লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম মাসিমপুর গ্রামের ফোরকানিয়া মাদ্রাসা থেকে খাল পাড় পর্যন্ত ৭০০ মিটার কাঁচা সড়ক। এ সড়কটি পাকা হবে এ আশায় এলাকাবাসী দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বছরের পর বছর অপেক্ষায় আছেন। তবে বারবার জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামান নামের সড়কটি পাকাসহ উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া আজও লাগেনি।
দীর্ঘ এই সড়কে প্রতিদিন স্কুলগামী শিক্ষার্থী, নারী ও বৃদ্ধরাসহ হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সড়কটি মাটির হওয়ায় বিশেষ করে কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতলে নিতে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
স্থানীয়রা জানান, এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। দেশ স্বাধীনের আগে থেকেই এ রাস্তাটি কাঁচা। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব গাঁথা অবদানের জন্য স্বাধীনতার পর এ সড়কটি নাম করণ করা হয় এলাকার কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তাররুজ্জামান নামে। তার জীবদ্দশায় এ সড়কটি পাকা দেখে যেতে পারেননি তিনি। বর্তমানে বর্ষার সময় একটু বৃষ্টিতেই সড়কটি কাদা-পানিতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। রিক্সা, ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল চলাচলও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। পায়ে হেঁটে চলতেও কষ্টের শিকার হন এলাকাবাসী। বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় গ্রামবাসী বাধ্য হয়ে কাদা-পানি মাড়িয়ে সড়কে চলাচল করেন।
আব্দুর রব মাষ্টার নামে এলাকার প্রবীণ এক বাসিন্দা বলেন, রাস্তার কারণে এলাকার ছেলে-মেয়েদের বিয়ে-শাদি হয় না। সবাই বলে আপনাদের এলাকায় রাস্তা নাই। আপনারা কেমন জায়গায় বাস করেন। এমন কাঁচা রাস্তা আর কোথাও দেখি না। দেশের অনাচে কানাচের সড়কও এখন পাকা হয়। মারা যাওয়ার আগে পাকা রাস্তা দেখবো কি না জানিনা। আমাদের কষ্টের শেষ নাই।
তাজল ইসলাম নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, আমরা বহু আশা করেছি আমাদের রাস্তাটি সংস্কার হবে। কিন্তু হয় না। বর্ষার সময় বাচ্চারা স্কুল-মাদ্রাসায় যেতে পারে না। বৃষ্টি হলে এক হাঁটু পানি হয়। আমরা ঘর থেকে বের হতে পারি না। চিকিৎসার জন্য পাশে থাকা কমিউনিটি ক্লিনিকেও যাওয়া যায় না। বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বলেন, বর্ষাকালে রাস্তায় কাদা থাকে। তার কারণে স্কুলে যেতে খুব কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে যেতে পারি না। স্কুলে না গেলে শিক্ষকরা বকা দেয়। আমরাতো ঘরবন্দি হয়ে থাকি। শিক্ষকরা বকা দিলেও শুনে থাকি, কিছু করার নাই।
স্থানীয় কবি এমরান হোসেন বলেন, এই রাস্তার বয়স ৬০ থেকে ৭০ বছর। একজন মুক্তিযোদ্ধার নামে সড়কটির নাম করণ করা হয়েছে। বর্ষার সময় মানুষ হাঁটতে পারে না, চলতে পারে না। কেউ অসুস্থ হলে একটা অ্যাম্বুলেন্স যে প্রবেশ করবে তার ব্যবস্থা নাই। গ্রামবাসী চাঁদা তুলে রাস্তার সংস্কার করি। বহু জনপ্রতিনিধি আসছে আর গেছে তারা কেবল আশ্বাস দিয়েছে কিন্তু রাস্তার কাজ হয়নি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ফজলুল কবির বলেন, স্বাধীনতার পর এই রাস্তার বয়স ৫২ বছর। এখনও আমরা কাঁচা রাস্তা দিয়ে চলাচল করি। বর্ষা হলে কাদা-পানি জমে একাকার। একটা অ্যাম্বুলেন্সও আসতে পারে না। রিকশায় করে চলাচল করা যায় না। এমনকি এক বস্তা চালও বাড়িতে নেওয়া যায় না। মাথায় করে নিতে হয়। আমি এসব বিষয়টি একাধিকবার আমাদের পরিষদে বলেও এখন কোন লাভ হয়নি। এই সড়ক দিয়ে প্রতিনি আমি নিজেও চলাচল করতে হয়।
চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুল ইসলাম সুমন বলেন, রাস্তাটি অনেক পুরাতন। মানুষের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত বছর রাস্তাটির নামে আইডি করা হয়েছে। আমি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি পাকা করার জন্য মাননীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছি।
রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনির হোসেন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন নিয়ে ধরে সড়কটির কাজ হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্রাম হচ্ছে শহর। আর এই উন্নয়ন গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে আছে। রাস্তাটি দ্রুত পাকা করণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh