নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বড়ভিটা বাজারপাড়ার হোটেল ব্যবসায়ী আলিফ হোসেন। ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়ে অনাদরে অবহেলায় বড় হয়েছেন খেয়ে না খেয়ে। সেই থেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আলিফ হোসেন এখন প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার এক বেলা পেট ভরে খাওয়াচ্ছেন অংসখ্য অসহায় অবহেলিতদেরকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আলিফ হোসেনের স্ত্রী পারভীন বেগম রান্নায় ব্যস্ত। প্রায় তিন শতাধিক মানুষের জন্য রান্না করছেন মাছ, মাংস,ডাল, ডিম আর ভাত। আবার দুই ছেলে রেদওয়ান হোসেন রাব্বী ও মোসাদ্দিক হোসেন রিফাত করছেন ছালাত তৈরি। বিয়ে অনুষ্ঠানের মতোই ছামিয়ানা দিয়ে সাজানো হয়েছে বড়ভিটা স্কুল এন্ড কলেজের মাঠ। সাড়ি সাড়ি চেয়ারে বসছে দুর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা অসংখ্য নারী-পুরুষ। ১’শ চেয়ারের আয়োজন থাকলেও মানুষ দেখা গেছে সাড়ে ৩শ এর অধিক। তবুও কাউকে নিরাশ করে ফেরত দিতে দেখা যায়নি মানবতার ফেরীওয়ালা আলিফ হোসেনকে। ক্ষুদ্র হোটেল ব্যবসার সামান্য রোজগার দিয়েই তার এই মহাযজ্ঞ।
জানা যায়, আলিফ হোসেন ছোট বেলায় যখন না খেয়ে দিন পার করত। তখনেই মনে গেথে নিয়েছেন বড় হয়ে যেভাবেই হউক আসহায়দের পাশে দাড়াবেন তিনি। সেই থেকে নিজের সামান্য হোটেল ব্যবসার রোজগারে কুলাতে না পারলেও প্রতিজ্ঞা ভেস্তে যেতে দেননি তিনি। হোটেলে কোন শ্রমিক না রেখে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে রাত দিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যেটুকু রোজগার হয় মাস শেষে এ আয়োজন করে থাকেন তিনি। আসহায়দের প্রতিটি লোকমায় যেনো আলিফ হোসেনের পরম তৃপ্তি।
আলিফ হোসেন বলেন, আমি যখন খুব ছোট তখনে বাবাকে হারিয়েছি। বাবাকে হারিয়ে দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা কতটাই না কষ্ট। সেটার জলজান্ত প্রমাণ আমি। এমনও দিন গেছে না খেয়ে থাকতে হয়েছে। ক্ষুধার তারণায় জীবণ যায় যায় অবস্থাও হয়েছে। অনেকেই লাত্তি উষ্ঠাও দিয়েছে খাবারের জন্য। তখন থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছি আমার রোজগারে অসহায় মানুষরা যেনো একবেলা হলেও তৃপ্তি সহকারে খেতে পারে। তবে আলহামদুলিল্লাহ্, এখন আল্লাহ্ তায়ালা কষ্ট দূর করেছে। রোজগার করতে পারছি। এখন প্রতিমাসেই একদিন হলেও তিনশতাধিক মানুষকে একবেলা খাওয়াতে পারছি এতেই যেনো আমার তৃপ্তি। এছাড়াও আমি নিয়ত করেছি এলাকায় হতদরিদ্র মানুষ মারা গেলে দাফনের সমস্ত খরচ দিয়ে সহায়তা করবো।
আলিফ হোসেনের স্ত্রী পারভীন বেগম বলেন, আমি নিজের হাতেই প্রতি মাসে তিন থেকে চার’শ মানুষের খাবার রান্না করি। আসলে যখন আমার স্বামী এই উদ্যোগ গ্রহন করে তখন একটু হলেও বাঁধা দিয়েছিলাম। তারপর যখন ভাবলাম তারাও তো আমাদের মতো মানুষ। আমরা তো একটু হলেও খেতে পারি। এসব অসহায় মানুষ ঠিকমতো খেতে পারে না। এজন্য শত কষ্ট হলেও তাদের জন্য রান্না করতে পেরে অনেক ভালো লাগে।
পেট ভরে খেতে পেরে খুঁশি বড়ভিটা ঘোনপাড়া এলাকার মহসেনা বেগম। তিনি বলেন, আমরা ঠিকমতো খাবার পাই না। এখানে আলিফ ভাই শত শত মানুষকে খাওয়ায়, এখানে এসে আজকে পেট ভরে খাইতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। আল্লাহ্ তায়ালা তাকে যেনো আরও বেশি মানুষকে খাওয়ার ক্ষমতা দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম রেজা বলেন, বিয়ে অনুষ্ঠানের মতোই গত কয়েক মাস ধরে প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার করে আলিফ হোসেন অসংখ্য মানুষকে একবেলা পেট ভরে খাওয়ায়। আসলে অনেকের কোটি কোটি টাকা থাকার পরেও এমন মহতী উদ্যোগ কয়জন নিয়েছে। আলিফ হোসেন সামান্য হোটেল ব্যবসায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে তার সামন্য রোজগার দিয়ে এমন মহতী উদ্যোগ নিয়েছে।
জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, কিশোগঞ্জের বড়ভিটা এলাকার আলিফ হোসেন গত কয়েক মাস ধরে মাসে একবার অসহায়দের পেট ভরে খাওয়ায়। তার এমন মানবিক কার্মকান্ডের জন্য তাকে স্বাদুবাদ জানাই। আমরা চাই আলিফ হোসেনের মতোই সমাজের বৃত্তবানরা এভাবেই অসহায়দের পাশে দাড়াবে। তাহলে দেশ থেকে একদিন দারিদ্র ও অসহায় নামটিই মুছে যাবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh