বৈচিত্র্যময় এই পৃথিবী। এখানে টিকে থাকার ধরনে সকল প্রাণের রয়েছে আলাদা আলাদা বৈচিত্রতা। মানুষের বেলাতেও এই বৈচিত্র্যতার খুব একটা ব্যতিক্রম দেখা যায় না। আবহমান কাল ধরে বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে টিকে থাকতে মানুষ নির্ভর করে আসছে বৈচিত্র্যময় পেশার উপর। মানুষ যেমন বিচিত্র তেমনি বিচিত্র মানুষের পেশা।
বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ যে কত ধরনের পেশার উপর নির্ভরশীল তা সঠিকভাবে বলা মুশকিল। এর মধ্য থেকে আবার এমন কিছু মানুষের পেশা নজরে আসে যার সম্বন্ধে আলাদা করে জানবার আগ্রহ জাগে মনে। এমনই এক ব্যতিক্রমী পেশার মানুষ আবুল হোসেন। যিনি সুগন্ধি বেচে, সুবাস ছড়িয়ে জীবন জীবিকায় টিকে আছেন দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে।
বলছি, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ছোট বড় সকলের প্রিয় আতর বিক্রেতা রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার হিজলগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেনের কথা। তিনি প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফুলবাড়ীতে এসে পায়ে হেঁটে হেঁটে মানুষের কাছে আতর বিক্রি করেন। এই আবুল হোসেন জানিয়েছেন তার জীবন ও জীবিকার কথা।
তিনি বলেন - বাবা-মা চার ভাই ও দুই বোন সহ আট সদস্যদের পরিবার ছিল আমাদের। বাড়িভিটে টুকু ছাড়া ছিলনা আর কোন জমিজমা। বাবা হাটে বাজারে পথে ঘাটে আতর বেচে সংসারের ঘানি টানতেন। তার একার আয়ে চলতো সংসার। খুব কষ্টে খেয়ে না খেয়ে আমাদের দিন কাটতো। বাবা মা খুব কষ্ট করে আমাদের ভাই বোনদের বড় করেন। এরপর দুই বোনকে বিয়ে দিয়ে দেন। বড় তিন ভাইও একে একে বিয়ে করে আলাদা সংসার পাতেন। আমি পরিবারে সবার ছোট হলেও বৃদ্ধ মা-বাবার দেখাশোনার দ্বায়িত্ব বর্তায় আমার ঘাড়ে। পড়ালেখা করার খুব ইচ্ছা ছিল কিন্তু পারিনি।
বইখাতা ছেড়ে সংসারের খরচ জোগাতে কাঁধে তুলে নেই বাবার আতরের ঝুড়ি। ছুটে চলি বিভিন্ন এলাকায়। আতর বেচে সংসারের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করি। এভাবেই কেটে যায় কয়েক বছর। বাবা-মা ধুমধাম করে আমার বিয়ে দেয়। এরপর প্রথমে বাবা পরে মা মারা যান। বাবা-মা পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও বাবার আতর বিক্রির পেশাকে আমি আপন করে নেই। এদিকে একে ঘর আলো করে আসে তিন সন্তান। নিজের শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন নতুন করে দেখতে শুরু করি মেয়েদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার মাঝে। আশির দশক থেকে এই ফুলবাড়ীতে আসি আতর বেচতে।
এখানকার পথঘাট, হাট বাজার, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় আতর বিক্রি করে সংসারের ও মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাই। বড় মেয়েকে এসএসসি মেঝো মেয়েকে ইংরেজিতে অনার্স ও ছোট মেয়েকে এইচএসসি পর্যন্ত পড়িয়ে বিয়ে দিয়েছি। প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আমি এই ফুলবাড়ীতে এসে আতর বিক্রি করি। আতর বিক্রি করে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭শ টাকা রোজগার হয়। যা আয় রোজগার হয় তাতেই আমি পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে আছি। প্রায় ৪৫ বছর ধরে আমি নিয়মিত এই ফুলবাড়ীতে আসি আতর বেচতে। এখনকার মানুষ আমাকে খুব ভালোবাসে, সহযোগিতা করে।
তিনি আরও বলেন, নিজের পেশাকে ছোট করে না দেখে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করলে সাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করা সম্ভব।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh