শিশু শিক্ষা নিকেতন- একখণ্ড শিক্ষার বাতিঘর। যেখানে প্রাচীনকালের মতো বাঁশের কঞ্চির কলম এবং ছাই দিয়ে কালি তৈরি করে দোয়াতে ভরে তাল পাতায় লেখা শেখানো হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি গড়েছেন ৭৫ বছর বয়সী পন্ডিত কালিপদ বাছাড়। বর্তমান প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্পের মতোই মনে হবে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের নিভৃত পল্লীর এই পাঠশালাটি। দেড় যুগেরও অধিক সময় ধরে প্রাচীন এই শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রেখেছেন পণ্ডিত কালিপদ বাছাড়।
পন্ডিত কালিপদ বাছাড় ডুমুরিয়া গ্রামবাসীর সহায়তায় খালপাড়ের সরকারি পতিত জমিতে ২০০৫ সালে গড়ে তোলেন শিশু শিক্ষা নিকেতন নামের এই তালপাতার পাঠশালা। এ পাঠশালায় প্রায় অর্ধশত শিশু অক্ষর জ্ঞান চর্চা করেন। একমাত্র শিক্ষক স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জন বর্ণ, বানান, যুক্তাক্ষর, শতকিয়া, নামতা, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাও দেন এই পাঠশালাতে। মূলত দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরাই এই পাঠশালার শিক্ষার্থী। অত্যন্ত যত্ন আর পরম আদরে শিক্ষা দান করেন এই পাঠশালার কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের।
বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত তাল পাতার এই পাঠশালাটি এদেশের প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থার ঐতিহ্য বহন করছে। তবে হাটে-ঘাটে মাঠে যেসব শিশুদের অভিভাবক জীবিকা নির্বাহের তাগিদে চলে যান সেসব শিশুরাই সকাল হলে তালপাতা কঞ্চির কলম এবং দোয়াতে ভরা কালি নিয়ে বসে পড়েন এই শিশু শিক্ষা নিকেতনে। বিদ্যালয় ও এর আশেপাশে ঘুরে দেখা গেছে এখানে নেই কোন বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন কিংবা সুপেয় পানির ব্যবস্থা।
তবে, পাঠশালাটির ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহ-আলম বলেন, এখানে এমন সুন্দর একটি পাঠশালা রয়েছে তা আমাদের জানা ছিল না। শিশু শিক্ষা নিকেতন পরিদর্শন করেছি, ওই পাঠশালায় সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করা হবে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালিদ হোসেন তালপাতার এই পাঠশালায় সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ, সেনিটেশনসহ সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রাচীন এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধরে রাখতে এবং শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়নে যা যা প্রয়োজন তার সকল ব্যবস্থা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।