বয়স সবে ১৩। চেহারায় এখনো শৈশবের ছাপ। অল্প বয়সে নির্মম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। সংসারের অভাব ঘোচাতে অপ্রাপ্ত বয়সেই নির্মার শ্রমিকের কাজ নেয়। সেই কাজ করতে গিয়ে মাদ্রাসা হেফজ বিভাগের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।
ছেলেটির নাম মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ রাজু। ডাকনাম রাজু। বাড়ি খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার অনাথ আশ্রম গ্রামে। বাবা জহিরুল ইসলাম দিনমুজুর। মা রেহেনা বেগম গৃহিণী। অভাবের মধ্যে কোনোমতে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিল রাজু। ২০২১ সালে করোনার সময় মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। করোনার কারণে বাড়িতেও সংকট দেখা দেয়। সংসারের অভাব ঘোচাতে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে নির্মান শ্রমিকের কাজে শুরু হয়।
রাজুর পরিবার ও এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, পড়াশোনা ছেড়ে নির্মাণশ্রমিকের কাজ নেয় রাজু। ‘নুন আনতে পানতা ফুরায়’ বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, তার সাথে মিলে যায় রাজুর পারিবারের। ঝুপরি ঘরে খুব কষ্টে দিন কাটছিলো তাঁদের।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ে সরেজমিন তদন্তে গিয়ে রাজুর পরিবার নজরে আসে বলে জানান, দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম বলেন, ‘বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আমরা এক পর্যায়ে পরিবারটিকে বুঝাতে সক্ষম হই পড়াশোনা করতে টাকার চেয়ে দরকার হয় ইচ্ছা ও পরিশ্রম। রাজু শুধুমাত্র অভাবের কারণে পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়েছে বিষয়টি অমানবিক। আমরা রাজুকে স্কুলের নতুন পোশাক ও শিক্ষা উপকরণ দিয়ে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি।’
ইউএনও মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম আরো বলেন, ‘অসহায় দরিদ্র রাজুর পরিবারকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পাকা ঘর প্রদান করা হয়েছে। বিনিময়ে পরিবারটির কাছে রাজুকে স্কুলে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলি। পরিবারটিও মেনে নেন।’
সরেজমিনে রাজুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ‘জরাজীর্ণ ঘরটি ভেঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরের অবকাঠামো নির্মান করছে শ্রমিকেরা। নতুন ঘর নির্মান ও রাজুর স্কুলে ফিরে আসায় পরিবারের লোকজন সহ আশপাশের লোকজনও বেশ খুশি।’
রাজুর বাবা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘অভাবের কারণে ছেলের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পড়াশোনা করতে বেশি টাকাপয়সা লাগেনা একরকম অজানাই ছিলো। সরকারি ঘর পেয়েছি। ঘরের নির্মান কাজ চলছে।’
মা রেহেনা বেগম আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলের পাশে ইউএনও স্যার এভাবে দাড়াবেন, আমি স্বপ্নেও ভাবি নাই। আমার ছেলের উসিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেলাম। ছেলের পড়াশোনাও আর বন্ধ হবে না।’
রবিবার ঝরে পড়া শিক্ষার্থী মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ রাজু সাথে দেখা হয় তার স্কুলে। নতুন পরিবেশে স্কুল জীবনে ফিরে সে খুব খুশি। কথা হয় তার সাথে। অভাবের মধ্যদিয়ে অনিশ্চিত জীবনের কথায় সে জানায়, ‘আমার পড়াশোনা করতে ভালো লাগে। কাজ করতে আমার খুব কষ্ট হয়। পরিবারের অভাবের কারণে পড়ালেখা করতে পারিনি। এখন নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেছি। স্কুলের নতুন পোশাক, সহপাঠি ও নতুন স্যারদের পেয়ে আমার ভালো লাগছে। সবাই আমাকে অনেক আদর করেছে।’
অনাথ আশ্রম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবিতা ত্রিপুরা বলেন, ‘ঝরে পড়া শিক্ষার্থী রাজু‘কে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়েছে। ইউএনও মহোদয় তাকে বিশেষ পরিচর্যার মাধ্যমে পাঠদান করতে নির্দ্দেশনা দিয়েছেন।’
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2023 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh