× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

পাল্টে যাচ্ছে কারাবন্দিদের জীবন, দেয়া হচ্ছে কৃষি প্রশিক্ষণ

সংবাদ সারাবেলা ডেস্ক

২৭ আগস্ট ২০২৩, ১৮:০৪ পিএম

কারাগার নিয়ে মানুষের নেতিবাচক ধারণা বহুকাল ধরেই। এর সঙ্গে প্রায়ই খবর চাওড় হয়, অপরাধীরা কারাগারে সুসংগঠিত হওয়ার পর আরো বড় অপরাধে জড়িত হওয়ার। এসব অভিযোগ পেছনে ফেলে নানা উদ্যোগে পাল্টে যাচ্ছে কারাবন্দিদের জীবন। অপরাধে জড়িয়ে কারাগারে গিয়ে এক নতুন জীবনের ছোঁয়া পাচ্ছেন তারা। 

কারা কর্তৃপক্ষও ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’ এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে কারাবন্দিদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে সমাজের মূলধারায় আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের আওতায় আনা হচ্ছে। বন্দির ইচ্ছা অনুযায়ী দেয়া হচ্ছে কাজের প্রশিক্ষণ। সেই কাজের মাধ্যমে আয় করারও সুযোগ পাচ্ছেন তারা। যা তার পরিবারের খরচ জোগাতে সাহায্য করছে। যারা অশিক্ষিত তাদের মধ্যে সাক্ষরতা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। অপরাধ জগতে যাতে তারা নাম না লেখায় সেজন্য মক্তবের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে ধর্মীয় শিক্ষাও। দেশের সর্বাধুনিক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) বন্দির হাতকে কর্মীর হাতে রূপান্তর করতে এসব উদ্যোগসহ সম্প্রতি নিত্যনতুন কর্মযজ্ঞ চালু করা হয়েছে। 

কারাগারটির কর্মকর্তারা বলছেন, কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তর করতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্দিদের কাজের পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন প্রশিক্ষণ যুক্ত করা হচ্ছে। কারাগার থেকে তাঁত, ফার্নিচার, মৃৎশিল্পসহ গার্মেন্টস ও কৃষি কাজেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। যাতে কোনো বন্দি জামিনে মুক্ত হওয়ার পর আর অন্ধকার পথে পা না বাড়ান। পাশাপাশি বহু বিবাহ ও বাল্যবিয়ে বিরোধী প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। 

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, সম্প্রতি কারাবন্দিদের গার্মেন্টস প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১২০ জন বন্দি গার্মেন্টস প্রশিক্ষণে কাজ করছে। বাইরের বিভিন্ন সাব-কন্টাকদারদের কাজ করা হচ্ছে। এখানে টি-শার্ট, টাউজারসহ বিভিন্ন পোশাক তৈরির কাজ করা হয়। প্রশিক্ষণ লাভ করে বন্দিরা বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সম্পৃক্ত হতে পারবে। সারাদেশে জামদানি শাড়ির ব্যাপক চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে ৩৫ জন বন্দিকে এটি তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ১০ জন বন্দি বেনারসি শাড়ি তৈরি করছেন। ৭০ জন বন্দিকে সুচি শিল্পের কাজের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারাও নিপুণ হাতে কাপড়ের উপর বিভিন্ন নকশা ফুটিয়ে তুলছেন। প্রশিক্ষণ নেয়ার ৩০ জন বন্দি তাঁতশিল্পের কাজ করছেন। ২০ জন বন্দিকে ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কারাগারে থেকেই টেলিভিশন, ফ্রিজ, রেডিও, ফ্যান, চার্জার লাইট মেরামত শিখতে পারছেন তারা। পাদুকা শিল্পের কাজ করছেন ১৫ জন বন্দি। কাঠের আসবাবপত্র তৈরি ও মেরামতের কাজ করছেন ৭ জন। মৃৎশিল্প, কুটির ও হস্তশিল্প এবং কৃষি কাজের ওপর ২০০ জন বন্দিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল পালনের পদ্ধতি ও সবজি চাষ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ চলছে। নিরক্ষর বন্দিদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে চালু রয়েছে গণশিক্ষা কার্যক্রম। ৩০০ জন বন্দিকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্যন্ত পড়ানো হয়েছে এবং অন্যদের মধ্যে উৎসাহ বাড়াতে ভালো ফলাফল করা বন্দিদের বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

