোনা এবং বাজে আবহাওয়ার কারণে খামারীরা ফুল চাষ করতে অনেকটা অনীহা প্রকাশ করেন। ফলে ফুলের চাষ কমেছে। যে কারণে ফুলের চাষ কম হওয়ায় ও চাহিদা বেশি থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে। ফুল কিনতে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রতিবছর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এলেই ফুল ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে ফুলের দাম বাড়িয়ে দেন।
এদিকে ভালোবাসা দিবসে প্রত্যেকটা ফুলের দাম বাড়তি। গত রোববার রাতে যে গোলাপ বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকা। গতকাল সকালে তা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা। একইভাবে অন্যান্য জাতের ফুলও অপেক্ষাকৃত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে । শুধুমাত্র গাঁদা ফুল বাদে সব ফুলের দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতাদের বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে। আগামী একুশে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত এই অবস্থা চলবে বলে দোকানীরা জানান।
অপরদিকে গতকাল সোমবার জামালপুর শহর এবং আশপাশের উপজেলায় ফুলের দোকানে ঘুরে ঘুরে এমন ফুলের সংকট দেখা গেছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, আগে যে ফুল বিক্রি হতো ১০ থেকে ১৫ টাকা, সেই ফুল এখন ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলেন, স্যার বছরে একদিন তো। খরচ করতে ভয় পান কেন। দিবেন তো ভালোবাসার মানুষকে।
এ ব্যাপারে ফুল ক্রেতা মিজানুর রহমান পারভেজ জানান, এর আগে ফুলের দাম এতো ছিলো না। গত কয়েকদিন ধরে এ বাজারে আগুন লেগে গেছে। যে ফুলের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা ছিলো, সেটি এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে না। এটার কারণ হিসেবে তিনি জানান, একেতো বাঙালির ঐতিহ্য পহেলা ফাল্গুন, তারপর একইদিনে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এ দিবসগুলোতে সব ফুলের চাহিদাই বেড়ে যায়। তবে গোলাপের চাহিদা থাকে সবার উপরে।
করোনার বিধিনিষেধে পহেলা ফাল্গুন কিংবা ভালোবাসা দিবস কোনোটাই তেমন পূর্ণতা পায়নি গত দুই বছর। এবছর তেমন বাধা না থাকলেও দিবসগুলো ঘিরে ব্যবসায়ীদের নেই বাড়তি প্রত্যাশা। তাছাড়া স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় অধিক লাভ হবার আশা দেখছেন না ব্যবসায়ীরা। এমনকি কয়েক বছর বাজার চড়া হওয়ায় ক্রেতারা কিনতে এলেও না কিনে চলে ফেরত যান বেশি।
এ প্রসঙ্গে দেশের ফুল ব্যবসায়ীদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতি বছর এসময় ফুলের দাম বেশি হয়। এবছর তুলনামূলক একটু বেশি। এর প্রধান কারণ কৃষকরা ফুল চাষ কমিয়ে দিয়েছে। আগে দুই একর জমিতে ফুল চাষ করলেও এখন এক একরে চাষ হচ্ছে। এছাড়া গ্লাডিওলাস, ফুলের বীজ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়েছে। যার কারণে কৃষকরাও আশানুরূপ উৎপাদন করতে পারেননি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh