× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

‘বিএসএফের বাধায়’ ফেনী নদী রক্ষা প্রকল্পের কাজ বন্ধ

মো. আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি)

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪:২১ পিএম

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তের উপর দিয়ে প্রবাহিত ফেনী নদীতে বিভিন্ন অংশে ভাঙনরোধে একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। প্রকল্প অনুযায়ী কয়েক বছর আগে সিসি ব্লক নির্মাণের কাজ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)’র বাধার কারণে নদীতে ব্লক ড্যাম্পিং ও প্লেসিং করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাটিরাঙ্গা উপজেলার আমতলী ইউনিয়নে সহস্রাধিক সিসি ব্লক প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। নদীতে ডাম্পিং ও প্লেসিং করতে না পারায় ব্লকগুলোর উপর ঘাস জন্মানোর পাশাপাশি শ্যাওলা জমে আছে। তাছাড়া চলমান বৃষ্টির পানিতে ব্লকগুলো পানির নিছে অবহেলায় পড়ে আছে। বিএসএফের বাধার কারণে নতুন কোনো ব্লক বানাতে না পারলেও পুরোনোগুলো ব্লকগুলো কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ফলে ব্লকগুলো নদীতে প্লেসিং করাটা প্রায় অনিশ্চিত হয়ে গেছে। 

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সীমান্ত নদী তীর সংরক্ষণ ও উন্নয়নের(২য় পর্যায়) আওতায় ৬টি প্যাকেজে মাটিরাঙ্গার অযোধ্যায় ফেনী নদীর প্রায় ৮শ মিটার, শান্তিপুর এলাকায় ৪শ মিটার, দেওয়ান বাজার এলাকায় ৩শ মিটার, লক্ষীছড়া এলাকায় ৫শ মিটার, করাইল্যাছড়ি এলাকায় ১১শ ৫০ মিটার, আমতলী এলাকায় ২শ ৫০ মিটার নদীর ভাঙ্গন রোধে প্রকল্প নেয়া হয়। এছাড়া আলাদা ৩টি প্যাকেজে মাটিরাঙ্গার তাইন্দং এলাকায় ফেনী নদীর প্রায় ২শ ৫০ মিটার, করাইল্যাছড়ি এলাকায় ২শ ৫০ মিটার এলাকা ভাঙনরোধে স্লোপিং, সিসি ব্লক ডাম্পিং ও প্লেসিংয়ের প্রকল্প নেয়া হয়। এসব প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। ভাঙ্গন রোধে প্রকল্প নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 

কড়াইল্যাছড়ি এলাকার বাসিন্দা মো. মহসিন হোসেন বলেন, ‘ফেনী নদী ক্রমাগত ভাঙনে কারণে আমরা আতংকে আছি। বিএসএফ বাধা দেওয়ায় ব্লকের কাজ বন্ধ রয়েছে। ব্লকগুলো নদীতে ফেলতে পারলে আমাদের আতঙ্ক দূর হতো।’ 

দেওয়ান বাজারের বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন, ‘প্রতি বছর এ এলাকার অনেক ফসলী জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তাই ব্লকগুলো বসানো জরুরি হয়ে পড়েছে। এত করে নদী রক্ষার পাশাপাশি কৃসকসহ সকলে উপকৃত হবে।’

আমতলী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমতলী তে সীমান্তবর্তী এলাকায় অনেক জমি রয়েছে। বর্ষার কারণে প্রতিবছর ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। এ ভাঙ্গন প্রতিনিয়ত চলতেই থাকে। এভাবে চলতে থাকলে নিজেদের ফসলি জমি সব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। ভাঙনরোধে বিএসএফর বাধার কারণে এখানে ব্লক বসানো যাচ্ছে না। এরকম চলতে থাকলে কীভাবে নদী রক্ষা হবে?’ 

বেলছড়ি ইউনিয়নের চেযয়ারম্যান মো. রহমত উল্ল্যাহ বলেন, ‘অত্র ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের বেশ কিছু এলাকায় কয়েক বছর ধরে নদী ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ব্লক বানানোর কাজ শেষ হলেও বিএসএফের বাধার কারণে তা বসানো যাচ্ছে না। শীঘ্রই সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।’  

সীমান্তে নদীর তীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন (২য় পর্যায়) প্রকল্পের ঠিকাদার এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, ‘দরপত্রের শর্তানুযাযী গুণগত মান বজায় রেখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিসি ব্লক নির্মাণের কাজ শেষ করেছি। কিন্তু যখনই এসব ব্লক নদীতে প্লেসিং করতে গেছি তখন বিএসএফের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তারপরও দুই বছর ধরে প্রকল্পটি ঝুলে আছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারায় ইতোমধ্যে আমার প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেক জায়গায় বিএসএফের বাধার কারণে ব্লক বানানো যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে সব ধরনের নির্মান সামগ্রীর দাম বেড়েছে। ফলে দরপত্র মূল্যের চেয়ে বাড়তি নামে আমাকে নির্মাণ সামগ্রী কিনতে হচ্ছে। এছাড়া প্রকল্প ঝুলে থাকায় আমার টেন্ডার ক্যাপাসিটির উপরও আঘাত আসবে।’

একই প্রকল্পের আরেক ঠিকাদার আব্দুল গনি জানান, নিয়ম মেনে ব্লক তৈরি করা শেষ হলেও নদীতে প্লেসিং করতে পারছি না। প্রতি বছর আমাকে লোকসার গুনতে হচ্ছে। তবে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে আশাকরি শীঘ্রই প্রকল্পটি চালু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

সীমান্ত নদী তীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন (২য় পর্যায়) এর প্রকল্প পরিচালক নবকুমার চৌধুরী বলেন, ‘প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো গাফিলতি নেই। যে ৯টি প্যাকেজের কাজ বন্ধ রয়েছে তা চালু করার জন্য গত মাসে ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত যৌথ নদী কমিশনের সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আশা করি, ছাড়পত্র পেয়ে যাবার সাথে সাথেই কাজ শুরু হবে।’

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.