এদিকে ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই দৌড়ে কারাবন্দিরা যাতে পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য কারাভ্যন্তরে চালু করা হয়েছে ‘শেখ রাসেল কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’। এখানে সাপ্তাহিকভাবে (শুক্রবার বাদে) ৫০ জন বন্দিকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং প্রশিক্ষণার্থীকে ৩ মাসের কোর্স শেষে সনদ দেয়া হয়।

এখানেই শেষ নয়, কারাভ্যন্তরে বন্দিদের জন্য বিদেশি ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। ইংরেজি ভাষা শিখতে ইচ্ছুক বন্দিদের প্রশিক্ষণ শেষে পরীক্ষা নিয়ে সনদ দেয়া হয়। বর্তমানে ৩০ জন বন্দিকে ইংরেজি ভাষার ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বন্দিদের শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির জন্য মেডিটেশনাল কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ৩০ জন বন্দিকে মেডিটেশনের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

সাপ্তাহিকভাবে কারা বন্দিদের নিয়ে মাদকবিরোধী সচেতনতা ও বিভিন্ন সামাজিক, পারিবারিক, রাষ্ট্রীয় সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে মোটিভেশনাল সেশন চালু আছে। বর্তমানে মোটিভেশনাল সেশনের ওপর ৬০ জন বন্দিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কারাবন্দিরা যাতে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। কারাগারে পবিত্র কুরআন শিক্ষার জন্য মক্তব চালু রয়েছে। অন্যান্য ধর্ম পালনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। ওই মক্তবে প্রায় ২৫০ জন বন্দি কুরআন ও নৈতিক জ্ঞান লাভ করছেন। ফলে অপরাধমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ৭০ জন বন্দিকে বহুবিবাহ বিরোধী কার্যক্রম ও ৬৫ জন বন্দিকে বাল্যবিয়েবিরোধী কার্যক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া বন্দিদের জন্য বৈকালিক ফুটবল, ক্রিকেট, দাবা, লুডু, ক্যারাম বোর্ডসহ বিভিন্ন খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে। যার মাধ্যমে কারা বন্দিরা শারীরিক মানসিক ও বিভিন্ন ধরনের বিনোদন উপভোগ করে থাকেন। কারাগারে একটি জিমনেসিয়াম সেন্টার রয়েছে। ইচ্ছা করলেই সেখানেই শরীর চর্চার সুযোগ মিলছে। মাদক থেকে ফেরাতে চালু রয়েছে এন্ট্রি ড্রাগ কাউন্সেলিং কার্যক্রম।

কারাবন্দিদের ঘিরে এসব উদ্যোগ সম্পর্কে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেলসুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার অনুযায়ী কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হকের সার্বিক দিক-নির্দেশনায় আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। স্বেচ্ছাশ্রমে আগ্রহী কারাবন্দিদের কাজে লাগিয়ে অন্য বন্দিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে ভালো কাজে যুক্ত হওয়ার পথ সুগম করে দেয়া হচ্ছে। কারাগারেই বন্দিরা গার্মেন্টস, জামদানি, তাঁত, মৃৎশিল্পসহ বিভিন্ন কাজ করে পণ্য উৎপাদন করছে। সেগুলো বাণিজ্যমেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। পণ্য বিক্রির লভ্যাংশের অর্ধেক বন্দিকে দেয়া হচ্ছে। এই টাকা সে নিজ পরিবারে পাঠানোর সুযোগ পাচ্ছে। কারাগারকে সত্যিকার অর্থে সংশোধনাগারে পরিণত করতে আমাদের সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশা করি, ওই লক্ষ্যে পৌঁছানো খুব বেশি দূরে নেই। বর্তমানে এই কারাগারে থাকা বন্দিদের বড় অংশ নিজেকে সংশোধন করে সুনাগরিক হিসেবে নিজ বাড়িতে ফিরছে বলে বিশ্বাস করি।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.